বরিশাল বিভাগের মাধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০ জুলাই চট্টগ্রাম ও ২৫ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হবে। বাকি বিভাগে সমাবেশের তারিখ শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ধারাবাহিকতার সহিত আট বিভাগীর শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি। পাশাপাশি বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ এবং চিকিৎসার জন্য এখন হাসপাতালে রয়েছেন। কিন্তু আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি তার স্বাস্থ্যের কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। তার শারীরিক যেসব সমস্যা ছিল, তার কোনো সমাধানই হয়নি। বরং তার সমস্যা বাড়ছে।
এ কারণে আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার সুচিকিৎসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে অবিলম্বে দাঁড়ানোর জন্য আমরা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটিকে সক্রিয় করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যর্থ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু দেশের অর্থনীতি, দেশের স্বাধীনতার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে একটা প্রক্রিয়াও সরকার শুরু করতে পারেনি।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নিতেও পারছে না। তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর থেকে আমরা একটা পজেটিভ রেজাল্ট পাব। কিন্তু সেটাও আমরা দেখতে পারছি না। বরং চীন একই অবস্থানে রয়েছে এবং চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছুই পাইনি। এ বিষয়ে আমরা কূটনীতিকদের ব্রিফিং করব এবং তার আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাব।
ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং সিস্টেম একেবারে ভেঙে পড়েছে। আমানতকারীদের ২৩৬ কোটি টাকা ফেরত না দিয়েই তিন দিন আগে পিপলস লিজিং ফাইন্যান্স কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়ন করেছে। এটা নজিরবিহীন ঘটনা। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমানতকারীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বিষয়টি গোটা ব্যাংকিংয়ের একটা প্রতীকী ঘটনা। এভাবে গোটা ব্যাংকিং সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা না করে এবং প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে বন্ধ করে দেয়ার ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে পুঁজিবাজারের আমানতকারীসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার বিষয়ে ভবিষ্যতে দলীয় কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল এবং সারা দেশে সংঘটিত নারী-শিশু ধর্ষণ-হত্যা-গুমের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের মধ্যে আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে করণীয় দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার কথাও জানান মির্জা ফখরুল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। দলের স্থায়ী সদস্যদের কাছে বৈঠকের একদিন আগে বৈঠকের আলোচ্যসূচি সংবলিত কাগজপত্রসহ একটি ফোল্ডারে বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। দলীয় মনোগ্রাম সংবলিত একটি বড় ফোল্ডারের ভেতরে এসব কাগজপত্র থাকে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দায়িত্বে আসার পর নতুন এ নিয়ম চালু হয়। শনিবারের বৈঠকে সব সদস্য ওই ফোল্ডার হাতে নিয়ে বৈঠকে যান।