নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর সময় ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার ধাক্কায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জোসনা বেগম নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়ি মজলিস গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী ও মৃত জোসনা বেগমের পরিবারের সদস্যরা জানায়, উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়ি মজলিশ গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সজিব (২৮) একসময় মাদকের ব্যবসা করতেন। মোগরাপাড়া চৌরাস্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী গিট্টু হৃদয় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন সজিব।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই মনির হোসেনসহ তিন পুলিশ সজিবের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় সজিবকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। আটকের সময় ছেলেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন মা জোসনা বেগম। সেই সঙ্গে এসআই মনিরের পায়ে ধরে সজিব মাদকের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে বলে তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানান মা জোসনা।
এ সময় জোসনা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এসআই মনির হোসেন। এতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জোসনা। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সজিবের মা জোসনা বেগম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে ছেড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তিন পুলিশ। এমন ঘটনার খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের ২০-২৫ জনের একটি দল মৃত জোসনার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য ঘটনাস্থলে যায়। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ জানায় পুলিশ।
সজিবের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, রোববার রাতে সজিবের ঘরের বালিশের নিচে ইয়াবা ও গাঁজা রেখে দেয় তিন পুলিশ। পরে পাশের ঘর থেকে সজিবকে আটক করা হয়। পরে আমাদের জানানো হয় বালিশের নিচ থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। আসলে সবই মিথ্যা। কারণ সজিব অনেকই আগেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। এজন্য তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, সজিবকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়টি সত্য নয়। সজিবকে ৫০ পিস ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক করা হয়। এটি দেখে স্ট্রোকে মারা যান সজীবের মা।
জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, মাদকসহ আটক সজীবের মাকে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে- এটি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। প্রকৃত ঘটনা তদন্তে জানা যাবে।