দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ ‘কুষ্ঠ পরাজিত, জীবন পরিবর্তন’ এই প্রতিপাদ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ইলেক্ট্রনিক,প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার(৯ মার্চ)বেলা সাড়ে ১১টায় ফতুল্লা রিপোর্টাস ক্লাব মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনের আয়োজনে ও দ্যা লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এ ওরিয়েন্টেশন কোর্সটি।
এসময় ওরিয়েন্টেশন কোর্সে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনের মেডিকেল অফিসার টিবি ও লেপ্রোসীর ডা.শহীদুল ইসলাম স্বপন, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মোঃ ফয়সাল,দ্যা লেপ্রোসী মিশনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার জুয়েল খিয়াং,নারায়ণগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শহীদুল্লাহ রাসেল,ফতুল্লা রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি কাজী আনিসুর রহমান সহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক,প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এই ওরিয়েন্টেশন কোর্সটি নারায়ণগঞ্জ জেলা রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি শহীদুল্লাহ রাসেলের পরিচালনায় কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের মাঝে কুষ্ঠ রোগ নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন এর প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ফয়সাল আহমেদ। পরে কুষ্ঠরোগ কি,কুষ্ঠরোগের কারণ,কুষ্ঠরোগের লক্ষণ,কুষ্ঠ রোগ কেন হয়,কুষ্ঠরোগের ধরণ,কুষ্ঠরোগের প্রকারভেদ,কুষ্ঠরোগ নির্ণয় করা হয় কীভাবে,কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা,এই রোগ নিয়ে জাতীয় কার্যক্রম ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেন নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনের টিবি ও লেপ্রসি ডা.শহীদুল ইসলাম স্বপন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলায় কুষ্ঠ রোগীর চিকিৎসা,রোগীদের রোগ থেকে প্রতিকার এবং কতজন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে,এই পর্যন্ত জেলায় কুষ্ঠ রোগ নিয়ে কি কার্যক্রম হয়েছে এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন দ্যা লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার জুয়েল খিয়াং।
এসময় কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে ডা.শহীদুল ইসলাম স্বপন বলেন,কুষ্ঠরোগ বা হ্যানসেনের রোগ (এইচডি) নামেও পরিচিত মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি বা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে স্নায়ু, শ্বাস প্রশ্বাসের নালী, ত্বক এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে। এই রোগটি দুই ভাগে হয় পসি ব্যাসিলারি বা পিবি এবং মাল্টি ব্যাসিলারি বা এমবি। পসি ব্যাসিলারি রোগীদের ত্বক বা চামড়া দাগের সংখ্যা ১ হতে ৫ এর মধ্যে সীমিত থাকে আর এদের শরীরে খুব কম সংখ্যাক জীবানু থাকে।কিš‘ মাল্টি ব্যাসিলারি ত্বক বা চামড়ায় ৬ হতে অসংখ্যের মধ্যে সীমিত থাকে আর এদের শরীরে দাগের পরিবর্তে গুটি বা চামড়া মোটা হয়ে যেতে পারে।
এই রোগে চামড়া ফ্যাকাশে দাগ-ছোপ দেখা দেয়,ত্বকে ছোট ছোট ফোঁড়ার মতো হয়,চামড়া শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়,পায়ের পাতার নিচের অংশে ঘা হয়, মুখের বা কানের কিছু স্থানে ফুলে ওঠে, চোখের পাপড়ি ও ভ্রু পড়ে যায়,সংক্রমিত স্থান অসাঢ়তা অনুভব ও ঘাম হয়, অনেকে পঙ্গু হয়ে যান,পেশী দুর্বল হয়ে যায়, মুখের নার্ভ বা স্নায়ুতে প্রভাব পড়ায় অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে। কুষ্ঠ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে-হাত-পা অকেজো হয়ে যায়, আঙুল ও পা ছোট হয়ে যেতে পারে, পায়ের আলসার বা ঘায়ের কারণে তা কাটা পড়ে,নাক বিকৃত হয়ে যায়, চামড়ায় জ্বালা-যন্ত্রণা হয়।তাই এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সরকারি হাসপাতাল,বেসরকারি হাসপাতাল,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দ্রুত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে এবং রোগীদের বিনামূলে ওষুধ প্রদান করা হয়।
জুয়েল খিয়াং বলেন,পসি ব্যাসিলারি লেপ্রসির জন্য ৬ মাস এবং মাল্টি ব্যাসিলারির জন্য ১২ মাস চিকিৎসা মেয়াদ।এর মধ্যে এমডিটি ব্লিস্টার প্যাকের ওষুধ সেবন করতে হয়। পসি-ব্যাসিলারি রোগীদের ২টি ও মাল্টি-ব্যাসিলারি রোগীদের ৩টি ঔষধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। রিফামপিসিন ও ড্যাপসন সমন্বয়ে চিকিৎসাকে বলা হয় পসি-ব্যাসিলারি রেজিমেন- (চইজ) বা পিবিআর এবং রিফামপিসিন, ড্যাপসন ও ক্লোফাজেমিন সমন্বয়ে চিকিৎসাকে বলা হয় মাল্টি-ব্যাসিলারি রেজিমেন (গইজ) বা এমবিআর।বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সরকারী ও বেসরকারী কুষ্ঠ হাসপাতালে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
সারা দেশের ৬২৫টিরও বেশি চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি ‘এমডিটি’ চিকিৎসা কেন্দ্র কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব বেশী এমন বিভিন্ন জেলার উপজেলা পর্যায়ে অবস্থিত। এ সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে এমডিটি সহ অন্যান্য উপকরণ সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা নেয়া একান্ত জরুরী। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে কুষ্ঠরোগে অঙ্গ বিকৃতি বা বিকলাঙ্গতা হয় না। ওরিয়েন্টেশন কোর্সের মিডিয়া পার্টনার ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।