মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ‘মিথ্যা নালিশ’ করার অভিযোগে আলোচিত প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয়া বালা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫টি মামলা হয়েছে। আজ রোববার (২১ জুলাই) ঢাকাসহ সারা দেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এ সব মামলা দায়ের করা হয়।
পাঁচ মামলার মধ্যে ঢাকায় দুটি, সিলেট, ঝালকাঠি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা দু’জন আইনজীবী, দুটি যুবলীগ এবং অন্যটি সাধারণ একজন দায়ের করেছেন।
প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের প্রথম মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পেনাল কোডের ১২৩ (এ), ১২৪ (এ) ও ৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে নেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান তিনি। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান আদালত।
এরপর এই অভিযোগে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান নোমানের আদালতে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ঢাকা বারের কার্যনির্বাহী সদস্য ইব্রাহীম খলিল। পেনাল কোডের ১২৪ (এ) ধারায় করা এ মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তিনি।
এদিকে আজ সকালে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঝালকাঠির সিনিয়ার জুডিশিয়াল অদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছেন শহর যুবলীগ যুগ্ম-আহবায়ক মো. ছবির হোসেন।
অন্যদিকে বেলা ১১টায় সিলেটের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলা করেন সিলেট মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য রিমাদ আহমদ রুবেল।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করেছেন মো. আসাদ উল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ১৯টি দেশের ২৭ জন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। সেখানে প্রিয়া সাহা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাম্পকে বলেন, ‘স্যার আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বিলীন (গুম) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার বাড়ি-ঘর হারিয়েছি, তারা আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমরা জমিজমা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা (সরকার) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন পর্যন্ত।’ এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, করা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়, সব সময়ই পায়।’
ওই কথোপকথনের ধারণ করা একটি ভিডিও মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর সম্প্রচার করলে মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রিয়া সাহার বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। (নিউজ ডেক্স)