দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ফতুল্লার পাগলায় মাদক ব্যবসায়ীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা নিয়ে জেলা জুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
গত সোমবার ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ফতুল্লার পাগলার নিশ্চিন্তপুর শাহীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আতিকুর রহমান ভূইয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাকিবুল ইসলাম সজিব ওরফে ইয়াবা সজিব এলাকার ভয়ঙ্কর এক ত্রাস। সজিবের ভয়ে এলাকার কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। সজিব তার মাদক ব্যবসাকে বেগবান করতে এলাকার উঠতি বয়সের কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তার পালিত কিশোর গ্যাং সকলেই মাদকাসক্ত। এলাকায় চুরি-ছিনতাই সহ নানা অপকর্মের মূলহোতা এই ইয়াবা সজিব। এই সকল কিশোর গ্যাং সদস্যদেরকে নিয়ে তৈরি করেছেন অপরাধের এক বিশাল নেটওয়ার্ক।
যার নিয়ন্ত্রক এই ইয়াবা সজিব। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলেই ইয়াবা সজিবের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি দল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাদক বিক্রি করে। ইয়াবা সজিবের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই চালানো হয় নির্যাতন, দেয়া হয় গুম করে ফেলার হুমকি-ধমকি। ইয়াবা সজিব ও তার কিশোর গ্যাং সদস্যদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবার ২০ ফেব্রুয়ারি পাগলার নিশ্চিন্তপুর শাহীবাজার এলাকায় সন্ধ্যা ৬টায় ডিবি পুলিশের একটি টিম হাইচ গাড়ি নিয়ে ঢুকে। গাড়িটির নম্বর হলো- ঢাকা-মেট্রো-গ-১৬-০১৪০। এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সজিব ও তার সহযোগী জিসানকে আটক করে। এসময় সজিবের প্যান্ট থেকে ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
ততক্ষণে মাদক ব্যবসায়ী সজিবের বাবা শাহজাহান বেপারী, মামা আলী হোসেন ও মামাতো ভাই সহ সজিবের পালিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা ঘটনাস্থলে চলে আসে। মাদক ব্যবসায়ী সজিব ও তার বাবা শাহজাহান বেপারী তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয় ডিবি সদস্যদের আটকে রাখার। তাৎক্ষণিক মাদক ব্যবসায়ী সজিব ও তার সহযোগী জিসানকে ছাড়িয়ে নিতে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি সদস্যদেরকে ‘ভুয়া ডিবি’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে জোড়পূর্বক ছিনিয়ে নেয়। সজিবের পালিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা ও তার স্বজনরা মিলে লাঠিসোটা নিয়ে কাঠের একটি দোকানে ডিবি সদস্যদের আটকে মারধর করে পরবর্তীতে তাদের ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুর করে।
এই ঘটনায় কয়েকজন ডিবি সদস্য গুরুতর আহত হয়। সংবাদ পেয়ে সেখানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আরেকটি টিম ও থানা পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এরপর শাহজাহান ও তার ছেলে সজিব সহ ইমনকে আটক করা হয়। পরদিন সেই ছিনিয়ে নেওয়া ইয়াবা সজিবের সহযোগী জিসানকেও আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পরিদর্শক আতিকুর রহমান ভূইয়া বলেন, সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী সজিব ও তার সহযোগী জিসানকে আটক করি। পাবলিকের সামনে সজিব নিজে পকেট থেকে মাদকদ্রব্য বের করে। আমরা সজিবের পকেটেও হাত দেইনি। পরে তাকে গাড়িতে উঠানোর সময় বাধে বিপত্তি।
সজিবের আত্মীয়-স্বজন সকলে এসে আমাদেরকে গাড়িতে উঠাতে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে সজিবের বাবা শাহজাহান, আত্মীয়-স্বজন সহ কিছু মাদকাসক্ত ছেলেরা সজিব ও জিসানকে ছিনিয়ে নেয় এবং ডিবি সদস্যদের মারধর করে। আমরা সবাইকে পরিচয়পত্রও দেখিয়েছি। তারপরও তারা আমাদের উপর হামলা করেছে। এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে শাহজাহান ও তার ছেলে সজিব সহ ইমন এবং পরদিন ঘটনাস্থল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জিসানকে আটক করা হয়েছে।