দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাঁদেন রোহিঙ্গাদের জন্য। আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ে আমরা সিনেমার অনেক নায়ক নায়িকাদের কথা শুনেছি অনেক আবেগময় শুটিংয়ের সময় তাদের কাঁদতে হয় কিন্তু কান্না বের হয় না। তারা চোখে গ্লিসারিন দেয়। প্রধানমন্ত্রী আপনার মান্টিব্যাগেও মনে হয় গ্লিসারিন থাকে। আপনার প্রয়োজনে আপনে সেটা ব্যবহার করেন। আপনার চোখ দিয়ে পানি বের হয় কিন্তু শাওনের জন্য পানি বের হয় না। মুন্সিগঞ্জের শাওন, ভোলার আব্দুর রহিম ও নূরুলের জন্য চোখ দিয়ে পানি বের হয় না।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় চাষাড়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় মিনারে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাওন প্রধান সহ মুন্সীগঞ্জ এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মী হত্যা ও আহত করা এবং জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশটি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী। বিশেষ অতিথি ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী প্রশাসন মনে করেছে একজন শাওনের মত কর্মীকে হত্যা করলে বিএনপি ভয় পাবে কিন্তু আওয়ামী প্রশাসন জানে না, শেখ হাসিনাও জানে না। তারা একটা ঈর্ষান্বিত প্রতিশোধ নিচ্ছে। এই বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, তাঁতী দল ও শ্রমিক দল আমন ধানের মত মাথা উঁচু করে থাকে তারা পুলিশের গুলিতেও ভয় পায় না। সুতরাং যারা ভীতু ও অন্যায়কারী তারা অন্যের মিছিল মিটিংয়ে হামলা করে। আমাদের কারো কাছে কোন অস্ত্র নেই, আমরা কিছু নিয়ে আসিনি আমরা আমাদের হাত ও মুখের কণ্ঠস্বর নিয়ে এসেছি। একেরপর এক গুলি করে মারছেন আজকে আপনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যুবদল কর্মী শাওনকে গুলি করে হত্যা করে মারলেন গত পরশু মুন্সিগঞ্জের আরেক জনকে গুলি করে মারলেন সেও যুবদল কর্মী। ২৪ ঘন্টা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর্তনাদ করতে করতে তার জীবন চলে গেলো। এটাও পুলিশের টেকনিক।
তিনি আরো বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- ‘শাওন আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক তার চাচা আওয়ামী লীগ করে।’ আমি বলি প্রধানমন্ত্রীর বিয়াইয়ের বাপ তো মুসলিমগীগ করতেন এখন কি প্রধানমন্ত্রী মুসলিম লীগ করেন। ওবায়দুল কাদেরের ভাই বলেছে আমার বাবা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তাহলে ওবায়দুল কাদেরও স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। শাওনের চাচা যদি আওয়ামী লীগ করে তাহলে শাওন কি বিএনপি যুবদল করতে পারে না? ওই দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যুবদলের সামনের সারিতে শাওন দাঁড়িয়ে ছিলো। ‘ও সাহসী ও বাহাদুর।’ ও সামনের সাড়িতে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশের গুলি বুকে নিয়েছে। অথচ আপনে উল্টাপাল্টা কথা বলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন মানুষ কি বুঝে না। অথচ আজকে শাওনের বড় ভাই দীপ্তকন্ঠে বক্তব্য দিলেন। আপনে প্রধানমন্ত্রী ও আপনার মন্ত্রীরা আগুন নিয়ে খেলছেন। সুতরাং আপনেরা আগুন নিয়ে খেলতে যেয়েন না। এর পরিনীতি সরকারের জন্য সুখকর হবে বলে আমরা মনে করি না।
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিলো জ্বালানী তেলই শুধু না গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে। শুধু ঢাকায় না নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ বাড়িতে গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। এই বিদ্যুৎ, ডিজেল দিয়ে কৃষি কাজ, জ্বালানি কাজ, শিল্প কাজে চলে আবার গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ চলে। অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান হয় মৃত্যু না হয় মৃত্যুর পর্যায় চলে এসেছে। আর এর প্রতিবাদ করতে গিয়েই বিএনপি মাসব্যাপী কর্মসূচি করছে আর এটা তো জনস্বার্থের ও জনগনের কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে আঘাত করছেন, গুলি চালাচ্ছেন। আর আপনে জাতিসংঘে গিয়ে পানি ফেলেন। আপনার এই ভ-ামি বাংলাদেশের মানুষ বুঝে ফেলেছে। আপনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন, নির্বাচন করার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, মিছিল মিটিংয়ের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। বিএনপি মিছিল মিটিং করলে আপনে গুলি চালান। আপনে একটা মাসের মধ্যে চারটা প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন বিএনপি, যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দলের। তারপরও আপনেরা চোখের পানি ফেলেন, আপনেরা এত নির্লজ্জ এত বেহায়া। আপনেরা বৈধ সরকার নেই বলেই বন্দুক ব্যবহার করছেন। ওই বন্দুকের নল যে ঘুরে যেতে পারে আপনেরা টের পাচ্ছেন না। ওই বন্দুকের নল সব সময় যারা অন্যায় করে অবিচার করে তাদের দিকে ঘুরে যায়।
শাওন হত্যার বিচারের কথা উল্লেখ করে রিজভী আরো বলেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনকে বলবো এখন আইন ব্যবস্থা তাদের মুঠোই চলে গেছে। মিথ্যা কখনো চাপা থাকে না। শাওনকে তারা হত্যা করেছে তা প্রমাণিত হয়েছে পাবলিক মিডিয়ায়। পুলিশের এক সদস্য চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে তাতে শাওন মারা গেছে। আপনার নারায়ণগঞ্জের পুলিশের প্রধান বললেন এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আমরা তাদেরকে বলেছি। তার কয়েকদিন পর সেই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হলো কেনো? সরকারের লেজুর ভিত্তি কাজ করবেন না। এই অবৈধ সরকার না আছে তাদের জনসম্মতি। এরা ভোট ডাকাতি করেছে। দিনের ভোট রাতে করেছে। এত গুম, খুন করেছে তাদের প্রত্যেকটা অপরাধই ফৌজদারি অপরাধ। তাদের একদিন বিচার হবে জনগনের আদালতে। আমি শাওনের হত্যার আবারো প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলছি শাওনের হত্যার বিচার এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতেই হবে।
এছাড়াও বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, সোনারগাঁ বিএনপির নেতা মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, যুবদল কর্মী শহীদ শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক জাহেদ হাসান রোজেল, রূপগঞ্জ বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ন, সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম টিটো, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, এড. হুমায়ন কবির, রহিমা শরীফ মায়া, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, তাঁতী দলের সভাপতি লুৎফর মাহমুদ, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মন্টু মিয়া।