ফতুল্লা প্রতিনিধি
দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে অনুমোদনবীহিন ফার্মেসী। শহরের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ফার্মেসীগুলোতে কিছুদিন চাকুরির সুবাধে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেন নাম সর্বস্ব ফার্মেসী। ড্রাগিষ্টের কোন ধরনের অনুমতি ব্যতিত অবৈধ এ ফার্মেসীগুলো থেকে ঔষধ সরবরাহ করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্থাণীয় এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ, অনুমোদনহীন ও মানহীন ভুয়া কোম্পানির ঔষুধে সয়লাব হয়ে গেছে কুতুবপুরের বিভিন্ন এলাকা। এমন নানা অভিযোগ নিয়েই চলছে কুতুবপুরের অধিকাংশ ফার্মেসি। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় ড্রাগ লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ কুতুবপুরের বিভিন্ন অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়োটিকসহ সকল ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ফার্মেসী মালিকরা। ফলে মানুষের জীবন রয়েছে মারাত্মক মৃত্যু ঝুঁকিতে।
নারায়ণগঞ্জ ওষধ প্রশাসনের সূত্রমতে, সরকারী ড্রাগ লাইসেন্সধারী ফার্মেসি আছে ৩ হাজার ৩১২টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১০৩টি, সোঁনারগা উপজেলায় ৩৪৮টি, আড়াইহাজার উপজেলায় ১৩৭টি, বন্দর উপজেলায় ৩৫৩টি এবং রূপগঞ্জ উপজেলায় ৩৭১টি ফার্মেসি রয়েছে। এর বাহিরে বিনা লাইসেন্স ও শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীন ফার্মেসিস্ট ছাড়াই কয়েক হাজার ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। লাইসেন্সধারী বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলোর ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও এক তৃতীংশ লাইসেন্স পুনরায় নবায়ন করা হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রোগীদের মানসম্পন্ন ঔষুধ পাওয়ার এবং ঔষুধের যৌক্তিক ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে ফার্মেসি এবং ঔষুধের দোকান স্থাপন ও পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা রয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মডেল ফার্মেসিতে (লেভেল-১) কমপক্ষে একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট থাকবেন, তাকে সাহায্য করবেন বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট। মডেল মেডিসিন শপে (লেভেল-২) থাকবেন কমপক্ষে ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট। বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট তাকে সহায়তা করবেন।
প্রশিক্ষণ নেই এমন কেউ ফার্মেসি বা ঔষুধের দোকানে ঔষুধ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না, এমন কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। ঔষধ প্রশাসনের কড়া নির্দেশনা থাকলেও সরজমিনে কুতুবপুরের একাধিক ফার্মেসিতে ঘুরে ভিন্ন এক চিত্র দেখা যায়, ডিগ্রিধারী, ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে শত শত ফার্মেসি। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এসব ফার্মেসি থেকে বিক্রি হচ্ছে ঔষুধ। অধিকাংশ ফার্মেসিগুলোতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ছারপত্র ও নেই। এছাড়া বড় বড় ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও সেখানে নেই দক্ষ ফার্মাসিস্ট। কুতুবপুর ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোতে এই চিত্র দেখা যায়।
লাইসেন্সবিহীন এসব ফার্মেসি থেকে নিন্ম আয়ের মানুষের চিকিৎসা গ্রহণের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কোনো ধরনের কেমিস্ট বা ফার্মাসিস্ট না থাকলেও সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব ফার্মেসিতে প্রায়ই ছোট ছোট অপারেশনও করানো হয়। একাধিক ফার্মাসিস্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মফস্বলের ফার্মেসিগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে তদারকির কোন ভয় নেই। যে যার যার ইচ্ছেমতো ঔষধের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
শহরে মাঝে মধ্যে পরিদর্শন ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা হলেও মোফাস্বলে তদারকির কার্যকর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক শাহজাহান খান এ বিষয়ে বলেন, আমরা প্রায়ই প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানিয়েছি লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এই অভিযানের পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
মানুষের মাঝে ভয় নাই। আমরা একাধিক বার এই বিষয়ে জেলা ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। বিভিন্ন সভায় বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। আমরা চাই অনুমোদনহীন নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিন্ম মানের ঔষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে যেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসি প্রসঙ্গে বলেন, ড্রাগ লাইসেন্স ও স্নাতক ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট কিংবা ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসি পরিচালনা নিষিদ্ধ। বিধি-নিষেধের মেনেই ফার্মেসি পরিচালনা করতে হবে।