দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের নিট সেক্টরের সকল কারখানা ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপিল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন বিকেএমইএ এর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তিনি শিল্প মালিক, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
সেই মোতাবেক (বুধবার ২৫ মার্চ) ঢাকায় প্লানার্স টাওয়ারে বিকেএমইএ এর ঢাকার কার্যালয় থেকে বিকেএমইএ সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক বিষয় ব্যাখা এবং কারখানাগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিটি হুবহু দেয়া হলো :
১। রফতানি কার্যাদেশ বা এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম না থাকলে ফ্যাক্টরি চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ জনসমাগম যত কম হবে, ততই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। তাই অপ্রয়োজনে কারখানায় শ্রমিক এনে হাজিরা নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে, আপনার পুরো প্রতিষ্ঠানকে এমনকি আপনার আশে-পাশের ফ্যাক্টরিসমূহ তথা পুরো এলাকাকে লকডাউন করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি বিপদগ্রস্ত হবো। একইসঙ্গে কারখানা ছুটিকালীন সময়ে আপনার কারখানার শ্রমিকরা যে যেখানে অবস্থান করছে সে যেন সেখানেই অবস্থান করে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে, এটা কোনো ঈদ বা উৎসবের ছুটি নয়। তাই যে যেখানে অবস্থান করে, তাকে সেখানেই থাকতে হবে।
২। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস সরকারি ছুটি এবং ২৭ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায়, উক্ত দুইদিন শ্রমিকদের সুবিধার্থে (বিশেষ করে তাদের বাজার, ওষুধপত্র ক্রয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজের কারণে) সম্ভব হলে আপনার কারখানা বন্ধ রাখার জন্য আমরা সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।
৩। যেহেতু সরকারের চূড়ান্ত নির্দেশনা এখনও আসেনি, সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনে বা যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন, আপনার সম্পূর্ণ নিজস্ব রিক্স অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিতে আপনার কারখানা খোলা রেখে পরিচালনা করতে পারেন। আমাদের বুঝতে হবে, করোনাভাইরাস এখন মহামারী রূপধারণ করেছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে কারফিউ এবং লকডাউনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু আমাদের প্রস্তুতকৃত পণ্যটি রফতানিযোগ্য পণ্য এবং বাংলাদেশের মূল বৈদেশিক মুদ্রা আননয়নকারী খাত, সেহেতু আমরা এ মুহূর্তেই পুরো সেক্টর বন্ধ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। তবে পরিস্থিতি যেভাবে নাজুক হচ্ছে, তাতে যে কোনো মুহূর্তেই বাংলাদেশেও কাউফিউ বা লকডাউন প্রয়োগ হতে পারে। ইতোমধ্যেই দেশে লঞ্চ, ট্রেন ও গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। বিকেএমইএ সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছে। যদি ট্রাক চলাচল করে, শিপিং লাইন খোলা থাকে, তবে আপনাকে শিপমেন্ট করার জন্য বিকেএমইএ সবরকমের সহায়তা করবে। তবে কারখানা চলাকালীন সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও মালিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে।
৪। এমনকি আপনি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার জন্য প্রয়োজনে ইচ্ছে হলে নিটিং, ডায়িং ক্লোজ করে সীমিত আকারে আপনার ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রেও করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সমস্যা শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে সমাধান করুন। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজও আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে। কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ করা যাবে না। আপনার ও আমার কারণে যাতে দেশে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দানা না বাঁধে, সেই ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এজন্যই শ্রমিকদের বিগত বকেয়াসহ সকল পাওনানি (যদি থাকে) ও মার্চ’২০ মাসের বেতন আপনার ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে সময়মতো প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অনুরোধ জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না, এটা সম্পূর্ণই আপনার দায়িত্ব।
৬। এই মহামারী (করোনাভাইরাস) নিয়ন্ত্রণে আসলে আমরা আমাদের ক্ষতির তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারের কাছে উপস্থাপন করবো এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবার জন্য চেষ্টা করবো। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো কিছু দাবি করা যুক্তিসঙ্গত ও সময়োচিত নয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে কারখানার কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল, স্থগিত এবং শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে তার পাশাপাশি আপনার কারখানার মার্চ মাসের শ্রমিক/কর্মচারী/কর্মকর্তার মোট সংখ্যা এবং বেতনের পরিমাণ ও পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল বাবদ যে খরচ দাঁড়ায় তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
৭। ইতোমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত কার্যালয় ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের জানা তথ্য মতে অনেক প্রতিষ্ঠানও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট কাজ না থাকলে আপনিও ইচ্ছে করলে আগামী ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত আপনার কারখানা বন্ধ রাখাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও কারখানার শ্রমিক/কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদি সময়মতো প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৮। যদি ফ্যাক্টরি ছুটি দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে (ভলান্টিয়ার সার্ভিস) আগ্রহীদের নিয়ে টিম করে আপনার কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
৯। ছুটির পরে ফ্যাক্টরি খোলার সময় অবশ্যই শ্রমিক/কর্মকর্তাসহ সকলের মেডিক্যাল চেকআপ করে কোনো রোগ না থাকার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়ে তবেই তাদের (শ্রমিক/কর্মকর্তা) আপনার ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ করান।