দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: পুলিশের ধাওয়ায় পরিত্যক্ত ডোবায় ঝাপিয়ে পড়ার ৩ দিন পর নিলয়ের (৩১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. আবুল কালামের ছেলে ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশা সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, নিহতের প্রতিবেশী আমিনুল (৫৫), হাসিনা বেগম (৪৫), শিপলু (৩২), আফজাল (২২), জিপু (২৬), শহিদুল ইসলাম ওরফে শইক্কা (৫০), সিরাজুল ইসলাম (৪৫), হাসান (২৬) ও সোবহান (৩৫)।
এদিকে, মামলার এজাহারে নেই পুলিশের ধাওয়ার বিষয়টি। তবে সেই একই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা রওশন ফেরদৌসকে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হলেও মামলায় নেই তার নাম।
অন্যদিকে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, হাসিনা বেগম (৪৫) নামে প্রতিবেশী এক নারীর সাথে দ্ব›দ্ধ ছিল নিহত যুবক নিলয় আহমেদ ওরফে বাবুর। বাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেন এমন অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে হাসিনা বেগমকে জিম্মি করে টাকা আদায় করেন নিলয়। এই ঘটনায় ওই নারী স্থানীয় পঞ্চায়েত ও কাউন্সিলরের কাছে বিচার দিয়ে সমাধান না পেয়ে পুলিশের কাছে যান।
হাসিনা বেগমের সাথে সখ্যতা থাকায় মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে নিলয়ের বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালান বন্দর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রওশন ফেরদৌস। সর্বশেষ গত ১ মে রাতে বন্দরের বাগবাড়ি এলাকায় ফোর্স নিয়ে যান ওই এসআই। পুলিশের ধাওয়ায় নিজ বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরে ঝাপিয়ে পড়েন নিলয়। গত ৪ মে দুপুরে ওই ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিছুক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ঘটনার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইজিবাইকে একদল পুলিশ আসে। তাদের মধ্যে সাদা পোশাকে ছিলেন এসআই ফেরদৌস। তবে তার কোমরে পিস্তল ও হাতকড়া ছিল। বাকি দু’জন পুলিশ সদস্য পোশাক পরা ছিলেন এবং হাতে ছিল রাইফেল। তাদের সাথে হাসিনা বেগম নামে ওই নারীও ছিলেন। পুলিশ এসেই জনৈক সাইদুলের টিনসেডের ভাড়াবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানেই অবস্থান করছিল নিলয়।
পুলিশের ধাওয়ায় পাশের পরিত্যক্ত ডোবায় ঝাপ দেয় নিলয়। তাকে উপরে তোলার জন্য ডোবায় ঢিল ছোড়েন এসআই রওশন ফেরদৌস ও স্থানীয় কয়েকজন। তবে নিলয়কে আর উপরে উঠতে দেখা যায়নি। ততক্ষণে এলাকায় মানুষজনের ভিড় জমে যায়। তাদের ধমক দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন এসআই ফেরদৌস। উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, নিলয় ডোবা থেকে উঠে পালিয়ে গেছে। তবে তাকে দ্রতই গ্রেফতার করা হবে। অথচ পরে সেই ঘটনাকে উল্টে দিয়ে নিরহ মানুষদের হয়রানী করা হচ্ছে। এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সামিল।
বাগবাড়ি পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আক্তার হোসেনও সংবাদকে বলেন, ‘পুলিশের ধাওয়াতেই ডোবায় ঝাপিয়ে পড়ে বাবু। তখন এলাকাবাসীও ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছিল। পুলিশকে নিয়ে এসেছিল হাসিনা। হাসিনার কাছ থেকে বাবু টাকা খেয়েছিল বলে শুনেছি। সেইটা নিয়ে থানায় অভিযোগ দিছিল সে।’
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, হত্যা মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হাসিনা ও সোবহান এই মামলায় গ্রেফতার আছেন। সোবহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের মা লিলি বেগম বলেন, ৩০ এপ্রিল দুপুরে ও রাতে পরপর দুইবার এসআই ফেরদৌস ফোর্স নিয়ে নিলয়ের খোঁজে বাড়িতে আসেন। দুইবারই পুলিশের পোশাক পরে আসেন তারা। ১ মে রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ডোবায় ঝাপিয়ে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়ে বাড়িতে ফিরে অনেক রাত খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে পাননি। এ নিয়ে ২ মে থানায় জিডিও করেন। পরে ৪ মে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ডেকে এনে খোঁজার পর ছেলের মরদেহ পান।
মামলায় পুলিশের ধাওয়ার বিষয়টি কেন উল্লেখ করেননি জানতে চাইলে লিলি বেগম বলেন, এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধাওয়া পুলিশ দিয়ে বলে শুনেছিলাম। পরে শুনলাম কাউন্সিলরের লোকজন ধাওয়া দিয়া পানিতে নামাইছে তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত নিলয়ের খালাতো বোনের স্বামী সুমন প্রধান সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানের চাচাতো ভাই। নিলয় দুলাল প্রধানের কর্মী ছিলেন।