কালো সোনা সাদা করতে দেশজুড়ে মেলার পর ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের আরও সময় প্রয়োজন। সোনা ব্যবসায়ীদের দাবি, বাড়তি সময়, প্রয়োজনীয় প্রচার ও জেলা পর্যায়ে এ মেলা আয়োজন করা হলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হতো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনকে (এফবিসিসিআই) এক চিঠি দিয়ে তাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে এ বাড়তি সময় চেয়েছে। গত ২৬ জুন এ চিঠি দেওয়া হয়।
সরকার গত মাসে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অবৈধ সোনা, রুপা ও হিরে বৈধ করার নজিরবিহীন সুযোগ দেয়। এ নিয়ে জারি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৩০ জুনের মধ্যে স্বর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদিত ডিলার বা পরিবেশক, ব্যবসায়ী ও অলংকার প্রস্তুতকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়কর দিয়ে এ সুযোগ পাবেন। প্রতি ভরি সোনায় আয়কর হবে ১ হাজার টাকা। অন্য দিকে হিরের ক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকা ও রুপায় ৫০ টাকা কর দিতে হবে।
সোনা বৈধ করতে এনবিআরের সহায়তায় গত মাসে সারা দেশের বিভাগীয় শহরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জুন শেষে এনবিআর সোনা বৈধ করার মাধ্যমে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা কর পেয়েছে। সাদা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ ভরি সোনা এবং হিরা ও রুপায় কর মিলেছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। সোনা বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী। যদিও বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ভ্যাট নিবন্ধিত ১৬ হাজারের বেশি সোনা ব্যবসায়ী আছেন। তাঁদের কাছে থাকা সব সোনা সাদা করা হলে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল।
জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা চাই, সকল ব্যবসায়ী করের আওতায় আসুক। জেলা পর্যায়ে কর মেলার মাধ্যমে সোনা বৈধ করার সুযোগ দিলে জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও সুযোগটি নিতে পারবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।’
প্রথমবার সুযোগে প্রত্যাশার চেয়ে কম রাজস্ব এল কেন, জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল, ব্যবসায়ীর কাছে যত মজুত আছে, পুরোটাই কর দিয়ে বৈধ হবে। কিন্তু দেখা গেল, সোনার একটা বড় অংশ আগে থেকেই ঘোষিত ছিল। ফলে রাজস্ব কিছুটা কম হয়েছে।’
এফবিসিসিআইকে দেওয়া চিঠিতে বাজুস আরও উল্লেখ করেছে, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে চার দিন অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীরা নগদ টাকার সংকটে পড়েছিলেন। আগামী নভেম্বরে কর মেলায় সোনা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলে দেশের সব সোনা ব্যবসায়ী মূলধারায় আসতে পারবেন। এতে করদাতার সংখ্যা বাড়বে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা একবারের জন্যই সুযোগটি চাই। বারবার নয়।’
সোনা বৈধ করার সুযোগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এর আওতায় ঘোষিত ও কর পরিশোধিত সোনা, হিরে (কাট ও পোলিশড) এবং রুপার অর্জন মূল্য ও অর্জনকালের ওপর আয়কর নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করবে না।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় স্বর্ণনীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সোনা বৈধ করার সুযোগ প্রদানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ওই খাতের ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাই তাঁরা এটা জেনেই সুযোগটি নিয়েছেন যে এ ধরনের সুযোগ এবারই প্রথম, এবারই শেষ।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আবারও এ ধরনের ছাড় দেওয়ার দাবি অনৈতিক এবং প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। এটা সম্পূর্ণ অনুচিত। বরং উচিত হবে নীতিমালা অনুসরণ করে অবৈধ সোনা প্রযোজ্য জরিমানাসহ উদ্ধারের কার্যকর অভিযান চালানো। একবার প্রশ্রয় দিলে আবারও দেওয়ার দাবি উঠতে পারে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।