দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও বন্দর উপজেলায় প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান এবং হালনাগাদে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
টাকার বিনিময়ে স্বামী থাকতে বিধবা আর সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে নতুন তালিকায় ভাতা প্রদান করা হলেও কাটা পড়েছে আগের দুই হাজারের বেশি ভাতাভোগীর নাম। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় মানুষগুলো। স্থানীয়দের অভিযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং কাজে লাগিয়ে প্রকৃতদের বদলে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে ভুয়া ভাতাভোগীরা।
এদিকে আজ ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার সবকটি উপজেলায় নানা কর্মসূচির প্রস্তুতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স (বিবিএস) পরিচালিত এক হাউজ হোল্ড জরিপ অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা হয়েছে।
এগুলো হলো-অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাকপ্রতিবন্ধী, বুদ্ধি এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক এবং অন্য প্রতিবন্ধিতা। আড়াইহাজার উপজেলার উচিতপুরা এলাকার ভুক্তভোগী একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানালেন, ঘুষ দিলে আবার ভাতার কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তাকে।
অন্যদিকে যারা এবার তালিকায় এসেছেন তাদের দাবি-টাকা দিয়েই তালিকায় নাম উঠিয়েছেন তারা। শর্ত মোতাবেক ভাতার অর্ধেক দিতে হয় সমাজসেবা অফিসে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনারগাঁ উপজেলার আমগাঁও এলাকার নতুন তালিকার একজন ভাতাভোগী বললেন, এক হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা রেখে দিয়েছে সমাজসেবা অফিস। একই এলাকার আরেকজন জানালেন, পুরোনো তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধীদের বাদ দিয়ে জনপ্রতি দুই হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়া এসব নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলার দুয়ারা এলাকার একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, তার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য দুই হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তার নাম আর তালিকাভুক্ত হয়নি। ভাতাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে।
তালিকায় নয়ছয় বন্ধ করা যায়নি। এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী না হয়েও অনেকে ভাতা পাচ্ছেন।
এসব তালিকা তৈরি করে থাকেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং তার সহকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তথ্যভান্ডারে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি বা তার নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করা হয়।
এ ব্যাপারে কথা হয় রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌসির সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। এমনটা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আড়াইহাজার উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বললেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের পে-রোল তৈরি হওয়ার আগেই এ তালিকা সংশোধন করে দেওয়া হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা ছাড়া এ তালিকা সম্ভব নয়। আমাদের তো ঘরে ঘরে যাওয়া সম্ভব নয়।
আর আমরা সবাইকে চিনিও না। সোনারগাঁ উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা সাকিবা সুলতানা বলেন, সোনারগাঁয়ে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করা হয়েছে।
তারপরও ভুলত্রুটি থাকলে দেখব। বন্দর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা ফয়সাল কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।