দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলায় শিশুদের ইপিআই ও হাম–রুবেলার টিকাদান কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় কয়েক লাখ শিশুর জটিল সব রোগব্যাধির টিকাদান অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে এবং অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ইপিআই কার্যক্রমের আওতায় শিশুর জন্মের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বিসিজি টিকা নিতে হয়। এই টিকা যক্ষ্মা রোগ থেকে রক্ষা করে।
এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধে তিন ডোজে হেপাটাইটিস বি টিকা দেওয়া হয়। পোলিও রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর থেকে ২ মাসের মধ্যে প্রথম, ৪ মাস বয়সে দ্বিতীয়, ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তৃতীয় ডোজ এবং ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে শেষ ডোজ দিতে হয়।
টিটেনাস, ডিপথেরিয়া ও হুপিং কাশি, রোটা ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম–রুবেলা, চিকেন পক্স, হেপাটাইটিস এ ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর থেকে কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত ১১টি টিকা বিনা মূল্যে শিশুদের দেওয়া হয়।
শিশুদের সময় মত টিকা না দিতে পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিবাবকরা বলেন, অত্যাবশ্যকীয় এসব টিকা শিশুদের একটি নির্ধারিত বয়সের মধ্যেই দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমার সন্তান জন্মের ১৫ দিনের মধ্যে প্রথম ইপিআই টিকা দিলেও, এখন পযর্ন্ত আড়াই মাসের বেশি বয়স হয়ে গেছে। অথচ ৬ সপ্তাহে যে ডোজ দিতে হয় তা দিতে পারি নাই।
নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। নির্ধারিত বয়সে বাঁচ্চাদের এই টিকা না দিলে অন্য সময় এই টিকার কার্যকারিতা থাকে না। এই মুহূর্তে কি করবো বুঝতে পারছি না। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকেও যোগাযোগ করেছি কিন্তু করোনার কারনে সেগুলো বন্ধ।
অপর এক গৃহিণী বলেন, আমার কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করেছে আজ ৩৭ দিন চলে। জানি না বাচ্চাকে টিকা দিতে পারবো কিনা। শিশুদের সুরক্ষা ও বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষার জন্য এই টিকা দেওয়া হয় কিন্তু আমার সন্তানকে এখনও পর্যন্ত কোন টিকা দিতে পারি নাই। আর কবে পারবো দিতে তারও নিশ্চয়তা নেই।
এ বিষয় জেলা সিভিল সার্জন বলেন, সরকারের নির্দেশনা আছে যে এই কর্মসূচি কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তা ছাড়া সঠিক সময়ে শিশুদের টিকা না দিলে এসব টিকার কার্যকারিতা থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ দ্বিতীয় হওয়ায় গত ৮ এপ্রিল থেকে লকডাউনের আওতায় চলে এসেছে।
সেই সাথে এই জেলায় প্রতিদিনিই করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারনে শিশু, গর্ভবতী মা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইপিআই টিকাদান স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে আমরা সঠিক সময় টিকাদান কর্মসূচি পালন করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও মার্চের ১৮ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে জেলায় ৬লাখ (৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচে) শিশুকে হাম-রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। অস্থায়ীভাবে কোথায় কোন কেন্দ্রও বসানো যাচ্ছে না। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের লক্ষ মাত্রা পূরন করাও সম্ভব হচ্ছে না।