দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ ফতুল্লায় আয়েশা এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টিং কারখানায় বিএনপির সাবেক সাংসদ,আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপি নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে একটি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এনিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
গত শনিবার (১৯ মার্চ)বেলা ১১ টায় ফতুল্লার দাপায় এই ঘটনা ঘটেছে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,বিএনপির সাবেক সাংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী,নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদ চৌধুরী ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটনের নেতৃত্বে একাধিক হায়েস গাড়িতে ৭০ /৮০ জনের একটি বহর যায়। প্রতিষ্ঠানের দারোয়ানকে মারধর করে বেঁধে মোহাম্মদ আলী, মীর সোহেল ও রিয়াদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ভাংচুর চালিয়ে ফ্যাক্টরীর ভেতরে থাকা প্রায় ৮০ লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন মেশিনারিজ এবং নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা লুটে নেয় তাদের লোকজন।
সমস্ত কম্পিউটার, মনিটর, হার্ডডিক্স, ২টি লেজার কাটিং মেশিন, প্রায় অর্ধশত ফ্যান, স্টোরে রক্ষিত মূল্যবান মালামাল গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ফ্যাক্টরীর গেইট, টিনের সীমানা প্রাচীর, টিনসেড ঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এখানে এ্যাম্ব্রেয়ডারি, প্রিন্টিং, গরুর খামার, মৎস হ্যাচারি ও রিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। হামলাকারীরা গ্যারেজ থেকে ২৬টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৭২টি ব্যাটারী ও ৩০টি চার্জার লুট করেছে। খবর পেয়ে কারখানার কয়েকজন শ্রমিক ও রিক্সা চালকরা ঘঁনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা তাদের মারধর করে আহত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,শনিবার ছুটির দিন থাকায় কারখানা বন্ধ জেনে ৭/৮টা হাইস নিয়ে মোহাম্মদ আলী,মীর সোহেল আলী,রিয়াদ চৌধুরী ও ফরিদ আহমেদ লিটন প্রায় ৭০-৮০ জন লোক নিয়ে আসে। কারখানার দারোয়ানকে মারধর করে জোর করে কারখানায় প্রবেশ করে কারখানার ভিতরে বিভিন্ন ভাংচুর চালায়। অনেকে কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকেরা কারখানায় ভাংচুরের প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এছাড়াও কারখানার অনেক জিনিসপত্র সাথে করে নিয়ে যায়।
জানা যায়,২০১৩ সাল থেকে এখানে নিজ ক্রয়কৃত মোট ৫৫ শতাংশ জমিতে ফ্যাক্টরী নির্মাণ করে ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন তিনি। হাজী মতিন ওরফে তোতা মিয়ার ছেলে এমদাদ হোসেন গংয়ের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ এবং পার্শ্ববর্তী আলমাছ গংয়ের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ সহ মোট ৫৫ শতাংশ জায়গা খরিদ সূত্রে মালিক তিনি। তবে প্রায় ছয় মাস পূর্বে মোহাম্মদ আলী, মীর সোহেল ও রিয়াদ মিলে ওই জমির বিষয়ে একটি দলিল সৃজন করে।
ওই দলিলের কোন সিএস, এসএ, আর কিছুই নেই। ভুয়া দলিল তৈরী করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। বিষয়টি জেনে তাদের ওই দলিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। ২০২১ সালে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত, নারায়ণগঞ্জে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা চলমান আছে। যার নম্বর ৩৫৭/২০২১। এ মামলার বাদি আজাদ হোসেন ও তার তিন মেয়ে আছিয়া খাতুন চৌধুরী আখি, আয়শা সিদ্দিকা এবং হাজেরা আক্তার। এ মামলার ১৪ নম্বর বিবাদি হলেন মোহাম্মদ আলী। মামলাটি চলমান আছে। মামলা চলাবস্থায় তারা এখানে এসে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা ও লুটপাট করেছে। এই বিষয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের মালিকের জামাতা সুলতান মাহমুদ রানা বাদী হয়ে একই দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
কারখানা মালিক আজাদের অভিযোগ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল হামলার ঘটনার সময়ে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভুক্তভুগি মো. আজাদ হোসেন এর জামাতা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেবার পর তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিকদের পরিচয় পরে বক্তব্য দিবেন বলে কলটি কেটে দেন।
একই অভিযোগের অভিযুক্তকারী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানায়,আমি তো আজাদ সাহেবের পক্ষে কাজ করে দিয়েছি। আজ সকালেও উনার সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন আমার নাম বলে নাই। এটা মিথ্যা কথা। এই কাজটা করছে স্বেচ্ছাসেবলীগের ফরিদ আহমেদ লিটন আছে না ওরা করছে। আজ এই বিষয় নিয়ে মোহাম্মদ আলী সাহেবের অফিসে বসছে তারা। আমি তো গতকাল ঘঁনারস্থলে ছিলাম না। বরং তার কারখানার মালামাল আনার জন্য আমি সহযোগিতা করেছি।
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে অস্বীকার করে জানায়,এই বিষয়ে আমি জানিই না। আর ওখানে আমার সম্পত্তিও নেই যে আমি ওখানে যাবো আসলে আমি এই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না।
এদিকে কারখানায় হামলা চালিয়ে মারধর ও লুটের অভিযোগের বিষয়ে রিয়াদ চৌধুরীর মুঠোফোনে(০১৭১৫৭৮৪৬**)যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভকারী সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রিয়াদ চৌধুরীর কর্মচারীর পরিচয় প্রদান করে বলেন কি বক্তব্যের জন্য ফোন দিয়েছেন আমাকে বলুন উনি বাহিরে আছে।
এ বিষয়ে জমির মালিক মো.আজাদ এর মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,জমির মুল মালিক আমি অথচ তারা নাকি উক্ত জমিটি আরেক জনের কাছ থেকে কিনেছেন। এ বিষয়ে ২০১৩ সাল থেকে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা(এসআই)আব্দুর রউফ বলেন, ‘থানায় অভিযোগ পেয়ে আমরা ফোর্স নিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে ঘটনাস্থলে যাই। ওই জায়গাটা নিয়ে আদালতে তিনটি মামলা চলমান আছে। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের যে মূল মালিক আজাদ সাহেব উনাকে থানায় আসতে বলা হয়। উনি গতকাল থানায় আসার পর ওসি স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছি। স্যার আজাদ সাহেবকে এবং যারা হামলা চালিয়ে যন্ত্রাংশ নিয়ে গিয়েছে তাদের কাগজপত্রাদি নিয়ে আসতে বলেন। কারন আদালতে যেহেতু মামলা চলমান আছে কোন প্রেক্ষিতে কারখানায় হামলা চালায় বা কারখানা কিসের বলে চালাচ্ছে আমরা দেখার জন্য। কিন্তু আজাদ সাহেব এখনো থানায় কোন কাগজপত্রাদি নিয়ে আসে নাই ।
আব্দুর রউফ আরো বলেন,গতকাল ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজাদ সাহেবের জামাতা সুলতান একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। আর ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।