দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় আগড়তলার জিবি হাসপাতালে নাসিংয়ের (সেবিকা) কাজ করেছিলেন কমলা রানী কর (লক্ষ্মী চক্রবর্তী)। সেখানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন জোয়ান গুলিবিদ্ধ হলে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা দিতে আনা হয়। তিনি কোন কথা বলতে পারছিলেন না, শুধু মুখ দিয়ে পানি এবং ডাব বলেছিলেন। তাকে পানি পান করানো হলো, কিন্তু ডাব পাওয়া যাচ্ছিলো না। সবাই মিলে ২৫ পয়সা করে চাঁদা দিয়ে ছয়টি ডাব কিনে আনার আগেই তার প্রাণবায়ু চলে যায়। সহযোদ্ধা মৃত্যুপথযাত্রীকে ডাব না খাওয়াতে পারায় কষ্টে আজ পর্যন্ত ডাবের পানি পান করেন না বীরমুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তী।
নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ২০২২’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে তিনি এসব কথা জানান।
বন্ধুসভার কার্যালয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠানে লক্ষ্মী চক্রবর্তীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
স্মৃতি কাতর হয়ে লক্ষ্মী চক্রবর্তী জানান, ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর নারায়ণগঞ্জ থেকে আমরা প্রতিদিন মশাল মিছিলসহ বিক্ষোভ প্রদর্শণ করতাম। আমার বাবাসহ আমাদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তারা ভাবলেন এর ব্যতিক্রম কী করা যায়। সবাই মিলে সিদ্বান্ত নিলো নারায়ণগঞ্জে আমরা একটি মিছিল করবো। ১০ মার্চ সোনাকান্দা ডকইয়ার্ড থেকে জাহাজ, ছোট লঞ্চসহ অনেকগুলো নৌকা নিয়ে আমরা নৌ মিছিল করেছিলাম। মিছিলে সব পেশার মানুষ তাদের ব্যবহৃত উপকরণ নিয়ে- কৃষক লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে, তাঁতী মাকু নিয়ে, শ্রমিক বাঁশের লাঠি নিয়ে হাজির হয়েছিলো। আমি একটি রামদা নিয়ে জাহাজের উপরে অবস্থান করেছিলাম। শীতলক্ষ্যা নদী মানুষের মাথায় সেদিন কালো দেখা যাচ্ছিলো।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমরা আমাদের গ্রামের বাড়ি গজারিয়া চলে যাই। সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হলে আমরা কুমিল্লা দিয়ে বর্ডার পার হয়ে আগড়তলার চলে যাই।সেখানে প্রথমে শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করি। পরে আমাদেরকে বলা হলো মুক্তিযুদ্ধে যারা আহত হয়ে আসবে তাদের চিকিৎসার জন্য মেয়েরা কাজ করবে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আগড়তলার জিবি হাসপাতালে কাজ করা শুরু করলাম।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের পাক সেনাদের বর্বর অত্যাচারের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, নারীদের পাশবিক নির্যাতন করে বিবস্ত্র করে ফেলে রাখা হতো। অত্যাচার অপমান সইতে না পেরে অনেকেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহণনের পথ বেঁচে নিতো। বিবস্ত্র অবস্থায় থাকা নারীদের ভারতের শিখ সেনারা তাদের মাথার পাগড়ী দিয়ে রক্ষা করতো।
বন্ধুসভার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধরনের সংগঠনের মত আরও অনেক সংগঠন আমাদের দেশে গড়ে উঠা উচিত। তাহলে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আত্মস্থ’র করতে পারবে।আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা বাস্তবায়িত হবে।
নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি উজ্জ্বল উচ্ছ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মনিকা আক্তারের সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, সাবেক সভাপতি রাসেল আদিত্য, সাব্বির আল ফাহাদ, আফরিন সুলতানা জেমি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরপন আহমেদ রাজু, মিরাজ রেজা, অর্থ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, দপ্তর সম্পাদক নুসরাত জাহান আনকা,
প্রচার সম্পাদক সৌরভ হোসেন সিয়াম, তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক সৌরভ সরকার, ম্যাগাজিন সম্পাদক নাসরিন আক্তার, বইমেলা সম্পাদক ইয়াছিন ইসলাম সাকিব প্রমুখ।
এর আগে বন্ধুরা চাষাড়া বিজয় স্তম্ভে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি, এড. এবি সিদ্দিক সহ বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।