দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: বন্দরে আগুনের দগ্ধ গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ নিহত গৃহবধু সুমাইয়া ছিলেন অত্যন্ত জেদী প্রকৃতির মহিলা। স্বামীর কাছে মার্কেটের টাকা চেয়ে তা না পেয়ে নিজেই তার শরীরের কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে বৃহস্পতিবার গনমাধ্যম কর্মীরা আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে তারা বিস্তারিত ঘটনার বর্ননা দেন। তারা জানান,প্রায় ১০ মাস পুর্বে সেলিনা বেগমের ছেলে শাওনের সাথে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয় দেউলি চৌড়াপাড়া এলাকার জয়নালউদ্দিনের মেয়ে সুমাইয়ার সাথে। শাওন স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে কাজ করে। বিয়ের পর থেকেই সুমাইয়া বিভিন্ন সময়ে মার্কেটে যাবে বলে স্বামী শাওনের কাছে টাকা চায়।
কখনও দিতে পারে আবার কখনও দিতে পারেনা। এ নিয়ে তাদের উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনাও রয়েছে। আবার মার্কেট করতে টাকা পেয়ে বেশ কয়েকবার সুমাইয়া তার মায়ের কাছেও চলে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় গৃহবধুরা। তবে সুমাইয়া স্বামীর সাথে রাগ করে মায়ের বাড়িতে সকালে গেলেও আবার বিকেলে পুনরায় স্বামীর বাড়ি চলে আসতো। তারা আরও বলেন,যে সুমাইয়া মা মাহমুদা বিভিন্ন সময়েই তার মেয়েকে জামাতার কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। এখন উল্টো ঘটনা সাজিয়ে নিরীহ মানুষগুলোকে হয়রানি করছেন শাওনের শাশুড়ী।
তারা আরও জানান,সুমাইয়ার এ দূর্ঘটনার আগের দিনও স্বামীর সাথে মার্কেটে যাওয়ার টাকা দিয়ে মনমালিন্যে হয়। সে সময় স্বামী শাওন তার মানি ব্যাগে যা ছিলো তা পুরোটাই সুমাইয়া হাতে তুলে দেয় এবং স্বামী শাওন বলেন,যেহেতু আমরা আলাদা খাওয়া-দাওয়া করি তাই এ টাকাগুলো বাজার-সদাই করার জন্য রেখেছি। তারা আরও জানান, সুমাইয়া ঘনঘন মার্কেট প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার বিচার শাল্যিসেও বসেছেন বলে জানান।
ঘটনার দিন সকালে সুমাইয়া মা মাহমুদা বেগম ( রাস্তায় সড়ক ও জনপথের লেবার ) তিনগাঁও এলাকায় আসেন কাজ করতে। সে জন্য দুপুরের খাবার রান্না করে তার মায়ের নিয়ে উক্তস্থানে ( কর্মস্থলে ) নিয়ে যায়। রাত ১১টায় সুমাইয়া তার শাশুড়ীর সাথে একসাথেই খাবার খায়। সে সময় তার স্বামী শাওন কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরে আসেনি। রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় স্বামী শাওন বাসায় ফিরে দেখেন তার স্ত্রী সুমাইয়া ক্ষোভে অভিমানে নিজ গায়ে কেরোসিন ঢেলে চিৎকার করে আশপাশের মানুষকে একত্রিত করে ফেলেছেন।
এ সময় দ্রæত সুমাইয়া গায়ে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রনে এনে দ্রুত ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী শাওনসহ স্থানীয়রা। এর মাঝে শাওন তার শাশুড়ীতে ফোন করে ঢাকায় হাসপাতালে যেতে বলেন। সুমাইয়াকে হাসপাতালে ভর্তির প্রায় ৪ দিন পর তার মৃত্যু হলে শাশুড়ী মাহমুদা বেগম জামাতা শাওন,বিয়াইন সেলিনা ও তার মেয়ের নামে বন্দর থানায় মামলা করেন যার মামলা নং- ২৩(৭)২৩। পুলিশ আসামী ৩জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।
সরেজমিনে আরো জানা যায়, শাওনের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে এলাকাতে ন¤্র-ভদ্র হিসেবে সবাই জানেন। কারোর সাথে কোন ঝগড়া নেই বললেই চলে। যৌতুকের জন্য এধরনের অপরাধ করেছে শাওন এ সর্ম্পকে আশপাশের নারী-পুরুষরা বলেন, আমরা শাওনের বিয়ের দাওয়াত খেয়েছি। যৌতুক নিয়েছে কিংবা দিয়েছে এমন কোন কথা শুনিনি। তবে বিয়ের সময় সুমাইয়ার পরিবার একপদ স্বর্ন দিয়েছে। তাছাড়া অন্য কিছুই দেয়নি।
তারা আরও বলেন,সুমাইয়া পরিবার অত্যন্ত গরীব। তার মা সড়ক ও জনপথের অধীনে রাস্তার কাজের লেবার হিসেবে কাজ করেন দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে। তাছাড়া ১০ মাস যাবত শাওন ও সুমাইয়া সংসার করছে। শাওন কখনও তার স্ত্রী গায়ে হাত তুলেছে তা কখনও তার স্ত্রী বলেন কিংবা কারও কাছ থেকে শুনিনি। তারা আরও বলেন,আগুনে পুড়ে সুমাইয়া যখন হাসপাতালের বেডে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে সময় একটি ভিডিওতে সুমাইয়া বলেছে যে,তার স্বামীই তাকে বাচিঁয়েছে। সে বা তার পরিবারের কেউ তার গায়ে আগুন লাগায়নি তারা সবাই নির্দোষ।
এ দিকে ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া শাওনের বোনের ৫ বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে যে শিশুটি শুধু মাকেই খুজছে। মা না থাকার কারনে শিশু ছেলেটি কোন খাবার খাচ্ছেনা বলে জানান শিশুটির বাবাসহ আশপাশের লোকজন।
স্থানীয়দের দাবী,সুমাইয়ার স্বামী শাওন,তার মা এবং বোন এ ঘটনায় জড়িত নয়। তাদেরকে হয়রানী করার জন্যই সুমাইয়া মা মাহমুদা বেগম এ মিথ্যা মামলা করেছেন।