দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলের শিক্ষিকা মিলি আফরোজ ও এভিলিন আক্তার রুনাকে বহিষ্কারের দাবীতে আন্দোলন করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে দুই শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
২০ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলের সকল ক্লাশ বর্জন করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
“তুমি কে, আমি কে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ, কে বলেছে,কে বলেছে মিলি মিস, বহিষ্কার বহিষ্কার মিলি মিস, রুনা মিসের, এক দফা এক দাবী বহিষ্কার চাই মিলি মিস ও রুনা মিসের ” স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুল।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিলি আফরোজ, এভিলিন আক্তার রুনা এই দুই শিক্ষিকার বহিষ্কার, ডিসি রাব্বী ভবনের নাম ফলক পরিবর্তন করা, অতিরিক্ত বেতন কমানো সহ একাধিক দাবীতে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। পরে প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে ডিসি রাব্বী ভবনের নাম ফলক ভেঙে ফেলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন বর্জন করে ক্লাশ করার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নূরননবী।এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষিকা মিলি আফরোজ ও এভিলিন আক্তার রুনার বহিষ্কার না করা পর্যন্ত ক্লাশ বর্জন করে আন্দোলন করবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তদন্ত চলাকালীন সময় পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের কথা জানান দুই শিক্ষিকার।
এর আগে বেলা ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর গত ১৮ আগষ্ট স্কুলে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্কুলের শিক্ষিকা মিলি আফরোজ, এভিলিন আক্তার রুনা ও সাবেক শিক্ষক শারমিন আক্তার এবং বহিষ্কৃত শিক্ষিকা ইসমত আরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্দেশে বিশৃঙ্খলা করা চেষ্টা চালায় এবং শিক্ষার্থীদের দিয়ে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এছাডা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হককে আওয়ামী লীগার বলে উল্লেখ করে সোশাল মিডিয়াই বক্তব্য ও শিক্ষিকদের নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও মেমো বানিয়ে ছাড়েন মিলি আফরোজ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি প্রদান করায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত করার ও মিলি আফরোজ ও এভিলিন আক্তার রুনাকে বহিষ্কারের দাবীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিতে আসা অভিভাবকদের মধ্যে ৩য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী আসাদ আহমেদের অভিভাবক লিপি আক্তার জানান, পানির বোতল দিয়ে আমার সন্তান পানি আনতে গেছে।পানি নিয়ে আসার পর সে আমার সন্তানকে ১০ টা থাপ্পুর মারে। তার মার খেয়ে আমার ছেলে বেঞ্চের নিচে পরে যায় এবং কান দিয়ে রক্ত পরে।এটা নিয়ে আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করি।
পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী প্রীতমের অভিভাবকও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আসেন।তিনি বলেন আমার ছেলেকেও উনি মারছে।উনার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে।
৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা জানান,মিলি ম্যামের মাথায় সমস্যা আছে।উনি একা একা কথা বলেন,হাসেন, গান গায়।আমরা কিছু বলতে গেলেই মারধর করেন।আর তাছাড়া উনি আমাদের অকারণেই মারধর করেন উনার কথা না শুনলে।উনার কথা শুনতে গেলে আমাদের দুই হাত গালে দিয়ে যেতে হয় উনার মাইরের ভয়ে।এমন হাজারো অভিযোগ করেন বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে গত ১৪ই আগষ্ট স্কুলের শিক্ষিকা মিলি আফরোজ ও জয়া দুইজনের মধ্যে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় মিলি আফরোজের বিপক্ষে প্রধান শিক্ষক সহ একাধিক শিক্ষক অবস্থান করাকে কেন্দ্র করে ১৬ ও ১৭ আগষ্ট দুইদিন ধরে চাষাড়া কলেজরোডস্থ বিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষিকা শারমিন আক্তারের বাসায় এভিলিন আক্তার রুনা, ইসমত আরা ও মিলি আফরোজ যৌথভাবে মিলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা করে বিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ও প্রধান শিক্ষকে অপসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহন করে।
স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়েও হোয়াটসএপে স্টেপডাউন রাজ্জাক নামে একটি গ্রুপে খোলা হয় যেখানে সরাসরি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের রুম বন্ধ করার, মাইনুদ্দিন নামে এক শিক্ষককে মারা এবং কেউ বাধা দিলেই মাইর দিতে নির্দেশ দেন মিলি আফরোজ। অন্যদিকে ১৮ আগষ্ট স্কুলের ক্ষতি করতে না দেবার জন্য সকাল থেকেই একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন সেদিন বিদ্যালয়ে।তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি)লাইলাতুল হোসেনকে বিদ্যালয়ে পাঠান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।তিনি ব্যর্থ হলে
পরে জেলা প্রশাসক দুই দলকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে তাদের কথা শুনে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)মোহাম্মদ নূরুননবী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাইলাতুল হোসেন, জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইউনুছ ফারুকীকে তদন্ত কমিটিতে রাখেন।