দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ সাপ্তাহিক দেড় দিনের ছুটির দাবীতে নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ( ১০ মার্চ ) রাত সাড়ে ৯টায় চাষাড়াস্থ বালুরমাঠ ভাষা সৈনিক রোডে প্রধান কার্যালয়ে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো.মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের উপদেষ্টা মো.তরিকুল ইসলাম লিমন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক তুলসি ঘোষ,সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক একে পিন্টুসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মার্কেটে কর্মরত সাধারন কর্মচারীগন।
শহরের বিভিন্ন মার্কেট থেকে আগত কর্মচারীদের মাঝে কয়েকজন তাদের বক্তব্যে বলেন, শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে দোকান মালিকরা তাদের দোকানের কর্মচারীদের মানুষ হিসেবে গন্য করছেনা। তারা বলেন,আমরা দেড় দিন নয় অন্তত একটি দিন শুক্রবার পরিবার-পরিজনকে সময় দেয়ার জন্য ছুটি দেয়া হোক। তারা বলেন,বৃহস্পতিবার রাতে যখন কর্ম শেষ করে বাড়িতে যাই তখন আমার ৬ বছরের বাচ্চা দাবী করে বলে,আব্বু কালকে তুমি কাজে যাবে না। আমি তোমাকে ও আম্মু,আপুকে নিয়ে ঘুড়তে যাবো।
অবুঝ সেই শিশু সন্তানকে বলেছি ঠিক আছে বাবা কাল আমরা সবাই বেড়াতে যাবো। কিন্তু শুক্রবার সকালে আমার সন্তান যখন ঘুম থেকে উঠে দেখে আমি বাড়িতে নেই কাজে চলে এসেছি তখন তার কান্না থামাতে গিয়ে যখন স্ত্রী আমার মোবাইলে সন্তানের সাথে কথা বলতে দেয়,তখন সন্তানের কান্নায় বাবা হিসেবে আমারও কান্না চলে আসে। আমাদের বাবাদেরকে আর কত কান্না করতে হবে? তবুও অর্থলোভী মালিকপক্ষ শুক্রবার দোকার খোলা রাখতে দোকান প্রতি ৩০০ টাকা হারে আদায় করছে শ্রম অধিদপ্তরকে দেয়ার জন্য। এবং সেই টাকা দিয়েই দোকান খোলা রেখে শুক্রবারের ছুটি কর্মচারীর জন্য রাখেনা। আমরা চাই প্রতি শুক্রবার শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ছুটি বাধ্য করা হউক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের উপদেষ্টা মো.তরিকুল ইসলাম লিমন বলেন, শ্রম আইনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে দেড় দিন প্রতিটি মার্কেট ও শিল্প কলকারখানা বন্ধ রাখার নিয়ম। এ নিয়মকে যদি তারা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সাধারন শ্রমিকের অধিকারটুকু কেড়ে নেয় তাহলে কোন শ্রমিকই মালিকের এ নীতিহীন আইন মানবে না। আমরা শ্রম অধিদপ্তরের ডিআইজি,নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাষ্ট্রি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে সাক্ষাত করে দোকান কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করবো।
নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক তুলসী ঘোষ বলেন,শুক্রবার দোকান বন্ধ রাখার এখতিয়ার লেবার কোর্টের, আমাদের নয়। এ বিষয়ে আমার কয়েকদিন পুর্বে ডিআইজি বরাবর স্বারক লিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু ডিআইজি সাহেব আমাদের সাধারন কর্মচারীদের পক্ষে নেই রয়েছে অর্থশালী মালিকের পক্ষে। মালিকপক্ষ কথায় কথায় কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুতের হুমকী দেয়। আমরা শুক্রবার মার্কেট বন্ধ রাখতে প্রয়োজনে রাজপথে নামবো।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মো.মোজাম্মেল হক বলেন, ডিসি ও এমপির দোহাই দিয়ে দোকান মালিকরা শুক্রবার দোকান খোলা রাখেন। এসব কথা বাদ দেন। আমরা চেম্বার অব কমার্সের সাথে কথা বলেছি তারা পরিদর্শনে গিয়েছেন। মালিকপক্ষ বিভিন্ন অযুহাতে এমপি ও ডিসিকে ভুল বোঝাচ্ছেন। তারা দেশের প্রচলিত শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখাচ্ছেন। আমরা মালিকপক্ষকে অনুরোধ করবো অন্তত প্রতি শুক্রবার আপনার দোকানের কর্মচারীকে তার পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে আনন্দ উপভোগ করতে দিন।
এ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ এর ডিআইজি সোমেন বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার কাছেও এ রকম অভিযোগ আসছে। আমাদের নাম ব্যবহার করে কেউ না কেউ এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে মামলা করেছি। তবে এ বিষয়ে কোন মালিক বা শ্রমিক অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।