দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের দূরত্ব কেবলী ঘনিভূত হচ্ছে। তাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে ক্রমেই ফাটল রেখার ইঙ্গিত করছেন তৃনমুল নেতাকর্মীরা।
সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক উভয়ই পৃথকভাবে অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। শনিবার (৭ আগষ্ট) দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচিতেও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানের নেতৃত্বে এককভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা এ্যাড. ইকবাল হোসেন ও নজরুল ইসলামকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে পরিদর্শণ করতে দেখা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ জার্সি পরিহিত কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক পড়ে টিকা দেওয়ার সচেতনতা তৈরী করতে দেখা গেছে। অপরদিকে সভাপতি জুয়েল হোসেনকে দেখা যায়নি। তাদের এই দূরত্বের ঢেউ নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ড ভিত্বিক তৃনমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ সৃষ্টি করছে। তাই মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা রয়েছে বিপাকে।
এদিকে বিগত ৩বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে সভাপতি হয় তোলারাম কলেজের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্রনেতা জুয়েল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক মনোনীত হয় নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান।
নতুন কমিটি হওয়ার পর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সমন্বয়ের অভাবে মহানগরের আওতাধীণ ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। কমিটি গঠনের প্রথমদিকে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক দুজনেই দলীয় সকল কর্মকান্ডে সরব ভূমিকা পালন করলেও বিগত ১বছর ধরে তাদের মধ্যে বিভাজন দৃষ্টতা লক্ষ করা গেছে। উভয়েরই পৃথক পৃথক ভাবে অনুষ্ঠান করতে দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতেও দেখা যায় নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্প স্তবক অর্পণ করা হয় সভাপতির নেতৃত্বে। অপরদিকে সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্বে বন্দরে স্বল্পেরচক এলাকায় নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের পাশে কৃত্তিমভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরী করে নেতাকর্মী নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সংগঠনের কোন কার্যালয়ও নেই তাদের। ফলে শহরের চাষারাস্থ লিংক রোডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন অস্থায়ীভাবে অফিস তৈরী করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
অপরদিকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধাণ স্বল্পের চকস্থ নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে রাজনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছেন। ফলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব লক্ষ করা গেছে। তবে কেন এ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে শংকা বিরাজ করছে তৃনমুল নেতাকর্মীদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন,মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ একটি পরিচ্ছন্ন সংগঠন। কমিটিও শক্তিশালী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন মাঠ পর্যায়ের নেতা। সেই ছাত্র নেতা থেকে সে এ পর্যন্ত এসেছে। সাংগঠনিক ভাবে সে খুবই পরিশ্রমী নেতা। ঠিক তেমনী ভাবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারন সম্পাদক ও ২৩নং ওয়ার্ডের দুই বারের জনপ্রিয় কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান খুবই বিনয়ী ও মানবিক। হয়ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দুলাল ভাইয়ের ব্যস্ততা বেশি থাকে। তাই তিনি দলীয় কর্মকান্ডে সময় তেমন দিতে পারেন না। তবে আমরা চাই সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সমন্বয় করে সংগঠনটি এগিয়ে নিয়ে যাবে। নিন্দুকের অপপ্রচার ও সকল বিভাজন ভাসিয়ে দিয়ে জুয়েল ভাই এবং দুলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ শৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ থাকুক এই প্রত্যাশা করি।
এ ব্যাপারে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন বলেন,আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করে সেই কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু নারায়ণগঞ্জের গন মানুষের নেতা সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। তার আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে নারায়ণগঞ্জে সাধারন মানুষের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছি। তবে ইদানিং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। একেএম শামীম ওসমান এমপির হাতেগড়া আদর্শিক সংগঠন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ হটাৎ করেই ভেঙ্গে পড়ার সংগঠন নয়। এই সংগঠনের সাধারন সম্পাদক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান আমার বন্ধু।
হয়ত আমাদের সাথে যোগাযোগ কম হয় তাই বলে নিন্দুকের অপপ্রচারে কখনো স্বেচ্ছাসেবক লীগ ভাগ হবে প্রশ্নই আসেনা। আমার সাথে কাউন্সিলর দুলাল প্রধানের ৬মাস ধরে যোগাযোগ নেই। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন অনুষ্ঠান থাকলে তাকে ফোন করলে সে ধরেনা। এজন্য সম্পর্কে চীর ধরেছে এমন তো নয়। সভাপতি হিসেবে আমার যতটুকু অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি সাধারন সম্পাদক হিসেবে দুলাল প্রধানেরও ততটুকু অধিকার রয়েছে।
কমিটি প্রসঙ্গে বলতে গেলে আমি বলব দুলাল প্রধানের শুধু বন্দরের ৯টি ওয়ার্ড নয় বরং ২৭টি ওয়ার্ডেরই কর্নধার সে। আমাদের দুজনের সমন্বয়ে কমিটি হবে এটাই স্বাভাবিক।
এ ব্যাপারে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ও নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধান বলেন,একেএম শামীম ওসমান আমাদের অভিভাবক। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কমিটি গঠন একা করার এখতিয়ার রাখেনা। উভয়ের সমন্বয়ে কমিটির খসড়া তৈরী করার পর আমার নেতা একেএম শামীম ওসমান এপ্রোভ করলেই কমিটি বৈধতা পাবে। অন্যথায় নয়। অত্যন্ত দু:খ জনক ব্যাপার একটাই সেটা হল আমার ২৩নং ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে অনুষ্ঠান হচ্ছে অথচ আমি জানি না।
আমার সাথে সভাপতি সমন্বয় করলে আমি আমার ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা ও আ’লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে করতাম। তবে আমি একটা বিষয়ে একদম ক্লিয়ার থাকতে চাই সেটা হচ্ছে বিতর্কিত কোন লোক কিংবা বিএনপি সমর্থিত কোন লোককে আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের মত সংগঠনে কোন ঠাঁই দিব না। আশা করি সভাপতি মহোদয় ভবিষ্যতে সমন্বয় করে কাজ করবেন।