দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস প্রেস ডটকমঃ আমরা ভাড়াটিয়া মেম্বার আমাদের চাল দিবে না,আমরা অন্য জেলার মানুষ তাই আমাদের কোন চাল দেওয়া হবে না,বাড়িওয়ালারা দুই তিন পুটলা পায় আমরা একটা পুটলা পাই না,আমাদের রিকশা চালাইতে দেয় না পুলিশ,আমাদের ঘরে খাবারও দেয় না কেউ, আমাদের দেশে আমাদের যাইতে দেওয়া হোক, আমাদের আইডি কার্ড এক মাস ধইরা নিছে এহন পর্যন্ত কোন চাইল দেয় নাই, আমাদের চাল দেওয়া হইবো কইয়া এহানে আইতে কইছে-এভাবেই নানা অভিযোগ নিয়ে ত্রানের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে খেটে খাওয়া দিন মজুর মানুষ গুলোকে।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংকরোডে এই বিক্ষোভ মিছিলটি করে সেহাচর, লালখা, রামারবাগ ও পশ্চিমলামাপাড়া এলাকার রিকশা, ভ্যান, মিশুক, অটোচালক ও গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
এসময় বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংকরোড অবরুদ্ধ করে এবং কিছু বিক্ষোভকারী গনমাধ্যমকে জানায়,সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রামন রোধে গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে সাধারণ ছুটি দিয়েছে এর ফলে সকল সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালত, গন পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। নারায়নগঞ্জ জেলায় এই ভাইরাসের রোগী বেশি পাওয়ার কারনে জেলাকেও লকডাউন করা হয়।
যার ফলে আমরা যারা রিকশা, ভ্যান, মিশুক, অটো চালক আমরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারি না।গাড়ি নিয়ে বের হলে পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে ফেরে যেতে হয়। এক মাস ধরে আমরা ভোটার আইডি কার্ড জমা দিয়ে রাখছি আমাদের কোন চাল দেয় না মেম্বার। আমরা মেম্বারের কাছে গেলে আমাদের বলে আমরা এই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা না তাই আমাদের কোন ত্রান দিবে না। অথচ বাড়িওয়ালারা দুইটা তিনটা প্যাকেট পাই আমাদের কেউ দেয় না। এখন বাড়িওয়ালা ঘর ভাড়ার জন্যও চাপ দিচ্ছে।
শিবু মার্কেট ১০টাকা কেজি চাল দিছিলো একদিন হঠাৎ করে তাও বন্ধ করে দিছে। সরকার তো আমাদের ত্রান দিচ্ছে না। আমরা সরকারের ত্রান চাচ্ছি না। আমাদের ১০টাকা কেজি চালও তো কিনতে দিবে। অন্যদিকে আমাদের তো ত্রান দিচ্ছে না আবার দেশের বাড়ি যাবো তাও যেতে দিচ্ছে না।তাহলে কি এখানে না খেয়ে থাকবো।
বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে একজন বয়স্ক কেঁদে বলেন,আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজকের এই দিন দেখার জন্য যুদ্ধ করছিলাম।দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম আর আজ খাবারের জন্য না খেয়ে থাকতে হয়। যুদ্ধের সময় মরন হলো না ক্যান।
এরমধ্যে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন এবং বিক্ষোভকারীদের লিংকরোড থেকে সরে যেতে বললে তারা শুনে পরবর্তীতে ফতুল্লা থানার ওসি(আইসিপি)মোঃআজগর হোসেন খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে আসেন এবং এসময় তিনি মেম্বারের কাছে যেতে বললে তার সামনে কুতুবপুর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড রফিক রঞ্জুকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, মেম্বাররা চোর। তার কাছে আমরা যাবো না পুলিশ আর ডিসি আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে বলে বিক্ষোভকারীরা জানায়। কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লিংকরোড থেকে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে নেয় এবং কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃমনিরুল আলম সেন্টুর সাথে কথা বলে বিক্ষোভকারীদের চেয়ারম্যান এর বাসায় পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে,এর আগে সেহাচর ও লালখা এর কয়েক শতাধিক মানুষ তক্কারমাঠ, রামারবাগ চৌরাস্তায় ঝড়ো হয় এবং হঠাৎ করে ফতুল্লা স্টেডিয়াম ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংকরোডে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং খবর পেয়ে পুলিশ এসে একপাশের রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ২ঘন্টা পরে পুলিশের চেষ্টায় বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় এবং স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়।
তারা আরো বলে, আজ যারা বিক্ষোভ করেছে তারা নিশ্চয় কারো উস্কানি পেয়ে এখানে এসেছে।যাদের এলাকায় বিক্ষোভ করার সাহস হয় না তারা কিভাবে এই মেইন রোড আটকিয়ে বিক্ষোভ করা নিশ্চয় কারো হাত আছে। পুলিশও একি কথা মনে করছে।তাদের মতে নিশ্চয় কেউ উস্কানি ও লোভ দেখিয়ে এই বিক্ষোভ মিছিলটি তাদের দিয়ে করিয়েছে।