দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে চলছে ধুম্রজাল। পুলিশ অপমৃত্যু উল্লেখ করলেও স্বামী ও স্বজনদের দাবী হত্যা।
বৃহস্পতিবার (১লা জুন) ফতুল্লার পূর্ব দেলপাড়া খেলার মাঠ সংলগ্ন আব্দুল হকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত্যু নারী মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের মৃত শফি মৃধার মেয়ে ও পূর্ব দেলপাড়ার আমির হোসেন সুনিলের স্ত্রী শাবানা আক্তার(৩৫)।
তবে মৃতের স্বজনদের দাবী, আমাদের মেয়ে মারা গেছে আমরাই জানি না। শাবানার বাসার আশেপাশে আমাদের আত্বীয় স্বজনরা আছে কিন্তু তাদের কাউকেই ডাকে নাই। তারাই মেরে আবার তারাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমরা এলাকার মানুষদের কাছ থেকে খবর পেয়ে এসেছি। আমাদের কাউকেই শাবানা মরার কোন খবরই দেয়নি। যদি আমাদের মেয়ে ফাঁসি দিয়ে যদি মারা যায় তাহলে আমাদের তো খবর দিবে তারা দেয় নাই।
আপনেরা তো জানেই কেউ ফাঁসি দিয়ে মারা গেলে আশেপাশের লোকজনকে ডাকবে এবং পুলিশকে জানাবে কিন্ত তারা কাউকে ডাকেওনি এবং পুলিশকে না জানিয়েই হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাহলে বুঝেন আমাদের মেয়ে আত্মহত্যা করে মারা গেছে নাকি ওরাই মারছে। আমরা আসছি বলে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে শাবানার ভাসুর।
তারা আরো অভিযোগ করে জানান, আরেকটা বড় কথা গত পরশু দুই ভাই ঝগড়া লাগছে। শাবানার জামাইকে মারছে, শাবানা গেছে বলে তাকে তার ঝা ও ঝায়ের নানী মিলে মারছে। একটা বাড়ির মেহমান সে কিভাবে যে বাসায় বেড়াতে আসছে সেই বাসার ছেলে ও ছেলের বউয়ের গায়ে হাত তুলে। আমরা আসছি আমাদের পর্যন্ত বের করে দেয়। বুঝেন এখন। এখন সব গুলাই পলাইছে। আর এছাড়াও হাসপাতালে ওরা পুলিশকে টাকা খাওয়ায় ভূল রিপোর্ট দিছে। এর জন্যই তো কোন পুলিশ এখানে আসে নাই। আমরা আমাদের মেয়ের হত্যার বিচার চাই প্রশাসনের কাছে। তারা সুষ্ঠু তদন্ত করুক তাহলেই সত্য উদঘাটন হবে।
ভিকটিমের স্বামী আমির হোসেন জানান,আমাদের পারিবারিক একটু ঝগড়া হয়েছিলো। আমি একটু অসুস্থ্য। আমার ভাবীর সাথে আমার বউয়ের একটু ঝামেলা হইছিলো। কয়েকদিন আগে এনিয়ে আমার বউকেও আমি মারছিলাম। কিন্তু আমার ভাবী, ভাবীর নানী ও আমার ভাই আমাকে ও আমার বউকে মারছিলো। এনিয়ে গত শুক্রবার আমার বোনের জামাই এসে সব মিমাংসা করে দিয়ে যায়। কিন্তু তারপরও আমার ভাবীর সাথে আমার বউয়ের ঝামেলা হয়।
তিনি আরো জানান, আমি সিগারেট খাই। সকালে খাইয়া আমি সিগারেট খাইতে গেছি। সিগারেট খাইয়া বাসায় আসার পর ঝগড়া লাগলে মানুষ যেমন ফুঁস ফুস করতে থাকে আমার ভাইয়ের রুম থেকে শব্দ পাই। অন্য সময় আমার ভাবী দুপুর একটায় বাসায় আসে আর আজ সকাল ৮টাই বাসায় আমার সন্দেহ হয়। আমি সাথে সাথে আমার রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে আমার বউকে ডাকি কিন্তু আমার বউয়ের সাড়া শব্দ পাই না। অন্য সময় একটা ডাক দিলেই উঠে যায় আর আজ খবর নাই তাই আমি দরজা ভাঙি। ভাঙা দেখি ফাঁসি লাগাইনা। আমি আমার ভাই,ভাবী ও ভাইয়ের নানী শাশুড়িকে নিয়ে আমার বউকে হাসপাতালে নিয়া যাই।
স্ত্রীর মৃত্যুতে কোন মামলা হয়েছে কিনা জানিতে চাইলে তিনি জানান,হাসপাতালে আমার বউকে নিয়া গেলে হাসপাতাল থেকেই খবর দিয়া পুলিশ নিছে। তারাই মামলা নিছে।
এদিকে মৃত শাবানার ৬ বছরের শিশু মেঘলা বলছে তার আম্মা(চাচী) শারমিন তার মাকে মারছে। শরীরের কোথায় কোথায় মারছে সে মানুষকে দেখাচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, এই বাসার বউ যে মারা গেছে আমরা জানতামই না। দুপুরে এখানে মারামারি হইছে তখন আমরা জানতে পারছি এই বাড়ির বউ মারা গেছে। মেয়েটা ভালো ছিলো।
তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,মৃত শাবানা আক্তার ও সংসার ৭ বছরের। তাদের সংসারে ২ বছরের বর্ষা ও ৬ বছরের মেঘলা নামে দুই মেয়ে রয়েছে। নেশায় আসক্ত ও অসুস্থ্য থাকায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মাঝে মাঝে মনোমালিন্য হলেও তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু ভাসুর ও ঝা এর সাথে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকতো। কিন্তু আজ মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্ক এলাকাবাসী অবগত ছিলেন না কিন্তু শাবানার আত্বীয় স্বজনদের চিৎকার চেঁচামিচির মাধ্যমে এলাকাবাসী জানতে পেরেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাসুর স্বাধীন ও তার স্ত্রী শারমিন এবং ভাসুরের নানী শাশুড়ি কাউকেই পাওয়া যায়নি। কিন্তু শাবানার ছোট দেবর জানায় তিনি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেছে এবং সেখান থেকে লাশ বাসায় নিয়ে এসেছে কিন্তু মৃত্যুর বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন না।
পরে থানায় ভিকটিমের স্বামীকে নিয়ে তার আত্বীয়রা মামলা করতে গেলে পুলিশ তাদের মামলা গ্রহন না করে ফেরত পাঠান অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে উলেøখ করে।
এবিষয়ে মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনকারী ফতুল্লা মডেল থানার উপ পরিদর্শক মো, কামাল হোসেনের কাছে জানতে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,সেখানে মৃতের গায়ে কোন আঘাতে চিহৃ ছিলনা। বিকেলে থানায় এসে নিহতের স্বামী নিজেই ওসি স্যারের সাথে কথা বলেছেন।