নারায়ণগঞ্জ শহরের বিপরীত দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে নবীগঞ্জে অবস্থিত কদম রসুল দরগাহ বন্দরের কদম রসুল দরগাহ্’র নামে পরিচয় অবস্থিত কদম রসুল দরগাহ। চমৎকার এই দরগাহটিতে রয়েছে আশ্চর্য একটি জিনিস। কথিত আছে এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মোবারকের ছাপ সংবলিত একটি পাথর রয়েছে। এর জন্যই দরগাহ এর নামকরণ হয়েছে কদম রসুল দরগাহ।
এখানে দেখতে পাবেন বিশাল উঁচু একটি প্রবেশ তোড়ন। চমৎকার কারুকাজ করা সুন্দর সুউচ্চ এই স্থাপনা দেখে মনে হবে একটি সুন্দর মসজিদ বা দরগা। আসলে এটি একটি প্রবেশ তোড়ন। তোড়ন পার হয়ে ভিতরে ঢুকে দেখবেন উত্তর দিকে রয়েছে একটি মসজিদ আর দক্ষিণ দিকে আছে একটি কবরস্থান। এই দুইয়ের মাঝে আছে ছোট্ট একটি সাদা শ্বেতপাথরের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার।
এখানেই রয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ সংবলিত পাথরটি। বড়সড় একটি খড়ম আকৃতির কালো পাথর এটি। আগে সব সময়ই দেখতে চাইলে দেখাতো কিন্তু এখন নির্দিষ্ট কিছু দিনেই শুধু কাচের বাক্স থেকে বের করে দেখায়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ।
অবশ্য সত্যিই এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ কিনা সেটা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।এখানে এই পাথরটি গোলাপজল মিশ্রিত পানির মধ্যে চুবিয়ে রাখা হয়, আর দর্শনার্থীদের একটি গ্লাসে করে সেই পানিয় পান করতে দেয়া হয়। কবরস্থানের ভিতরে রয়েছে বিশাল বড় কাঠ গোলাপের গাছ।
কথিত আছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মেরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার সময় বেশকিছু পাথরে তার পায়ের ছাপ পরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি আছে জেরুজালেমে। তাছাড়া আর কিছু পাথর রয়েছে ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কতেও। আমাদের বাংলাদেশেও এমন দুটি পাথর রয়েছে, যার একটি আছে চট্টগ্রামে আর অপরটি রয়েছে নবীগঞ্জ কদম রসুল দরগায়।
মির্জা নাথান ১৭শ শতকে রচিত তার বিখ্যাত “বাহির-স্থানই গায়েবী” বইটিতে সর্বপ্রথম নবীগঞ্জের এই পাথরটির কথা উল্লেখ করেন। ১৫৮০ সালে সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আফগান সেনাপ্রধান মাসুম খান কাবুলি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পদচিহ্ন সংবলিত এ পাথরটি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে কিনেছিলেন।
তার অনেক পরে ঢাকার জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৭-১৭৭৮ সালে নবীগঞ্জের একটি উঁচু স্থানে একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট দরগা নির্মাণ করে সেখানে পবিত্র সেই পাথরটি স্থাপন করেন। পরে কদম রসুল দরগার প্রধান ফটকটি গোলাম নবীর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ ১৮১৪ সালে নির্মাণ করেন।