দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান তার। সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে অমর শহীদ জিয়া। ইতিহাসে এমন এক সময় আসে যখনকার ঘটনাবলী অন্যান্য ঘটনাকে জন্ম দেয়। এমন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে যিনি জাতির চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তেমনই এক ব্যক্তিত্ব। তিনিই জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্তভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি।
আজ ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাত বার্ষিকী। তিনি ছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও ক্ষুধামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের এই দিনে (৩০ মে) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি ‘শহীদ জিয়া’ বলেই পরিচিত। সেদিন জিয়াউর রহমানের আকস্মিক শাহাদাতবরণে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনিই জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে বার বার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে, বীরের বেশে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিশেহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এ অতুলনীয় ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
৭১’ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়ার কালূরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষনা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে ৭ নবেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি বাকশালমুক্ত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। নিশ্চিত করেন বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল “বিএনপি”। তার প্রতিষ্ঠিত দল তিন বার জনগণের ভোটে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী, অকুতোভয় বীর। তিনি ছিলেন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে শকুনের থাবামুক্ত রাখার লড়াকু সৈনিক। আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শ্রেণীবৈষম্য ও নিরক্ষতার বিরুদ্ধে। জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি অসীম গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেগেছেন। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদ্দীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে এক মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। সিপাহী-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্পসময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।
যখন দেশে তার প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে আবারো কবর দিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর ক্ষমতাসীনরা। একতরফা নির্বাচন ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের রায়কে ছিনিয়ে নিয়েছে। সরকার সারা দেশে ভিন্নমতের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের রোষানলে পড়ে বিএনপির হাজারো নেতা কারাগারে কিংবা আত্মগোপনে। লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।শহিদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে চরম অপমানজনকভাবে বের করে দেয়া হয়েছে। কথিত দুর্নীতির মামলায় দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশী সময় ধরে জেলখানায় আবদ্ধ থাকতে হয়েছে। এছাড়া তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আজ বিরোধী দলের মতের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। জাতির এই চরম দুঃসময়ে জিয়াউর রহমানের মুক্ত গনতান্ত্র প্রবর্তন আজ পাথেয়।
উল্লেখ্য, জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তীতে তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তার ডাক নাম ছিল ‘কমল’। বাবা মনসুরুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে কমল ছোটবেলা থেকেই লাজুক ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতায় তার বাল্যপাঠ শুরু হয় সেখানকার হেয়ার স্কুলে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাবার সঙ্গে করাচি চলে যান তিনি। জিয়াউর রহমান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কমিশন পান ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনি কাবুলে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ইন্সপেক্টর হন এবং একই বছর শেষদিকে কোয়েটা স্টাফ কলেজে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে।
জীবিতকালে জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্য কৃতিত্বের কথা আমরা আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। (প্রেস বিজ্ঞাপ্তি)