দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র-৩ এ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে টিকা বাচ্চা থেকে শুরু করে নারীদের। চিকিৎসকদের দাবী স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাবদ নেওয়া হচ্ছে টাকা।
সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১ টায় নগরীর দেওভোগে অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এ অবস্থা।
ইপিআই সহ কিশোরী,বালিকাদের বিভিন্ন টিকা বিনামূল্যে দেবার কথা থাকলেও টিকা দিতে বাচ্চা থেকে নারী যারাই টিকা দিতে যাচ্ছে তাদের টিকার জন্য এবং টিকা কার্ডে জন্য নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র-৩ টাকা নেওয়া হচ্ছে এ অভিযোগ উঠে। অর্থ রশিদ ছাড়া সেবা গ্রহীতারা পাচ্ছে না কোন টিকা। এছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির এজেন্টের হয়রানি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিবেদক নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র সরেজমিনে তদন্তে যায়।
জানা যায়,ইপিআই টিকা প্রতিটি কেন্দ্র বিনামূল্য দেবার নির্দেশ থাকলেও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র,নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন,খানপুর হাসপাতাল,খানপুর জোড়া পানির টাংকি সংলগ্ন টিকাদান স্বাস্থ্য কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা,কাশিপুর ইউনিয়ন, ফতুল্লা ইউনিয়ন সহ নারায়ণগঞ্জ জেলার কম বেশি প্রতিটি টিকা কেন্দ্রেই ৫০-১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে টিকা ও কার্ডের জন্য।
বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকল ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোতে ভীড় থাকায় এবং চিকিৎসকদের বিভিন্ন পরীক্ষার বিড়ম্বনায় থেকে মুক্তি পেতে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসে রোগীরা সেবা ও মায়েরা বাচ্চাদের টিকা নিতে জানান আগত সেবাগ্রহীতারা। কিন্তু এখানেও কম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না মায়েদের ও বোনেদের। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের পরীক্ষার ভয় ও লম্বা লাইনের ভয়ে এখানে আসে তারা। এখানেও মানুষ কম হলেও চিকিৎসকবিহীন স্বাস্থ্যকর্মীরাই প্রত্যেক টিকা গ্রহনকারী সেবা গ্রহীতাদের দিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির ঔষুধ প্রেসক্রাইপ করে। এই প্রেসক্রাইপের জন্য আবার দিতে হচ্ছে রিসিভপশনে ৫০ টাকা করে। অর্থ প্রাপ্তির রশিদ না দেখালে পাচ্ছে না টিকা ।
দেওভোগ জোড়া পানির টাংকি থেকে বাচ্চাকে ইপিআই টিকা দিতে এসে জান্নাতের আম্মু জানান,বাসার কাছাকাছি হওয়ায় এখান থেকেই বাচ্চাকে টিকা দেওয়াই। সরকার তো বিনামূল্য বাচ্চাদের টিকা দিচ্ছে। কিন্তু এখানে বাচ্চাদের টিকা দিতে আসলেই বলে টিকা দেবার পর বাচ্চাকে এই সেই ঔষধ খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার গ্রোথ ভালো হবে তাড়াতাড়ি বাচ্চা বড় হবে। এমন কত কথা বলে প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দেয়। প্রথম বার যখন আসছি তখন ৫০ টাকা রাখছে ঔষধ লিখে দিছে তার জন্য আবার কার্ডের জন্য ও টিকার জন্যও টাকা রাখছে। এখন আসছি এখনো টাকা দিতে হয়েছে। আমি বলেছি আমার বাচ্চার কোন সমস্যা নাই তবুও ডাক্তার মহিলা আমাকে বলছে বাচ্চাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
একই অভিযোগ করেছেন একাধিক মায়েরা বাচ্চাকে টিকা দিতে এসে। তাদেরও একই অভিযোগ, বাচ্চাকে টিকা দিতে গেলেই যারা টিকা দিচ্ছে টিকাকর্মী তারা কোন কিছু না বুঝেই সুস্থ বাবুদের প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছে বিভিন্ন ঔষুদের এজন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয় তার জন্য। ৫০ টাকা দিয়েছি তার টিকেট না দেখালে টিকা দেয় না তারা বাচ্চাদের। আবার টিকা দেওয়া শেষ হলে তাদেরকেও আলাদা করে বকশিশ দিতে হয়। আমি মা আমি কি জানি না আমার বাচ্চা সুস্থ না অসুস্থ্য যারা টিকা দেয় তারা শুধু শুধুই আমাদের সন্তানকে কত গুলো ঔষুধ লিখে দেয়। এমনই অভিযোগ তুলেছেন টিকা দিতে আসা একাধিক মা।
টিটি টিকা দিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোরী জানান,আমি আজ প্রথম টিটি টিকা দিতে এসেছি। টিকা কর্মীকে আমার কোন সমস্যা নেই জানালাম উনি তারপরও আমাকে ওষুধ দিয়েছে। আবার বলছে এই ঔষুধ খেলে নাকি আমার রক্ত ভালো হবে। আমার পরিবারের সবাই অন্তঃ অন্তঃ তিন মাস পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। আমার তো কোন রক্তের সমস্যা নেই তারপরও উনি বলছে ওই ঔষুধ আমাকে খেতে হবে। উনি তো কোন চিকিৎসকও না। আমি তো চিন্তিত উনি ঠিক মত টিকা দিচ্ছেন কিনা। টিকা দিয়ে আসার সময় আবার বলছে উনাদের কিছু দেবার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্মী জানান, আসলে এখানে যারাই টিকা দিতে আসে তাদের সবাইকেই প্রেসক্রিপশন ধইরা দেওয়া হয় সুস্থ অসুস্থ্য যেই থাকুক। রিসিভপশনে গিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে টিকেট নিয়ে আসলে তারপর আমরা টিকা দেই। আমাদের যেই স্বল্প বেতনের চাকুরী তার জন্য আমাদের কাছে যারা টিকা দিতে আসে তাদের কাছ থেকে টাকা চাই। কেউ ৫০ কেউ ১০০ টাকা করে দেয়। যার খুশি হয় সে দিয়ে যায়। আমরা কাউকে জোর করি না। শুধু তো আর আমরাই টাকা নিচ্ছি না। সব জায়গাতেই টাকা নেয় টিকা দেবার সময় ও কার্ডের জন্য।
একইভাবে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির লোকদেরও চিকিৎসকদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে। কোন রোগী বের হলেই ছু মেরে প্রেসক্রিপশনটি দেখার কথা বলে নিয়ে ছবি তুলছেন অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে সেবাগ্রহীতারা বলেন,সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় এচিত্র এখন তো এখানেইও তাদের দেখা যায়। ডাক্তারের রুম থেকে বের হলেই প্রেসক্রিপশন টান দিয়ে নিয়ে ছবি তুলা শুরু করে। প্রেসক্রিপশন হচ্ছে একটা ব্যক্তিগত বিষয়। কোন অনুমতি ছাড়াই তারা জোর করে নিয়ে ছবি তুলে। এখানে বেশিরভাগ আমাদের নারীদেরই আসা হয় সেখানে অনেক মেয়েলি বিভিন্ন সমস্যা থাকে তাই আমরা নিরাপদ ভেবে এখানে আসি। এখানেও একই অবস্থা হাসপাতালোগুলোর মত। মেয়র বাসার সামনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ ধরনের বিপাকে পড়তে হচ্ছে মেয়েদের। মেয়রকে এবিষয়টি দেখার অনুরোধ থাকবে ঔষুধ কোম্পানির দালালদের থেকে আমাদের রক্ষার জন্য।
প্রতি টিকা বাবদ ৫০ টাকা নিচ্ছে এবং চিকিৎসক ছাড়াই কেন স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রেসক্রাইপ করে ঔষুধ দিচ্ছে এবিষয়ে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা.নাফিসা ইসলাম জানান,আমাদের এখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হয়। টিকা দেবার সময় জ্বর, ঠান্ডা, প্রেশার ঠিক আছে কিনা অর্থাৎ সুস্থ না অসুস্থ এটা আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা পরীক্ষা তার জন্য ফি বাবদ ৫০ টাকা নেওয়া হয়। কারন অনেকেই অসুস্থ্য হয়েও টিকা দিতে বাচ্চাদের নিয়ে আসে আবার টিকা দেবার পর জ্বর ও ব্যথা হয় তার জন্য ঔষুধ লিখে দেওয়া হয় নাপা, প্যারাসিটিমল সহ অন্যান্য ঔষুধ। টিকার জন্য বা কার্ডের জন্য কোন টাকা নেওয়া হয় না।
হাসপাতালের মত এখানে ঔষুধ কোম্পানির দালালদের দ্বারা সেবাগ্রহীতারা হয়রানির শিকারের বিষয়ে ডা.নাফিসা বলেন,ঔষুধ কোম্পানির লোকদের আমরা ১ টার পর আসতে বলছি। এই জন্য তাদের বারবার নির্দেশ করাও হয়েছে। প্রতিদিন তাদের তিন চারবার বেরও করে দেওয়া হয়।
টিকা প্রতি টাকা নেওয়া ও প্রত্যেককে প্রেসক্রিপশন করে ঔষুধ দেওয়া হচ্ছে কেনো? নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা.গোলাম মোর্শেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের এখানে শুধু মাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হয়। কোন টিকার জন্য না। বাচ্চাদের কোন সমস্যা হলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাচ্চার মায়েরা যদি বলে তাহলে। আর বাচ্চার অবস্থা যদি বেশি খারাপ থাকে তখন আমার কাছে পাঠায়। কোন সমস্যা না থাকলে তো কোন ঔষুধ প্রেসক্রাইপ করার কথা না। যদি এমন কেউ করে থাকে বা করছে সেটা আমি দেখবো।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী শহীদুল ইসলাম বলেন,যদি এরকম কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখবো। আপনেরা যেহেতু জানিয়েছেন এটা আমরা দেখবো।