ফতুল্লা প্রতিনিধিঃ
দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের মানুষের শান্তি ভঙ্গ হয়ে ক্রমেই অশান্তিতে রূপান্তিত হয়েছে আর এর মূল কারণ হিসেবেই গোগনগরবাসী দেখছে বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ও নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে।
ইতিপূর্বে নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে ছোট খাটো ঝামেলা (হামলা, ভাংচুর ও মামলা) হলেও হঠাৎ করে চাঁদাবাজি, জমি জবর দখল, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন তা ক্রমশ বড় আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৫ জুন ডকইয়ার্ডের ঘটনাকে ঘিরেই এসকল ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এলাকাবাসীদের মাধ্যমে জানা যায়, ১/২দিন পরপর গোগনগর ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ সহ মারামারি ও হত্যার মত ঘটনা ঘটছে। আর ঘটনাগুলো ঘটিয়ে চলছে ফজর আলীর ঘনিষ্ঠ লোকেরা। যাদেরকে নির্বাচনের সময় ফজর আলীর পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়। এখন নিজেদের মধ্যেই শক্তি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলছে শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এর একটাই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একপক্ষ। গোগনগরের মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা। জমি, ড্রেজার ও ওয়েস্টেজ মালামাল বিক্রির জন্য কাজ অন্য পক্ষ এর বিরুদ্ধে অবস্থান করায় চলছে এ ঘটনা।
জানা যায়, গত ৫ জুন সকালে এম এ বেপারী ডকইয়ার্ডের অবৈধ্যভাবে প্রবেশ করে গোগনগরের বিচ্ছু বাহিনীর আনছার (৩৮)পিতা- মোঃ আব্দুল কাদির, রবিন (৩৭) ও রুবেল(৩২) উভয়ই পিতা মৃত আব্দুল কাদির সহ অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জন ডকইয়ার্ডে থাকা একটি জাহাজ কেটে ফেলছে। এতে ডকইয়ার্ডের মালিক মোঃ আল ইসলাম বাদা দিলে তাকে মেরে গুরুতর আহত করে ডকইয়ার্ডের অফিসে আটকিয়ে রাখে। পরে সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দিয়ে সাহায্য চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ আল ইসলামকে উদ্বার করে।
পুলিশের খবর টের পেয়ে উপরিক্ত বিচ্ছু বাহিনীরা পালিয়ে যায় কিন্তু পুলিশ চলে যাবার পর বিচ্ছু বাহিনী গ্রুপ আবার আসে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করা হয় বিচ্ছু বাহিনীর প্রধান রুবেল আহমেদ, রবিন ও আনছার সহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে। রাতে পুনরায় আবারো জাহাজের কাটা অংশ কেটে নিয়ে যায় রুবেল মেম্বার, আনছার ও রবিন সহ অজ্ঞাতরা কয়েক ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় ডকইয়ার্ডের দারোয়ান আলাল। কিন্তু থানার পুলিশের ভূমিকা নিরব থাকায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর ডকইয়ার্ডের মালিক আল ইসলাম একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করে।
গত জুনের ৫ তারিখ ডকইয়ার্ডে অনাধিকার প্রবেশ করে জাহাজ কেটে নিয়ে যাওয়া ও মালিককে মারধরের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগ হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছি কিনা? এবিষয়ে জানতে চাইলে ডকইয়ার্ডের মালিক আল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ব্যর্থ। তাদের কথা কি বলবো তারা কোন সহযোগিতা করেনি আমাকে।
নতুন করে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানায়, যা ক্ষতি করার করে ফেলেছে তারা। এখন আর ক্ষতি করার কি বাকি আছে?
অন্যদিকে ডকইয়ার্ডের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গত ২০ জুন গোগনগর ইউনিয়নে রাতে ঘটে পরপর তিনটি হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সৈয়দপুর এলাকার কাটপট্টির লোহার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী সাইজউদ্দিনের কাছে গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনীর রুবেল, আনছার ও রবিন সহ অজ্ঞাত অনেকেই এসে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাইজউদ্দিনের সাথে তারা তর্কবিতর্ক জড়িয়ে যান। একপর্যায় বিচ্ছু বাহিনীর লোকেরা সাইজউদ্দিনকে অটো দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী ডাক চিৎকারে অটো থেকে সাইজউদ্দিনকে উদ্ধার করে বিচ্ছু বাহিনীকে গণপিটুনি দেয় এতে বিচ্ছু বাহিনীর রবিন আহত হয়। সাইজউদ্দিনকে এলাকা থেকে ছাড়া করার জন্য এবং কিভাবে ব্যবসা করে দেখে নিয়ে যাবার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
সাইজউদ্দিনের উপর হামলার ৩০ মিনিট পরপরই চাঁন বাদশা নামে ডকইয়ার্ডের এক ব্যবসায়ীর উপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে চাঁন বাদশকে রাম দা ও লোহার রড দিয়েছি গুরুতর আহত করা হয়। এতে চাঁন বাদশার দুই পা ভেঙে যায়, হাত, মুখ ও নাকে কাটা জখম হয় এবং তার ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি বাইক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। পরে চাঁন বাদশার স্ত্রী হাসি বেগম (৪০) বাদী হয়ে মোঃ আনসার (৩৫), রুবেল মেম্বার (৩২), শাওন (২৮), হিমু (২৬), ইমরান (৩৪), মাসুদ (৩৮) ও হাবিব (৩৭) সহ মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, উক্ত আসামীদের সাথে চর সৈয়দপুরস্থ হাজী আহাম্মদ আলী ডকইয়ার্ড ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁন বাদশার সাথে রুবেল মেম্বার, আনছার ও রবিনদের সাথে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে গত ২০ জুন রাত সাড়ে ৮টায় মামলার উপরোক্ত আসামীরা চাঁন বাদশার উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে দুই পা ভেঙে ফেলা এবং চাকু দিয়ে পিঠে কুপানো হয়। এতে হাতে, নাকে ও মুখে রক্তাক্ত জখম এবং দুই পা ভেঙে যায়।
চাঁন বাদশার উপর হামলার বিষয়ে জানতে তার স্ত্রী ও মামলার বাদী হাসি বেগমকের কাছে জানতে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানায়, ২০ জুন রাত আমাকে ব্যাংক দিয়ে আমার বাবার বাসায় দিয়ে যাবার সময় আমার স্বামীর উপর এইভাবে নির্মমভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালায়। আপনেরা জানেন যে আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ ডকইয়ার্ড ব্যবসা করছে তার সাথে রুবেল মেম্বার, রবিন ও আনছারের সাথে বিরোধ। আমার স্বামী সৈয়দপুর ব্রীজের পাশ দিয়ে যাবার সময় রুবেল মেম্বাররা সহ সবাই হামলা চালায়। আমার স্বামীর চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এসে তাকে উদ্ধার করে পরে আমরা খবর পেয়ে ছুটে গেছি। এই নিয়ে থানায় মামলাও হয়েছে। দৌলত মেম্বারকে মারার আগে আমার পুরান বাসায় আমাদের ভয় দেখানোর জন্য দুইটা বোম ফালানো হয়। আমার ভাড়াটেরা ভয় পেয়ে আমাদের এই বাসায় চলে আসে। আমার স্বামীকে তো মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলোই। তারা মনে করছিলো আমরা বাসা ভাড়া দিয়ে চলি, যদি ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়াটিয়াদের তাড়িয়ে দেওয়া যায়; তাহলে আমরা চলতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, আমার ৫ বছর, ১৩ বছর ও ১৭ বছরের তিনটা সন্তান আছে। তারা এখন বাসা থেকে বের হতেই ভয় পায়। আমার বড় ছেলে সাইদুর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। সে বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে যদি তাকেও মেরে ফেলে। এলাকার মানুষরাও আমাদের সাবধান হয়ে চলতে বলছে। আমি আমার নিরপরাধ স্বামীর উপর হামলার প্রতিবাদে আমি বিচার চাই। আমার স্বামীকে মেরে অসচল করে দিয়েছে। সে এখন বিছানা থেকেও উঠতে পারছে না। আর আমার সন্তাানদের নিয়ে কিভাবে চলবো। আমি আমার স্বামীর উপর যারা হামলাকারীদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার এসপি ডিসির কাছে আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যকারীদের বিচার চাই।
পুলিশ এই পর্যন্ত কোন মামলার ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা এবং আসামীকে গ্রেফতার করেছে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে ৭ তারিখে ফোন দিয়ে বলেছে আমার স্বামীর হামলাকারীদের গ্রেফতার করেছে আমি যেনো থানায় যাই। কিন্তু আমার স্বামীতো বিছায় তাই তাকে রেখে কোথাও যেতে পারি না। বিছানায় আমার স্বামী এখন প্রসাব-পায়খানা করে। তাকে রেখে কোথাও যেতে পারি না। (চলবে…)