দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ২০১৮ সালে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও হার মানেননি। বরং আরও বেশি করে জীবনকে আঁকড়ে ধরেছিলেন ইরফান খান। আর পারলেন না। রোগের সঙ্গে হেরে অবশেষে চলে গেলেন বলিউড অভিনেতা ইরফান খান।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তিনি মুম্বাইয়ের ধীরুভাই অম্বানি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
মৃত্যুর খবরটি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন ইরফান খানের মুখপাত্র।
ইরফান খানের মুখপাত্র সংবাদিকদের পাঠানো বার্তায় লিখেছেন, ‘নিজেকে সমর্পণ করে দিলাম। এই কথাগুলোই ইরফান বলেছিলেন ২০১৮ সালে যখন তাঁর ক্যানসারের কথা প্রকাশ্যে আসে এবং তাঁর লড়াই শুরু হয়। আজকে আমরা জানাচ্ছি যে অভিনেতা ইরফান খান চলে গেলেন। ইরফান মনের জোরে চলতেন, সাহসী মানুষ ছিলেন, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে যেসব মানুষ এসেছেন, তাঁদের সব সময় উদ্বুদ্ধ করতেন।’
জানা গেছে, ২৮ এপ্রিল কোলনের সংক্রমণ নিয়ে কোকিলাবেন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এবং একসময় সব চিকিৎসার ঊর্ধ্বে চলে যান তিনি। তাঁকে আর ফেরানো যায়নি। হাসপাতালে তাঁর পাশেই ছিলেন ইরফানের স্ত্রী সুতপা সিকদার এবং তাঁদের দুই ছেলে।
মাত্র তিন দিন আগে ইরফান খানের মা মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তাঁর মা সাইদা বেগম। মায়ের মৃত্যুর এ সময়ে পাশে থাকতে পারেননি অভিনেতা ইরফান খান, শেষ দেখাও হয়নি। তবে ভিডিও কলে মায়ের দাফন কার্যক্রম দেখেছেন দূর
থেকে। চার দিনের মাথায় মায়ের কাছেই যেন চলে গেলে রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম নেওয়া ইরফান।
১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম ইরফানের। এমএ পড়ার সময়েই ১৯৮৪ সালে পেয়ে যান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় পড়ার জন্য স্কলারশিপ। ১৯৮৭-তে পড়াশোনা শেষ করে ইরফান মুম্বাই পাড়ি দেন। এরপর থেকে মঞ্চ এবং রুপালি পর্দা হয়ে ওঠে জীবনের ধ্যানজ্ঞান। শুরুতে ‘চাণক্য’, ‘সারা জাহা হামারা’, ‘বনেগি আপনি বাত’ ও ‘চন্দ্রকান্তা’র মতো টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালের আগে মূলত টেলিভিশন সিরিয়াল ও থিয়েটারেই অভিনয় করেছেন ইরফান। ১৯৮৮ সালে ‘সালাম বোম্বে’ সিনেমায় অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব তাঁকে দিয়েছিলেন মীরা নায়ার।
১৯৯০-তে ‘এক ডক্টর কি মৌত’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর তাঁর অন্য কয়েকটি সিনেমায় সেভাবে নজর কাড়েনি। বেশ কিছু অসফল সিনেমার পর পটপরিবর্তন আসে লন্ডনের পরিচালক আসিফ কাপাডিয়ার হাত ধরে। কাপাডিয়া ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা ‘দ্য ওয়ারিয়র’-এ তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দেন। ২০০১ সালে ‘দ্য ওয়ারিয়র’ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রশংসিত হয়। আর এই সিনেমার হাত ধরে চলচ্চিত্র মহলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ইরফান। ২০০৩ সালে শেকসপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে ‘মকবুল’ সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেন ইরফান।
২০০৫ সালে ‘রোগ’ সিনেমায় বলিউডে তাঁকে প্রথমবার মুখ্য চরিত্রে দেখা যায়। এরপর বলিউডের একের পর এক সিনেমায় হয় তাঁকে প্রধান বা পার্শ্ব চরিত্র বা ভিলেনের ভূমিকায় দেখা গেছে। ২০০৭ সালে বক্স অফিসে হিট ‘মেট্রো’ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব চরিত্রের পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরফান। তাঁকে ‘আ মাইটি হার্ট’ ও ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’-এর মতো আন্তর্জাতিক সিনেমাতেও দেখা গেছে।
শুধু বলিউডই নয়, হলিউডেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন ইরফান। কাজ করেছেন একাধিক নামী পরিচালকের সঙ্গে। ‘স্লামডগ মিলেনিয়ার’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য আমেজিং স্পাইডারম্যান’–এর মতো হলিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন ইরফান খান। অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিতে।
ইরফানের অকালপ্রয়াণে শোকের ছায়া বিনোদনজগতে। খবর পেয়ে শোকাহত অমিতাভ বচ্চন। টুইটারে লেখেন, ‘ইরফান খানের মৃত্যুসংবাদ পেলাম। অত্যন্ত দুঃখের খবর। এই খবর পেয়ে আমি বিচলিত। একজন অবিশ্বাস্য প্রতিভার অধিকারী, সুভদ্র সহকর্মী, সিনেমা জগতে বিরাট অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব বড় তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। বিরাট শূন্যতা তৈরি হলো।’
পরিচালক সুজিত সরকার টুইটে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমার খুব কাছের বন্ধু, ইরফান। তুমি লড়ে গিয়েছে, লড়েই গিয়েছ। তোমাকে নিয়ে আমি সব সময় গর্ববোধ করি। আমাদের আবার দেখা হবে। সুতপা ও ছেলেদের জানাই সমবেদনা। সুতপা, তুমিও লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছ। এখনো যাচ্ছ। তোমাকে সালাম, ইরফান।’