নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন। শুক্রবার ১৩ সেপ্টম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে খোলা চিঠির পাশাপাশি বিগত দিনের দলীয় কর্মসূচির কিছু ছবি পোষ্ট করেছেন। সেই খোলা চিঠিতে সাবেক নগর বিএনপির কমিটি থাকা কালিন পরিস্থিতির পাশাপাশি বর্তমান সময়ের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। সেই সাথে দলের মধ্যে যারা বিভক্তি সৃষ্টি করতে নোংরা রাজনীতিতে মেতে উঠেছে তাদের বিষয় স্পষ্ট করে তুলেন।
পাঠকদের সুবিধার্থে হুবুহু তুলে ধরা হলো, দেশের বাইরে আসলেই দেশের জন্য, নিজের এলাকার জন্য, স্বজন বা শত্রু-মিত্র সবার জন্যই মনটা সবসময় হাহাকার করে। আবার আমার প্রতি দেশের মানুষের ভালোবসাও প্রকাশ হয় নানা মাধ্যমে, সংবাদপত্রে, অনলাইন পোর্টালে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বা সরাসরি টেলিফোনে। টেলিফোন করে নাঃ গঞ্জ বিএনপি ‘র প্রতিষ্ঠাকলীন সময়ের অন্যতম নেতা মজিদ ভাই খবর নিলেন,
ফোন ধরতেই ধমকের সুরে বললেন এই কামাল তুমি নাকি চলে গেছ, পত্রপত্রিকায় এগুলা কি লেখে ? বললাম, একবারে চলে আসলেতো আপনাদের বলেই আসতাম, কাজে এসেছি, হাতের কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবো, যখন পদে পদে মৃত্যুর ভয় ছিল , পেছনে ছিল সোনালী ভবিষ্যতের হাতছানি, তখনি সব ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনেও স্বপরিবারে দেশে ফিরে এসেছি দলের টানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভীন্ন মতালম্বি এক ভাই লিখেছে, তাড়াতাড়ি চলে আসুন কামাল ভাই, আপনি না থাকলে শহরটা খালি খালি লাগে।
ঢাকা থেকে ফোন করেছে একজন সিঃ সাংবাদিক, বললেন, ভাই কি একেবারেই চলে গেলেন, আপনাকে রাত দিন ২৪ ঘন্টাই প্রয়োজনে পাওয়া যেত, আরো অনেক কথাই বললেন, তার কথার জবাব দিতে গিয়ে মনে হলো কন্ঠটা কেউ চেপে ধরেছে, চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা, চাপা কন্ঠে শুধু একটি কথাই বললাম, আমি ফিরে আসব, দেশ মাতাকে কারাগারে রেখে আমি বাইরে থাকবো, এটা কখনোই হতে পারেনা। এমেরিকায় এসেছি পারিবারিক প্রয়েজনে, রাজনৈতিক কর্মীর পাশাপাশি আমিতো একজন রক্তমাংসের মানুষ,আমারও পরিবার আছে, তাদের প্রতিও আমার দায়ীত্ব আছে। সারা জীবনের কথা বাদই দিলাম, বিগত ১৩ বছরের মধ্যে টানা ১২ বছর মাঠে ছিলাম, মামলা খেয়েছি কয়েক ডজন, গ্রেফতার হয়েছি ৯ বার ,রিমান্ডে নিয়েছে অসংখ্যবার, কাফনের কাপড় পড়ে হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল সহ নানা কর্মসূচীতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছি বারবার, প্রায় সারে ৩ বছর করাগারেই কেটেছে, আর বাকী সময়টুকু আদালতের বারান্দা, নয়তো পুলিশি নির্যাতনের দগদগে ঘা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায়।
পুলিশ ঘোষনা দিয়েছে আমাকে পেলেই গুলি করবে, তারপরেও মাঠে নেমেছি, পুলিশ সরাসরি বৃষ্টির মত গুলি করছে তারপরের মিছল নিয়ে রাজপথে এগিয়ে গেছি। এখনতো পরিস্হীতি শান্ত,সেই উত্তাপ আর নেই। সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে যারা রাজপথে ছিল,শহর বিএনপি’র সভাপতি জাহাঙ্গীর কমিশনার, সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির অন্যতম নেতা জেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহাবায়ক আলী হোসেন প্রধান, জেলা শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নজরুল ভাই, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা মৎসজীবি দলের আহাবায়ক ইব্রাহীম সর্দার, মহিলা দল নেত্রী বিনু সহ আরো আনকেই আজ আমাদের মাঝে নেই ,তাদের সকলের রূহের মাগফিরাত ও ওলামা দলের জেলার সভাপতি বেনু ভাই,শহর কমিটির সাবেক সহ সভাপতি সুরুজ্জামান, যুগ্ন সপ্মাদক বিল্লাল, জেলা মৎসজীবি দল নেতা মাহবুব সহ আরো অনেকেই আজ অসুস্হ, তাদের আশু রোগ মুক্তি কামনা করি, আর সে সময় যারা রাজপথে আমার সাথে ছিলেন, শদীদ জিয়ার সেই সূর্য সৈনিকদের স্যলুট জানাই।
আন্দোলনে না নেমে দলের মূলস্রোতকে নানাভাবে সমালোচনায় বিব্রত করে, দলের আন্দোলন সংগ্রামকে যারা ব্যাহত করার চেষ্টা করেছেন, তখন আপনারাতো একসাথেই ছিলেন, আপনাদের প্রত্যেককেই দলের বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আজ বড় বড় পদপদবীতে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।
দেশমাতা কারাগারে, দেশের এই ক্রান্তিকাল্ আপনারাও রাজপথে আছেন,স্যালুট আপনাদেরকেও, কিন্তু এটা অন্ত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ নিজেদের মধ্যেই বিরোধের কারনে যারা দলকে বিভক্ত করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে,একই ব্যানারে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করে, দলকে ক্ষতিগ্রস্হ ও দলীয় সমর্থকদের মর্মাহত করছেন।
পালিত সাংবাদিক নামধারি হীন ব্যাক্তিদের দিয়ে নিজ দলীয় নেতাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে, বন্ধ করান এসব নোংরামী, নয়তো ক্ষতিগ্রস্হ একদিন নিজেরাই হবেন। এগুলে করে কেউ কেউ হয়তো সাময়ীকভাবে লাভবান হয়ে যেতেও পারেন, পদপদবী, কমিটি বা মনোনয়নও পেয়ে পারেন,তবে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার যে শান্তি, সেই সুখ ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হবেন এবং দেশ ও দলের এই দুঃসময়ে এ হেন কর্মকান্ডের গ্লানীতে নিজের বিবেকের কাছে নিজেই ছোট হয়ে থাকবেন আমৃত্যু।