সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ উপজেলা আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সভা বন্ধ করে দেন। জামপুর ইউনিয়নের উঁটমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আহবান করা উপজেলা আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সভা বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টম্বর) দুপুরে দু’পক্ষের সভাকে কেন্দ্র করে উটমা বিদ্যালয় মাঠে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
খবর পেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ সভার আয়োজক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে মৌখিক ভাবে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার সভা সমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশনা প্রদান করে। তাদের মৌখিক নির্দেশ পাওয়ার পর সভার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে উভয় পক্ষই। এতে করে বড় ধরনের একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল এলাকাবাসী।
জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের কর্মসূচী পালন করে আসছে। এছাড়া সম্প্রতিকালে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি গঠণ নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আহবায়ক কমিটিকে প্রত্যাখান করে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সভা ডেকে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল ও ড. সেলিনা আক্তার।
অপরদিকে, আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমসহ ৬জন। আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পরই একটি পক্ষ আরেকটি পক্ষকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে আসছে বহু দিন ধরে। এমনকি আহবায়ক কমিটির সদস্যদের যেখানে পাবে সেখানেই প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এদিকে, জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকালে উটমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতিমুলক সভার আয়োজন করা হয়।
অপরদিকে, সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকেও একই বিদ্যালয়ের মাঠে একই সময় জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের পক্ষ থেকে একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করে। এ সভাকে ঘিরে গতকাল থেকেই বিদ্যালয়টির মাঠে অবস্থান করে দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা। তারা দলেদলে এসে বিদ্যালয় মাঠে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন শুরু করে। দুটি পক্ষই স্ব-স্ব স্থানে থেকে সভার প্রস্তুতি সম্পুর্ন করেছিল।
তারা দু’পক্ষই যে কোন মূল্যে এখানে সভার করার ঘোষণা দেন। এ সভাকে ঘিরে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা আরো জানায়, গতকাল থেকে যে ভাবে দুপক্ষের লোকজন মহড়া দিয়ে চলছে এতে নিশ্চিত একটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। স্থানীয়রা মনে করেন জামপুর যুবলীগ ও জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ দু’পক্ষই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ফলে এ সভাকে ঘিরে দু’পক্ষের মধ্যে যে কোন বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা বিরাজ করছে।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ দু’পক্ষের আয়োজকদের সভা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। এতে করে উভয় পক্ষ সম্মত হয়ে তারা সভা করবে না বলে প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু জানান, প্রশাসনকে আমরা শ্রদ্ধা করি তাই প্রশাসনের অনুরোধে আমাদের নেতাকর্মীদের সভা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।
এব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, একই আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সভাকে কেন্দ্র করে অঘটন যাতে না ঘটে সে জন্য দু’পক্ষেরই সভা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, সভাকে ঘিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মৌখিত ভাবে দুপক্ষকেই সভা না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর যদিকেউ সভা করতে চায় তাহলে সেখানে প্রশাসনের পক্ষথেকে ১৪৪ধারা জারি করা হবে।