দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোন প্রকার প্রতিকার নেই। সাধারণ জনগন আতঙ্কে দিনযাপন করছে।
জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চোরের দল উপজেলার আশপাশ ও পৌরসভার বিভিন্ন দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দপ্তরে চালের টিন কেটে ভেতরে প্রবেশ করে জরুরী মালামাল, নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ ব্যবহৃত কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ চোরের দলকে আটক করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যে কারণে চুরির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের প্রচারনায় সাড়া ফেলেছে চারদিকে।
উল্লেখ্য, গত ৫ই নভেম্বর শনিবার রাত ৯টায় থানা রোড সংলগ্ন পৌরসভার দৈলেরবাগ এলাকায় ভিডিও এডিটিং, জেরক্স কপি ও অনলাইনে সেবা সম্পৃক্ত একটি দোকান হতে ছাউনির টিন কেটে সংঘবদ্ধ চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায় ২২ নভেম্বর রাতে সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের চালের টিন কেটে ভিতরে প্রবেশ করে কম্পিউটার, স্টিলের আলমারি ভেঙ্গে নগদ টাকা, মূল্যবান মালামালসহ প্রায় কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ নির্ভিকায়। কোন প্রকার প্রতিকার পাওয়া যায় নাই। এর কিছু দিন আগে উপজেলা গেট সংলগ্ন দুটি কম্পিউটারের দোকানে টিনের চাল কেটে কম্পিউটার নগদ টাকা ও মালামাল চুরি করে দিনয়ে যায়। এভাবে বাসা বাড়িতে টিন কেটে প্রবেশ করেও মূল্যবান মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। থালা এলাকা ও উপজেলা এতো কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থ গ্রহন করা হয়নি। দৈলেরবাগ এলাকার ঘটনায় পরদিন সকালে দোকানের মালিক মোঃ রাসেল চুরির ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে তিনি জানান, দোকানের মালিক মোঃ রাসেল শুক্রবার আনুমানিক রাত ৯টায় নিত্যদিনের মতো তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে বাড়ী চলে যায়। পরদিন শনিবার দিবাগত রাতে সংঘবদ্ধ চোরের দর তার দোকানে ছাউনির টিন কেটে ভিতরে প্রবেশ করে দু’টি পিসি, চারটি হার্ডডিক্স দু’টি মনিটর, একটি এলইডি টিভিসহ আরো বেশ কিছু কম্পিউটার সম্পৃক্ত সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যায়। পরের দিন সকাল ৮টায় দোকানের মালিক মোঃ রাসেল দোকানে এসে দেখে তার দোকানের ছাউনির চাল কাটা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় পরে আছে। পরে চুরির বিষয়টি তার চোখে পড়ে। এ ঘটনার পর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি রাসেল প্রায় নিঃস্ব হয়ে পরে।
গত ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে একটি সংঘবদ্ধ চোরের দল সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের চালের টিন কেটে ভেতরে প্রবেশ করে স্টিলের আলমারি ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ৭৫ হাজার টাকা ও সাংবাদিকদের ব্যবহৃত কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকরা এসে দেখেন ক্লাবের টিনের চাল কাটা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো। পরে চুরির বিষয়টি চোখে পড়ে। এব্যাপারে সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমএম সালাউদ্দিন বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন শেষে রাত দশটার দিকে প্রেস ক্লাব বন্ধ করে বাসায় চলে যায়। পরে ভোর রাতে এ চুরি সংগঠিত হয়। চুরির ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত চুরি। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ঘটনার ঠিক বিশ দিন পর চুরি হওয়া দু’টি পিসির মধ্যে একটি পিসি উপজেলার সনমান্দি এলাকার নাহিদ নামে ১৬বছরের এক কিশোর মেরামত করতে আনে চৌরাস্তা এলাকার একটি কম্পিউটারের সার্ভিসিং এর দোকানে। ঘটনাচক্রে চুরি যাওয়া ঐ পিসি একই দোকান হতে বহুদিন পূর্বে ক্রয় করেছিলেন চুরির শিকার ব্যবসায়ি রাসেল, আন্দাজ করতে পেরে দোকান মালিক পিসিটিকে পর্যবেক্ষন করে নিশ্চিত হন।
পরে ঘটনাটি রাসেলকে তার মোবাইলে অবগত করা হলে সে চৌরাস্তার ঐ দোকানে নাহিদকে জিজ্ঞসাবাদে জানতে পারে সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া এলাকার মৃত হিরোন মিয়ার ছেলে গিয়াসউদ্দিন গেসু (৩২) নামের এক অটোচালকের নিকট হতে পনেরো হাজার (১৫ হাজার টাকায় এ কম্পিউটারটি ক্রয় করে নাহিদ। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী করে অভিযোগের তদন্তে থাকা সোনারগাঁ থানার সাব ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শনিবার ২৬ নভেম্বর রাত ৯ টায় চরভুলুয়া এলাকায় গিয়ে অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন গেসুকে চুরি যাওয়া অন্যান্য মালামালসহ জব্দ করে থানা হেফাজতে আটক রাখে। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পরদিন গতকাল রোববার সকালে আটককৃত চোরকে জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়।
সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, উপজেলার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অনেক চুরি সংগঠিত হয়েছে। আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অন্যান্য চোরকেও স্বনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।