দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কাশিপুর ইউনিয়ন। আর এটা ফতুল্লার মধ্যে অন্যতম ক্রাইমজোন । প্রতিনিয়তঃ কোন না কোন অপরাধ ঘটেই চলেছে এই ইউনিয়নে। শাসক দলের শীর্ষ নেতা, নেতার পুত্র, নেতার চেলা চামুন্ডাদের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই চলছে সকল ধরণের অপরাধ। ২০১৪ সালে কাশিপুরে আওয়ামীলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আবদুল জলিল হত্যাকান্ড দিয়ে হত্যার রাজনীতি শুরু হয় এরপর গত বছরে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা আফজালকেও কুপিয়ে হত্যা করেছিলো প্রায় দুই ডজন মামলা আসামী রাজু প্রধান।
এর আগেও নুর মসজিদ এলাকায় রকি নামে এক যুবলীগ নেতাকেও হত্যা করে রাজু প্রধান। তারপর হোসাইনীনগর এলাকায় জোড়া খুন। আর এ ধরনের অপরাধের ধারাবাহিকতায় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মিয়াকে (৭০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। অথ্যাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে এ নিয়ে ছয়জন আওয়ামীলীগ নেতাকে প্রান দিতে হলো শুধুমাত্র ইট-বালু ব্যবসা ও চাদাঁবাজিসহ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতির কারনে। আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়ার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও চিত্র দেখে শিউরে উঠে সকলেই। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মুল আসামী হীরা,আল আমিন,রাসেল,সানি,বাপ্পি ও জামালসহ ১৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০১৪ সালে ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা জলিল হত্যাকান্ডে প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন মো.আশরাফুল আলম। যিনি একসময়ে জামাতের নেতা থাকলেও বর্তমানে তিনি থানা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি এবং কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য। জলিল হত্যাকান্ডে নিহতের মা ছিলেন মামলার বাদী। পুত্র সন্তানের হত্যাকান্ডের সুবিচার না পাওয়ার যন্ত্রনায় তিনি মৃত্যুবরন করলে নিহত জলিলের স্ত্রীর সাথে আপোষ-মিমাংশা করা হয়ে উক্ত মামলাটি।
দেওভোগ নুর মসজিদ এলাকার যুবলীগ নেতা রকি হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামী রাজু প্রধানের বিচার না হওয়ার ফলে গত বছরেও এ রাজু প্রধান ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি আফজালকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। আলীপুরা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ হত্যাকান্ডে আটক একাধিক মামলার আসামী আলাউদ্দিন হিরার সাজা কতটুকু পর্যন্ত হবে তাও আন্দাজ করতে পারছে স্থানীয়রা। তাদের দাবী, বিগত হত্যাকান্ডের ন্যায় সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডটিও ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে বিগত হত্যাকান্ডে শেল্টারদাতাদের কারনে। তবে কাশিপুরের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ নতুন করে কোন হত্যাকান্ড চায়না চায় শুধু সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডসহ বিগত সময়ে হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের বিচার।
কাশিপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম ওয়ার্ড দুটি হচ্ছে ২ ও ৭নং ওয়ার্ড। এ দুটি ওয়ার্ডেই যেন সকল অপরাধীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। আর এ সকল অপরাধের মুলে হচ্ছে রাজনীতি করলেও দলকে ব্যবহার করে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে কিছু পাওয়া আশায় অন্যান্য নেতাকর্মী কিংবা ছিচকে নির্ভর নেতৃবৃন্দ তাদের প্রাপ্র্য পাওয়ার জন্য নাকি এত অপরাধ।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ,বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবত আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসীন রয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে আওয়ামী রাজনীতি সাথে যুক্ত থেকে অনেকেই প্রাপ্র্য অধিকার বঞ্চিত হয়ে ইট-বালু ব্যবসা,মাদক ব্যবসা ও চুরিসহ বিভিন্ন প্রকারের সমাজ বিরোধী কাজে যুক্ত হয়েছে। তবে কাশিপুরে আওয়ামীলীগের মুল ¯্রােতের নেতাকর্মীর চেয়ে বহিরাগত ব্যক্তিরা যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। বিগত ১৫ বছরে পুরো কাশিপুরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান এম.সাইফউল্লাহ বাদল,তার ছেলে নাজমুল হাসান সাজন,কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.আইউব আলী,সাধারন সম্পাদক এম.এ. সাত্তার এবং কার্যকরী সদস্য রেহান শরীফ বিন্দু ও সাইদুল এর নেতৃত্বেই পুরো ইউনিয়ন জুড়েই চলছে নানা কার্যক্রম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ জানান, প্রায় সময়ে অসুস্থ থাকেন চেয়ারম্যান সাইফউল্লাহ বাদল। কিন্তু তিনি অসুস্থ্য থাকলেও তার শেল্টার ছেলে সাজনের সাথে যুক্ত হয়ে বিন্দু,আইউব আলী এবং সাত্তাররাই নিয়ন্ত্রন করেন পুরো ইউনিয়ন। ভুমিদস্যুতা হতে শুরু করে এমন কোন কর্মকান্ড নেই যা তাদের মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছেনা। গত কয়েক বছর যাবত কাশিপুরে যে পশু হাটটি বসানো হয় তাও তাদের নিয়ন্ত্রনে। এমনকি ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে যে বাৎসরিক পশু হাটটি বসে থাকে সেটাও চেয়ারম্যানপুত্র সাজনের নামে চলছে দীর্ঘদিন যাবত।
এছাড়াও কাশিপুর ব্রিজের ঢালে ওরিয়ন গ্রুপের পাওয়ার প্লান্টের ভেতরে বসে নাকি কাশিপুরে সকল প্রকার রাজত্বেও নিয়ন্ত্রন করছেন চেয়ারম্যানপুত্র সাজন এমনটাই বলেন স্থানীয়রা। সরকারী খাস জমি দখলের পাশাপাশি বিভিন্ন নিরীহ মানুষের জমিতে সাইনবোর্ড সাটিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বল্প মুল্যে তা ক্রয় করে বেশী মুল্যে অন্যত্র বিক্রি করাটাই যেন চেয়ারম্যান পুত্র সাজনসহ বিন্দু.সাত্তার ও সাত্তারদের পেশা হিসেবে রুপান্তরিত হয়ে উঠেছে। পুরো কাশিপুর এলাকায় কোন নিচু জমি বালু ভরাটের কাজগুলো এ সাজনদের মাধ্যমেই হতে হচ্ছে জোড়পুর্বকভাবে। এছাড়াও নরসিংপুরসহ আশপাশের এলাকাতেও রয়েছে এ ৬ জনের হস্তক্ষেপ। তবে নরসিংপুর এলাকায় দ্বায়িত্ব পালন করেন ডাকাস গেসুর ছেলে সুমন।
স্থানীয়দের দাবী,রাজনীতি করতে হলে দলের মিছিল-মিটিংয়ে যে পরিমান খরচ বহন করতে হয় একজন নেতাকে তার জন্য বড় কোন নেতার সহযোগিতা পায়না অনেকেই। তাই দল করে আর্থিকভাবে কোন সুবিধা না পাওয়ার ফলেই কাশিপুরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে ইট-বালুর ব্যবসা। আর এ ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে ছোট-বড় অনেক অপরাধীকে হাতে রাখে উক্ত ব্যবসায়ীরা। কোন একটি কাজ ভাগিােনতে গেলে সেখানে বাধা এলেই শুরু হয় দেশীয় অস্ত্রসহ তান্ডবলীলা। আর এ তান্ডবলীলায় পড়ে নিহত হতে হচ্ছে সুরুজ ও আফজালদের মত নেতাদেরকে।
তবে তারা মনে করেন যে.পুরো ইউনিয়ন জুড়েই থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান এম.সাইফউল্লাহ বাদল,তার ছেলে নাজমুল হাসান সাজন,কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.আইউব আলী,সাধারন সম্পাদক এম.এ. সাত্তার এবং কার্যকরী সদস্য রেহান শরীফ বিন্দুর নেতৃত্ব না থেকে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হতো তাহলে হয়তোবা কাশিপুরের জনপদটি এতটা অশান্ত হয়ে উঠতো না এবং কোন মায়ের বুক খালি হতোনা।
তবে কাশিপুরের আপামর জনতা মনে করেন যে,সরকারের ১৫ বছরের ক্ষমতায় চেয়ারম্যান বাদল ও তার ছেলেসহ সঙ্গীয়রা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এবং জমি নিয়ে বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে কি পরিমান টাকার মালিক বনে গেছেন তা অনেকইে জানেনা। চেয়ারম্যানের শেল্টারে ছেলে সাজনসহ অন্যান্যদের কাছে জিম্মি কাশিপুরের সর্বস্তরের সাধারন মানুষগুলো। সাংসদ শামীম ওসমান চেয়ারম্যানকে বড়ভাই বলে সম্মান করেন এবং সেই সম্মানকে পুজি করেই চলছে কাশিপুরে এ পাচঁ তারকার যত অবৈধ এবং অনৈতিক কার্যকলাপ।
প্রতিটি সেক্টরে এ পাচঁ তারকার পদধনিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কাশিপুরের রাজনীতির অঙ্গন। তবে তাদের দাবী,আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীর চেয়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতাদের উপরই অনেকটা আস্থাশীল চেয়ারম্যান বাদল। যার ফলে সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নিজ দলের নেতাকর্মীর পরিবর্তে বিএনপি-জামাত জোটের নেতারা চেয়ারম্যানের সাথে যুক্ত হয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। আর কোন কিছু না পেয়ে এলাকা ভিত্তির সামান্য ইট-বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দে জড়াচ্ছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা এবং ঘটছে জলিল-আফজাল-সুরুজদের নেতাদেরকে হত্যাকান্ডের মত অনাকাংখিত ঘটনা।
তবে কাশিপুর বাসীর ধারনা যে,জলিল হত্যাকান্ডটির বিচার না করে আপোষ-মিমাংশা হওয়ার ফলেই যেন সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। কারন হিসেবে তারা বলেন,একটি হত্যাকান্ড ঘটনোর পর যদি টাকা বিনিময়ে রফাদফা হয়ে যায় এবং অপরাধীর বিচার না হয় সেক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি অপরাধীকে আরো অপরাধ করার সুযোগ করে দেয়ার সামিল। কারন অপরাধ করার পর যদি টাকার বিনিময়ে রফাদফা সম্পন্ন হয় সেজন্য অপরাধীরা সন্ত্রাসী,চাদাঁবাজি এবং ভুমিদস্যুতার মত বড়বড় অপরাধের মাধ্যমে টাকা কামানোর নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠে। তবে তারা প্রশাসনের নিকট জোড় দাবী করে বলেন, যুবলীগ নেতা আফজাল ও আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের যেন দেশের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়।
কাশিপুরে ঐতিহ্যবাহী এ দল আওয়ামীলীগকে মুক্ত চায় তৃনমুলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। যদি তা বাস্তবায়ন না হয় তাহলে অদুর ভবিষ্যতে কাশিপুর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরকে একের পর এক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেখা দিবে ত্যাগী নেতাকর্মীদের শূন্যতা।