দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রয়োজনের তাগিদে যে ভার্চুয়াল আদালতের যাত্রা শুরু হয়েছে, তা সবক্ষেত্রে চালু না করার সুপারিশ করেছে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি।
সংসদে বিলটি আসার পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আইন বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে এই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি।
রবিবার(২৮জুন) সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু বলেন, “প্রয়োজনের তাগিদে এই আইনটি প্রয়োগ করার বিষয়ে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে।
“ধরুন কোনো মহামারী হলো, জরুরি প্রয়োজন দেখা দিল, নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠল- সেরকম পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালত এ আইন প্রয়োগ করবে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিন খসরু জানান, সংসদীয় কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, আব্দুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনসহ কয়েকজন লিখিত মতামত পাঠিয়েছেন।
সোমবার বিলটি পাসের সুপারিশ করে প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা আভাস দিয়েছেন।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল মজিদ খান, শহীদুজ্জামান সরকার, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব নরেন দাস, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরও উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটিার সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশে করোনাভাইরাসের কারনে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে বিলটি উত্থাপনের প্রেক্ষাপট, বিলটি প্রয়োগের ক্ষেত্র, সীমাবদ্ধতা, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে এ বিলের সামঞ্জস্য ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন।
সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকের দিনই ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠার আইন না করার জন্য সংসদীয় কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়।চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারী ছড়ানো ঠেকাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে যেভাবে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে দেশের ‘ঐতিহ্যবাহী’ বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে আদালতও বন্ধ হয়ে যায়।দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বিচারকাজ থেমে যাওয়ায় ভার্চুয়াল আদালতের ভাবনা গতি পায়, যেখানে আইনজীবী,
বিচারক, আসামি, বাদী কিংবা আদালতকর্মী কেউই একসঙ্গে না বসেই শুনানি নিতে পারেন।ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে গত ৭ মে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার পর তার ভিত্তিতে ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়ে যায়।এই ভার্চুয়াল আদালতে শুধু জামিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শুনানিই হচ্ছে। তবে অনভ্যস্ততা ও অপ্রতুল অবকাঠামোর কারণে ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে আইনজীবীদের যেমন অস্বস্তি রয়েছে,
তেমনি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকাজ পরিচালনা ও দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও নিম্ন আদালতের দুই ডজনের বেশি বিচারকের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির পর তা আইনে পরিণত করতে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। না হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা হারাবে।তার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে গত ২৩ জুন সংসদে বিল তোলা হয়।
তখন বিলটি পরীক্ষা করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।এবং ২৪ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি নিয়ে বৈঠক করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
সূত্র-বিডি নিউজ২৪