দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ফতুল্লা মডেল থানার অন্তর্গত কুতুবপুর, এনায়েতনগর, ফতুল্লা, কাশিপুর এবং বক্তাবলী প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে কিশোর অপরাধ এবং মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি। থানা পুলিশ অনেকটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন তা রোধে এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।
নিয়মিত পুলিশের টহল ব্যবস্থাপনা না থাকার দরুণ প্রতিটি ইউপির অলিগলিতে মাদক ও কিশোর সংক্রান্ত অপরাধগুলো বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আর এ সকল অপরাধগুলোর পেছনে কাজ করছে রাজনৈতিক পরিচয়। থানার অন্তর্গত কুতুবপুরে মাদক ও ভাঙ্গারীর ব্যবসার অন্তরালে ঘটছে বিভিন্ন অপরাধ। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা যেন এখন ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে উক্ত ইউপির প্রতিটি অলিগলিতে।
পাশাপাশি পাগলা মেরি এন্ডারসন এলাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ভাঙ্গারীর দোকান। যেখানে কুতুবপুরের সর্বত্র থেকে লোহা, সিমেন্টসহ বাসা-বাড়িতে ছিচকে চোরের দল চুরি করে আনা মুল্যবান জিনিসগুলো উক্ত দোকানগুলোতে প্রকাশ্যেই কেনাবেচা করছে। যা রোধে পুলিশের কোন প্রচেষ্টা নেই বললেই জানান স্থানীয়রা।
আবার উক্ত ভাঙ্গারীর দোকানগুলো পরিচালনা করেন পুলিশের কথিত সোর্সরা। যারা নিয়মিতভাবে পুলিশ ও বিশেষ পেশার কর্তাদেরকে মাসোহারা দিয়ে চলছে তাদের কৃত অপরাধ যা নিয়ে ইতিপুর্বে স্থানীয় গণমাধ্যমেই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বক্তাবলীও পিছিয়ে নেই বিভিন্ন অপরাধীদের অপরাধ জগত থেকে। ইউপি আকবরনগর পুরো নারায়ণগঞ্জে একটি পরিচিত অপরাধের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে ফতুল্লা মডেল থানায় বিভিন্ন অপরাধে ৭১টি মামলা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে তা জানা যায়। অক্টোবর মাসে মোট দায়ের করা মামলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫টি রয়েছে চুরি মামলা আর মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ২২টি।
এছাড়াও অস্ত্র আইনে ১টি, নারী নির্যাতনের ১০টি সহ মোট ৭১টি মামলা। তবে গত এক মাসে ফতুল্লা মডেল থানায় কি পরিমানে মাদক উদ্ধার,কয়টি ওয়ারেন্ট তামিল এবং কতজন দাগী অপরাধীকে আটক করেছেন তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানে।
গত অক্টোবরে জাকির হোসেন নামে এক বৃদ্ধকে প্রতিপক্ষ সামেদ হাজীর বাহিনীর লোকজন অপহরণ করেন। বৃদ্ধ জাকিরকে উদ্ধারের জন্য তার পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ তাকে জীবিত উদ্ধারে ব্যর্থ হয় এবং প্রায় একমাস পরে বন্দরের কলাগাছিয়া এলাকা থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
কাশিপুর ইউপির সবচেয়ে আতংকের মাঝে বসবাস করছে ৭নং ওয়ার্ডবাসী। একমাত্র রাজু প্রধান ও বাহিনীর সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে থানা পুলিশের ও স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপকর্মের ডন হিসেবে পরিচিত রাজু প্রধান বাহিনীর বিরুদ্ধে। থানা পুলিশ রাজু প্রধান ব্যতিত তার বাহিনীর প্রায় ১৫জনকে ইতিমধ্যে আটক করেছেন।
ফতুল্লার কুতুবপুরের চিতাশাল, নন্দলালপুর, প্রাপ্তি সিটি, কাশিপুরের বাশমুলি, ফতুল্লা রেলষ্টেশন, দাপা, ইদ্রাকপুর, মাসদাইর, গাবতলী, মাসদাইর শ্মশান ও ইসদাইর রেললাইন যেন অনেকটা মাদকের মরুভুমি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। উক্ত এলাকাগুলো প্রতিটি অলিগলিতে হাত বাড়ালেই মাদকের ছোয়া পাওয়া যায়।
এদিকে টহল পুলিশের নজরদারী অনেকাংশে কমে যাওয়ার ফলে প্রতিদিনই ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি অলিগলি অপরাধচক্র বেড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় চলাচলকারী ইজিবাইক ও মিশুক চোরচক্ররা অনেকটাই বেপরোয়া। শুক্রবারও পিলকুনি থেকে অজ্ঞাত একব্যক্তি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন পত্রিকায় ছবি দেখে তার পরিবারের লোকজন নিহত সেই অজ্ঞাতকে সনাক্ত করে স্বজনরা। নিহত ব্যক্তিটি হলেন হাসান। যিনি পেশায় ইজিবাইক চালক। ইতিপুর্বে যে কয়টি মিশুক বা ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে হত্যাকান্ড ঘটেছে তার বেশীরভাগই উক্ত এলাকাতে। ফলে পুলিশ জেনেও যেন দ্বায়িত্ব অবহেলা করছেন অভিমত স্থানীয়দের।
এ সমস্ত এলাকায় বসবাসকারীদের দাবী, পুর্বে থানা পুলিশের টহল টিমটি কিছুক্ষন পর পরই টহল দিতো। এখন সপ্তাহে ২/৩দিন দেখা পাওয়া যায় বাকী দিনগুলোতে পাওয়া যায়না। এ সকল এলাকায় কিশোর অপরাধীরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকাতে মোহড়া দিয়ে তাদের শক্তির প্রচার করছে আবার মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করছে। তাদেরকে বাধা দেয়ার কোন সাহস পায়না বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো।
আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বাসিন্দা জানান, অনেক সময় থানা পুলিশের সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে চা-পানে আড্ডা দেয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদেরকে পুলিশের বন্ধু ভেবে তাদের অপরাধযজ্ঞ চালায় অনায়াসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাসদাইরের কয়েকজন জানান, পূর্বে থানায় নিয়মিতভাবে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হতো। সেখানে গিয়ে আমরা এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথাগুলো পুলিশকে বলতে পারতাম। তারা আমাদের কথাগুলো আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধান করে দিতেন। এখন তা হয়না।
শাসনগাঁ এলাকায় বসবাসকারী গার্মেন্টসকর্মী শাহিদা জানান, আমরা রাতের বেলায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হই বখাটেদের কারণে। আবার মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন পেয়ে সেই নিয়ে নিয়ে অনেক কর্মীই বাসায় ফিরতে পারেনা। কারন পথিমধ্যে তারা চাকু দেখিয়ে ভীতি প্রদান করে আমাদের বেতনের টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়।
ফারিহা গার্মেন্টসকর্মী মুক্তা জানান, আমরা অনেকটা আতংকের মাঝেই কর্ম শেষে বাড়ি ফিরি। মাসদাইর বটতলা, আদর্শনগর ও বাশমুলি এলাকা থেকে আমরা বেশীরভাগ শ্রমিক আসি ফারিহায় কাজ করতে। সারা মাস পরিশ্রম করলেও অনেকের টাকা চলে যায় ছিনতাইকারীদের কাছে। প্রানের ভয়ে কিছুই বলতে পারিনা। তারা বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ফতুল্লা মডেল থানার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রিজাউল হক দিপু বলেন, আমরা ডিউটি করি বিধায় আপনারা শান্তি মতো ঘুমাতে পারেন। ডিউটি না করলে আপনারা শান্তি মতো ঘুমাতে পারতেন না। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক ঘটনা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কিংবা এলাকার সচেতন মানুষ কোন পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই পারেন। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা তাদের কর্তব্য।