দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: বন্দরে নিলয় আহমেদ বাবুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ধ্রমজালে সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি নিয়ে একটি পক্ষ নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য অদৃশ্য শক্তির বলে নিহতের মাকে ব্যবহার করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে এ বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। আর এতে করে আসামী পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার বৃথা চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট তথ্য সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই ঘটনার শুরুর দিকে পুলিশের ধাওয়ায় পরিত্যক্ত ডোবায় ঝাপিয়ে পড়ার ৩ দিন পর নিলয়ের (৩১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি গণ-মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।
পরে পরিস্থিতি শামাল দিতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা রওশন ফেরদৌসকে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হলেও মামলায় নেই তার নাম।
এদিকে পুলিশ বলছে, ৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় নিলয় আহমেদ ওরফে বাবু নামে ওই যুবক প্রতিবেশীদের ধাওয়ায় ডোবায় পড়ে ডুবে যায়। আর নিহতের মা জিডিতে উল্লেখ করেছেন তার ছেলে ১ মে রাত সাড়ে ১০টায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়।যার জিডি নং-৭৯।
অপরদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভয়ে ডোবায় ঝাপ দেয় ওই যুবক। ৪দিন পর তার লাশ ভেসে উঠে। এসময় নিহতের মা লিলি বেগম, বোন ও খালাতো ভাই ইমন এবং প্রতিবেশীরা প্রকাশ্যে চিৎকার করে বলতে থাকেন পুলিশ বাবুকে মেরে ফেলেছে। পুলিশের ভয়ে সে ডোবায় ঝাপিয়ে পড়ে ডুবে যায়। আমরা পুলিশ কর্মকর্তা এসআই রওশন ফেরদৌসের বিচার চাই। তিনিই এ হত্যার জন্য দায়ী।
তবে শেষ সময়ে অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা বলে রহস্যজনকভাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নিহতের মা লিলি বেগমকে দিয়ে পুলিশ বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করায়। ওই মামলায় ১ নাম্বার আসামী করা হয়, নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনের সাবেক এমপির ছেলে ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিকের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশাকে।
অথচ এর আগে নিহতের মা জিডিতে উল্লেখ করেন, ১ মে অনুমান রাত ১০ টায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে তার ছেলে বাবু বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর বাড়িতে ফিরে আসেনি। সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থানায় জিডি করতে আসলাম। বিষয়টি নিয়ে আত্মীয়-স্বজন আলোচনা করতে গিয়ে জিডি করতে বিলম্ব হলো। জিডি নং-৭৯। তবে জিডিতে তিনি তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার জন্য কাউকে দায়ি করেননি।
ওদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ৫ মে গ্রেপ্তারকৃত হাসিনা বেগমসহ দুইজনকে আদালতে পাঠানো সময় প্রতিবদনে উল্লেখ করেছেন, ৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় মামলার বাদীনি লিলি বেগমের ছেলে নিলয় বাবুকে ধরে আনার জন্য তার বাড়িতে যায়।
তখন নিলয় বাবু তাদের দেখে দৌড়ে পালানোর সময় ভয়ে বাড়ির পাশে ময়লা-আবর্জনা ঘাসযুক্ত পুকুরে পড়ে যায়। এসময় হাসিনা বেগমসহ অন্যান্য আসামীরা নিলয় বাবুকে উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল মারলে সে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে পানির মধ্যে ডুবে যায়। তখন হাসিনা বেগম সহ অন্য আসামীরা প্রচার চালায় যে বাবু পুকুর থেকে উঠে পালিয়েছে। কিন্তু ৪ মে নিলয়র বাবুর ভাসমান লাশ ওই পুকুরে পাওয়া যায়।
এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিছুক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ঘটনার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইজিবাইকে একদল পুলিশ আসে। তাদের মধ্যে সাদা পোশাকে ছিলেন এসআই ফেরদৌস। তবে তার কোমরে পিস্তল ও হাতকড়া ছিল। বাকি দু’জন পুলিশ সদস্য পোশাক পরা ছিলেন এবং হাতে ছিল রাইফেল। তাদের সাথে হাসিনা বেগম নামে ওই নারীও ছিলেন। পুলিশ এসেই জনৈক সাইদুলের টিনসেডের ভাড়াবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানেই অবস্থান করছিল নিলয়।
পুলিশের ধাওয়ায় পাশের পরিত্যক্ত ডোবায় ঝাপ দেয় নিলয়।
তাকে উপরে তোলার জন্য ডোবায় ঢিল ছোড়েন এসআই রওশন ফেরদৌস ও স্থানীয় কয়েকজন। তবে নিলয়কে আর উপরে উঠতে দেখা যায়নি। ততক্ষণে এলাকায় মানুষজনের ভিড় জমে যায়। তাদের ধমক দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন এসআই ফেরদৌস। উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, নিলয় ডোবা থেকে উঠে পালিয়ে গেছে। তবে তাকে দ্রতই গ্রেফতার করা হবে। অথচ পরে সেই ঘটনাকে উল্টে দিয়ে নিরহ মানুষদের হয়রানী করা হচ্ছে। এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সামিল।
এখন প্রশ্ন হলো-৩০ এপ্রিল নিলয় বাবু পানিতে ডুবে গেলে ১ মে রাত ১০ টায় কিভাবে সে তার মায়ের কাছ থেকে বন্দুদের সঙ্গে দেখা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল? তাহলে বুঝা যাচ্ছে বাবু পুকুর থেকে উঠে আবার তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে পুকুরে নেমে ডুব দিয়েছে। এবং পরে লাশ ভেসে উঠে।
তবে ঘটনার শুরুতে পরিস্থিতি শামাল দিতে পুলিশ কর্মকর্তা রওশন ফেরদৌসকে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড), নিহতের মায়ের জিডি আর প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার। প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই কলকাঠি নাড়ছেন তৃতীয় পক্ষ বলে দাবি সচেতন মহলের।