দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল। যা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা ও গতিশীল নেতৃত্বের ফলে বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে আজ বাস্তবে দৃশ্যমান। আগামী ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ যেন সোনার বাংলায় নতুন সূর্যোদয়।
এই সূর্যের আলোতে আলোকিত হবে অবহেলিত দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এ যেন অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা। আলোর মিছিলে শরীক হতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দীর্ঘদিন ভোগান্তির শিকার পদ্মার এপার—ওপারের কোটি কোটি বাসিন্দা।
২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে দেশের সর্ববৃহৎ এ সেতু দিয়ে সর্বসাধারণের জন্যে পরিবহন চলাচল উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। এদিন থেকে আর কোন মুহুর্ষ রোগী বা সন্তান সম্ভাবনা মাকে এ্যাম্বুলেন্সে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না। মাত্র ৫ মিনিটেই পাড় হওয়া যাবে ৬ কিলোমিটারের অধিক দৈর্ঘের এ সেতু। পদ্মা সেতুর মাওয়া—জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ তৈরী হয়।
ফলে এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে অসামান্য অবদান রাখবে। সেতুটি চালুর ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪ বর্গ কিঃ মিটার (১৭ হাজার বর্গ মাইল) বা দেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চল জুড়ে ৩ কোটির অধিক জনগণ সরাসরি উপকৃত হবে। ফলে এই সেতু চালু হলে দেশের ব্যবসা—বাণিজ্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে উন্নয়ন দ্রুত গতিতে হবে। সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস ও ফাইবার অপটিক ক্যাবল স¤প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
পদ্মাসেতু বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। নানা চড়াই—উতরাই পেরিয়ে, সব দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বপ্নের পদ্মাসেতু তৈরী করার বীজ রোপন করেছিলেন, তার অচিন্তনীয় মেধা, মনোবল ও দেশপ্রেমের কারণে আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রায় অসম্ভব ও দুরূহ এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সমৃদ্ধির চাকাকে অধিকতর সচল রাখতে বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছেন। দেশ ও দেশের জনগণের জন্য তিনি সম্ভাব্য সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। তার সুনিপুন দক্ষতা জন্যেই একের পর এক মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
পদ্মাসেতু চালু হলে সামগ্রিক অর্থনীতি গতিশীল হবে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। এতে ঐঅঞ্চলের ব্যবসা—বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পন্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে।
ভারতের সাথে বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব অনেকাংশে কমে যাবে, যা দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
এডিবির পরিসংখ্যান বলছে, পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ সালে ২৪ হাজার যানবাহন চলবে, তার মধ্যে বাস চলবে আট হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে পাঁচ হাজারের বেশি। এডিবির পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টি। ২০৩০ সালে হবে ৩৬ হাজার ৭৮৫। ২০৪০ সালে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৮০৭টি। পাশাপাশি জাইকার সমীক্ষামতে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের এক দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে আঞ্চলিক জিডিপি বৃদ্ধি দাঁড়াবে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশে।
এছাড়া দক্ষিণবঙ্গে শিল্পায়নের গতি ব্যাপক বেড়ে যাবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অসামান্য অবকাঠামোগুলোর একটি। ধীরে ধীরে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই স্তরবিশিষ্ট পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এবং দক্ষিণ পশ্চিমের জনগণের অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে গ্রামীণ উন্নয়নশীল এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, জীবনমানের উন্নয়ন ও জ্ঞান—মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির বিকল্প নেই। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার।
বাংলাদেশ এখন আত্মবিশ্বাস ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করেছে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা বহুমুখী সেতু। যেখানে সড়ক ও রেল উভয় মাধ্যমেই সংযোগ স্থাপিত হবে এবং এর মাধ্যমে দেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর বিপ্লব সাধিত হবে। পদ্মা সেতুর নানা অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকেই এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল ও অধিকতর চাঙ্গা করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এই সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই নানা চড়াই—উতরাই পেরিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ অবশ্যই দেশের জন্য মর্যাদার ও গৌরবের।
উল্লেখ্য যে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের একমাত্র মেগা প্রকল্প নয়, এর আগেও এদেশে বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নতর। এই সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেনি। এটি আমাদের আত্মমর্যাদার জায়গাটিকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে।
যে দেশে সত্তরের দশকেও শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্যসীমার নিচে বাস করত, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল দেশ হিসেবে আমাদের অবস্থা ছিল তলাবিহীন ঝঁুড়ির মতো, সেই দেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু এবং এর সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করেছে, এটি গৌরবের ও মর্যাদার।
বিশ্ব বাংলাদেশকে যে চোখে দেখত, এখন সেই চোখে দেখার দিন ফুরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সক্ষমতার দেশ। প্রতিটি অঙ্গনে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করে চলেছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯৭৩—৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ ছিল হতদরিদ্র। আর বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্যতার হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৫ সালেও ছিল ২৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮৩০ মার্কিন ডলার। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের অবস্থা নাজুক। অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশ পেছনেই পড়ে আছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় বটে, কিন্তু যোগাযোগ সমস্যার কারণে দরিদ্র কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। তাই আমরা বলতে পারি, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে যেমন ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে কৃষকরা আরও অধিক হারে উৎপাদন করবেন।
পাশাপাশি এ সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন শিল্প—কলকারখানা গড়ে উঠবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখবে। দক্ষিণাঞ্চলে অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে থাকে। সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ষাটগম্বুজ মসজিদের মতো অনেক পর্যটন কেন্দ্র ওই অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার অনুপযোগিতার কারণে মানুষের কাছে অনাগ্রহের বিষয় ছিল। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়বে। ফলে পর্যটক শিল্প থেকে সরকার প্রচুর অর্থ আয় করতে সক্ষম হবে। এছাড়া পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আরও বেশি গতি এনে দিবে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের অনাগত স্বপ্ন পূরণে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় মনোবল ও সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতু নিতান্তই একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু নয়। বিশ্বের সেরা প্রকৌশলবিদ্যা আর প্রযুক্তিতে নির্মিত দ্বি—স্তরের এ দৃষ্টিনন্দন সেতুটি একটি দেশের জনগণের ভালোবাসা ও আবেগের নাম।
পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তার সততা, দেশপ্রেম, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও আত্ম মর্যাদার সাক্ষী হয়ে খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু যুগ—যুগান্তর। পদ্মাসেতু চালু হলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে স্থানান্তর করতে সুবিধা হবে। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, শিল্প ও ব্যবসার প্রসার হবে। এ জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যতার সূচক হ্রাস পাবে। মানুষের আয় রোজগার বাড়বে। পদ্মা সেতুর উভয় পাড়ে নানা স্থাপনা গড়ে উঠবে। শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে।
যার ফলে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হবে। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপনে দেশে—বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার দৃষ্টান্তস্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভালো কিছু করতে পারে এবং বাংলাদেশ এখন একটি সক্ষম দেশ—এটা প্রমাণিত হয়েছে।
শত বাধা—বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত—ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক—স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৯৬—২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল: ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং—সম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তিনিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে একাধারে প্রায় ১৩ বছর যাবত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন গুলির মধ্যে রয়েছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২০০০০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, ৮.২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৮ কোটি মানুষকে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, ভারতের সাথে স্থলসীমা (ছিটমহল) সমস্যা সমাধান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্তসকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপ ন, দারিদে্র্যর হার ৩৮.৪ থেকে ২১.৩ শতাংশে হ্রাস, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল নির্মাণ, প্রায় সকল মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীতকরণ, রেলপথে ব্যাপক উন্নয়ন, আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—১ এর সফল উৎক্ষেপন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার, জঙ্গী দমন ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে গত ১৩ বছরে পর্যায়ক্রমে সরকার এক একটি সমস্যার সমাধান করেই চলেছে। ২০০৯ সালে শুরুতেই সরকারকে বিপদে ফেলানোর জন্যে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। সরকারের বয়স যখন মাত্র দুই মাস তখনই ঘটলো পিলখানার বিডিআর হত্যাকাণ্ড। জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা গতিশীল নেতৃত্বে প্রতিটি সংকটে সরকার উপযুক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছে ও যথাযথভাবে সমস্যার সমাধান করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিশ্ব নেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাকে মাদার অব হিউমিনিটি বা মানবতার মা হিসেবে উপাধি প্রদান করা হয়েছে।
শান্তি, মানবতা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ইতোমধ্যে ৪০টি আন্তর্জাতিক মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সুখী—সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে জাঁতি তা প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতীক, মানবতার ধারক—বাহক, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যে অশেষ শুভ কামনা। তার সর্বোচ্চ সফলতা কামনা করছি। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)