31 C
Nārāyanganj
সোমবার, মে ২৯, ২০২৩

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে মশারি ক্রয়ে ছুটছে মানুষ!

দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: শীত আসলেই মশার উপদ্রব শুরু হয়। বৃদ্ধি পায় মশার বংশ। অন্যান্য মশার তুলনায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বৃদ্ধির ফলে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবছর ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি। তবু মানুষের মধ্যে থাকে ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচতে মশারি টানানোতে অনীহা। তবে এ বছর শীতের প্রকোপ শুরু হবার আগেই এবং ডেঙ্গু রোগের হাত থেকে বাঁচতে এখন মানুষ ছুটছে মশারি ক্রয়ে।

মশারি টানিয়ে শুতে চান না এমন লোকের অভাব নেই। এমন অনেকেই আছেন যারা মশার উপদ্রব বাড়লেও শীতের মৌসুম ছাড়া মশারি টাঙ্গানোতে কোন আগ্রহ নেই। গত কয়েক দিনে দেশে যেহারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে তাতেই আতঙ্কে মশারির জন্য ছুটছে মানুষ।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশার উপদ্রবের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় মানুষ ছুটে আসছে মশারি ক্রয়ে। অন্য বছরের তুলনায় এই শীতে মশারির চাহিদা অধিক হারে বাড়তে পারে বলে আশা তাদের।

সারাদেশে গত ১৯ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২০ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন আরও ৬৪৬ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭৮ জনে।

আমাদের দেশে অনেক মানুষই মশারি টানাতে চান না। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তাই মানুষ এখন ছুটছে মশারির ক্রয়ে।

গত দুই দিনে আগের তুলনায় বেশ কিছু মশারি বিক্রি খুশি মশারির পাইকারি বিক্রেতা আহমেদ আলী। তিনি জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপের প্রথম ধাপে মশারি ক্রয় কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে মশারি বেচাকেনা ভালোই চলছে।

কালিবাজার এলাকায় আহমেদ বেডিং স্টোরে গেলে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মশারির দিকে চোখ পড়ে। দোকান মালিক মোহাম্মদ আহাম্মদ আলী বলেন, অনেক মানুষই মশারি টানাতে চান না। এখন তো ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তারপরও মশারির বিক্রি কম। গত দুই দিনে কিছু মশারি বিক্রি হয়েছে।

সাজিয়ে রাখা হয়েছে মশারি আহাম্মদের দোকান থেকে এগিয়ে জাহাঙ্গীরের দোকানে গিয়েও দেখা যায়, মশারি সাজিয়ে রাখা। দোকানের কর্মচারীরা জানান, মশা এত বাড়ছে, এত ডেঙ্গু রোগী, তবুও মানুষের হুঁশ নেই। মশারি ছাড়াই ঘুমান। দিন দশেকের মধ্যে পাঁচটার মতো বিক্রি হয়েছে। এইতো শীত চলে এসেছে। এখন মশারি বিক্রি বাড়তে পারে বলে মনে করছি।

মশারি টানাতে বিরক্ত লাগে। বাতাস পাওয়া যায় না, গরমের কারণে ঘুম আসে না। আমার এক রুমমেটের ডেঙ্গু হয়েছে। সেই ভয়ে এখনও মশারি কিনতে এলাম সাইফুদ্দিন নামে এক গার্মেন্টসকর্মী জানান এ কথা।

মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে, তবুও মশারি টানাবে না। সবাই যদি মশারি টানাত, আমরা বিক্রি করে কুলাতে পারতাম না। প্রতিদিন গড়ে এখন এক থেকে দুটির বেশি মশারি বিক্রি করতে পারছি না। দেলোয়ার হোসেন নামে সোনার বাংলা মার্কেটের এক মালিক এ কথা বলেন।

দুই বেলা পেট ভরে ভাত খেতে হিমশিম খাচ্ছি সেখানে মশারি ক্রয় করা আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচতে এসেছি মশারি ক্রয় করতে নাতীর সাথে আসা বৃদ্ধ কামাল জানান।

ওই দোকানে মশারি কিনতে আসেন এক বৃদ্ধা কামাল। তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তিনি নগরীর আমলাপাড়ায় থাকেন ছেলে, ছেলে বউ ও নাতীর সাথে। সংসারে এক মাত্র উপার্জন ব্যক্তি ছেলে। তার উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার, নাতীর পড়ালেখা, নিজের ওষুধ ক্রয় সহ বাসা ভাড়া চলে। এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে যেখানে মানুষ দুইবেলা দুমুঠো ভাত খেতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে মশারি ক্রয় করা আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচতে জমানো সঞ্চয় দিয়ে এসেছি মশারি ক্রয় করতে কারণ আমার প্রতিবেশী একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত।

নগরীর কালিবাজার, ফেন্ডস মার্কেট, স্বর্ণপট্টি পাইকারি দোকান ও ফতুল্লার মশারির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১৫ ধরনের মশারি পাওয়া যায়। এসব মশারি ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x