দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: করোনা সংক্রমণ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধিতে সরকার সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চলাচলের ক্ষেত্রে।এতে রাস্তায় মানুষের চলাচল কিছুটা কমে গেলেও যাত্রী না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা অলস সময় পারছে করছে রিকশাচালকরা। অন্যদিকে শহরে ডুকলে পুলিশের কাছে গুনতে হচ্ছে জরিমানা বা শাস্তি।
সোমবার(১৯ এপ্রিল)সর্বাত্মক লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে শহরের চাষাড়া, দুই নং রেলগেইট, নিতাইগঞ্জ, মন্ডলপাড়া, পঞ্চবটি, খানপুর, কালিবাজার, শিবু মার্কেট, ফতুল্লা, পাগলা, ভুইঘর, ঝালকুড়ি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এসব এলাকায় একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন সকাল ১১টা পর্যন্ত মাত্র একজন করে যাত্রী পেয়েছেন।
সরেজমিনে দেখে জানা গেছে যাত্রী না থাকলেও অনেকেই পেটের টানে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন। মহল্লার গলির রাস্তা ও প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। কেউ কেউ যাত্রী না পেয়ে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথায় খালি রিকশা নিয়ে যাত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে কোন যাত্রী নিয়ে শহরের দিকে গেলে পরতে হচ্ছে পুলিশের হাতে আর গুনতে হচ্ছে জরিমানা বা শাস্তি।
তারা আরো জানান, সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাইরে মানুষের চলাচল কমে গেছে। যারা বের হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। এছাড়া আজ মানুষের যাতায়াত আরও কম। এ কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
চাষাড়ার একটি রাস্তাতেও কয়েকজন রিকশাচালককে একস্থানে জমা হয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
তাদের একজন মিজান বলেন, অন্য সময় যাত্রীরা আমাদের বলতো ভাই যাবেন? আর এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। আগে দিনে ৮০০-৯০০ টাকা রোজগার হতো। কয়েকদিন ধরে ২০০-৩০০ টাকা রোজগার করাই কষ্টকর হয়ে গেছে। এ অবস্থা চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যাত্রী নিয়ে মেইন রোড দিয়ে গেলে পুলিশ কয়েক জায়গায় যাত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। যাত্রীরা সঠিক প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে আর আমাদের রিকশা উল্টে রাখছে। আমরা তো যাত্রীই পাচ্ছি না তার উপর যাও পাচ্ছি শহরের দিকে বা মেইন রোডে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে আমাদের রিকশা উল্টে রাখছে পুলিশ। এদিকে চাষাড়া মোড়ে এক রিকশা চালকের রিকশা উল্টে রেখেছে পুলিশ শহরে রিকশা নিয়ে ডুকায়।
এসময় সে রিকশাচালক মানিক বলেন, পেটের দায়ে আমাদের বের হতে হয়।বের না হলে তো সরকার আমাদের বাসায় খাবার দিয়ে আসবে না। কিন্তু আমরা যারা গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই তাদের ঘরের কথা কি সরকার একটুও চিন্তা করে। আজকে সকালে এক যাত্রী নিয়ে শহরের দিকে ডুকে পড়ায় পুলিশ আমার রিকশা উল্টে রাখছে সকাল থেকে।এখন দুপুর হয়ে গেছে রিকশা ছাড়ার নাম নাই।
অন্য রিকশা ছাইড়া দিছে। এটা কেমন বিবেক। আমার ঘরে ৫টা মুখ চেয়ে আছে কখন আমি খাবার নিয়ে যাবো। সরকার কি তাহলে এভাবে গরীবের পেটে লাথি মেরে লকডাউন পালন করতে বলেছে।
শিবু মার্কেট একটি রাস্তায় কয়েকজন রিকশাচালককে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের একজন রংপুরের সালাম। বেলা সাড়ে ১০টায় টার দিকে তিনি জানান, সকাল ৮টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। ভাড়া পেয়েছি মাত্র ৩০ টাকা। পরিস্থিতি যা, দিন শেষে রিকশার জমার টাকা তোলায় কষ্টকর হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। গতকাল ২৫০ টাকা ভাড়া পেয়েছিলাম। আজ তার অর্ধেকও হবে না বুঝতে পারছি। কিন্তু পেট চালাতে হলে তো ঘরে বসে থাকা যাবে না। ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে আছি। যারা চাকরি করেন, অফিসে না গেলেও মাস শেষে তারা বেতনের টাকা পাবেন। কিন্তু ভাড়া মারতে না পারলে আমাদের মুখে ভাত জুটবে না।
এদিকে অন্যান্য সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন এমন অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া গেলেও আজ তেমনটা পাওয়া যায়নি। বরং যাত্রীরাও জানিয়েছেন অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম ভাড়ায় রিকশা পাওয়া যাচ্ছে।