দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ সোনারগাও থানার ওসি ও এসআই এর বিরুদ্ধে করা হেফাজতে নির্যাতনের আলোচিত মামলার সাক্ষীদের স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে থানায় নিয়ে সারারাত আটক রেখে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত ১৯ মে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
এদিকে, সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সোনারগাঁও থানা পুলিশ স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে ২ জুন রবিবার বিকাল ৫টার দিকে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান ও অন্য একজন এসআই দিয়ে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর, স্বাক্ষী সৈয়দ মশিউর রহমান শামীম ও স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন’কে থানায় ডেকে নিয়ে সারারাত আটকে রেখে প্রচন্ড মানসিক নির্যাতন করে। এসময় প্রচন্ড মানসিক নির্যাতনে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর অসুস্থ্য হয়ে গেলে সোনারগাঁও থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদীকে আদালতে আনলে বাদীপক্ষের আবেদনে আদালত সাক্ষী মূলতবি করেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ এ সোনারগাঁও থানার তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার সাধন বসাকের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহন করে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানে ঘটনা প্রমান হলে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই মামলায় আগামীকাল ৩ জুন আদালতে স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ আছে। গত ডেইটে এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বাবুল বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন জানায়, আগামীকাল আমাদের মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ। আমরা আদালতে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলবেন এমন কথা বলে বিকালে থানায় এনে আমাদের আটকে রেখেছেন। এখানে রাতে না খেয়ে, আমি (স্বপন) ডায়বেটিকের রোগী। প্রতিদিন দুই বেলা ইনস্যুলিন নিতে হয়। অথচ থানায় সারারাত মশার কামড় খাইয়ে আর ক্ষুধার্ত রেখে পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান বলেন, পুলিশ আদালতের নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, বিগত দিনে তারা স্বাক্ষী না দেওয়ায় মাননীয় আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট জানায়, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত মে মাসের ১৯ তারিখ বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তারপরও সোনারগাঁও থানা পুলিশ সাক্ষীদের গ্রেফতার করে সারারাত আটক রেখে যে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করেছে তা শুধু আইন পরিপন্থী নয়, তা একটি অপরাধ। বাদী ও সাক্ষীগন এই বিষয় নিয়ে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বা পুরো বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবে।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ একটি মামলার সাক্ষীদের সারারাত আটক করে আদালতে উপস্থাপন করেছে এমন একটি ঘটনা দেখাতে পারবে না। এই মামলায় সোনারগাঁও থানা পুলিশ যা করেছে তা কল্পনাতেও সমর্থন করা যায় না। এক কথায় ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।