দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ঐতিহ্যবাহী হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার পদত্যাগের দাবীতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। তবে প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা আগে থেকেই টের পেয়ে স্কুলে আসেনি বলে জানান স্কুলের সাধারন শিক্ষার্থীরা। রবিবার ( ১৮ আগষ্ট ) দুপুরে বিদ্যালয়ের ভেতরেই দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবী বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেদীতে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছে প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবীতে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবী.ম্যাডামকে স্কুল থেকে যে কেউ বলে দিয়েছেন বলে তিনি স্কুলে আসেননি। শিক্ষার্থীদের দাবী, প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা বিভিন্ন সময়ে কারনে-অকারনে আমাদের সাধারন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেটা আত্মসাৎ করেছেন।
কোন নোটিশ ছাড়াই চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বেতন সাড়ে ৩শত টাকার স্থলে ৫ শত টাকা করে আদায় করছেন। স্কুলে প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ৩৫০ শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বাধ্য করিয়েছেন এবং এজন্য প্রতি মাসে ৭শত টাকা করে বেতন নিচ্ছেন। যদি কোন শিক্ষার্থী কোচিং করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকেও সেই ফি বাবদ ৭শত টাকা করে দিকে বাধ্য করা হতো নতুবা বিদ্যালয়ে আসতে দিতোনা। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাই আমরা এ দূর্নীতিবাজ শিক্ষকের কাছে পড়তে চাইনা। কারন তাহলে আমাদেরকেও বড় হয়ে দূর্নীতিবাজ হতে হবে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কিংবা কোন শিক্ষকগন তোমাদেরকে এ আন্দোলন থামাতে বলেছে কিনা এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লিটন সাহেব এসেছিলেন এবং আমাদেরকে বলেছেন চলে যেতে। তিনি আগামী শনিবারের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করে দিবেন কিন্তু আমরা এতে রাজি নই।
কারন হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলেন,যেহেতু দূর্নীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষিকা লুৎফন্নেছা অনেক টাকা কামিয়েছেন তিনি হয়তবা সেই টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ম্যানেজ করে নিবেন। তাছাড়া ম্যাডামকে দিয়ে বিশ^াস নেই। কারন ইতিপুর্বে তার দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এ শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বের করে রেকর্ডও তার রয়েছে। এখন আমরা যারা ম্যাডামের অপসারনের দাবীতে আন্দোলন করছি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেনা কিংবা আমাদেরও স্কুল থেকে বাহির করে দিবেনা তার গ্যারান্টি কি ? তাই আমরা আগামী শনিবার নয় আজ-কালের মধ্যেই প্রধান শিক্ষিকার অপসারন চাই নতুবা আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সাথে কথা বলতে গেলে তার কক্ষে তিনি না থাকায় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সালেহ আহমেদ জানান,ছাত্রদের সাথে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লিটন সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকার দূর্নীতি প্রসঙ্গ তিনি বলেন, এটাতো সম্ভব নয় কারন তিনি মাত্র ১ বছর যাবত এ পদে নিযুক্ত হয়েছেন। কিভাবে এটা সম্ভব তা বোধগম্য হচ্ছেনা।
এ বিষয়ে হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ( ০১৯১৩৪৮৪৫@@ ) ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করে বলেন,আমার ফোনে একটি কল এসেছে আমি কথা বলে ৫ মিনিট পর আপনাকে ফোন দিচ্ছি বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার তাকে ফোন দেয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লিটন জানান,আমি স্কুলে গিয়েছিলাম এবং শিক্ষার্থীদেরকে বলেছি আগামী শনিবার এ বিষয়ে বসবো। তাছাড়া যদি প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন প্রকার দূর্নীতির অভিযোগের প্রমানপত্র থাকে তাহলে সেটা উপস্থাপন করুক তাহলে অবশ্যই ব্যস্থা নেয়া হবে। কোন প্রধার প্রমানপত্র ছাড়াতো কারোর বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া যায়না। তবে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক হয়তবা শিক্ষার্থীদেরকে ইন্ধন দিচ্ছে নতুবা কেনইবা শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এর সমাধান করতে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপুর্বে হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তার দূর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য আবু হানিয়ের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ করেছিলেন লুৎফুন্নেছা। এদিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে লুৎফুন্নেছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের একটি ফাইল হাতে এসেছিলো গণমাধ্যম কর্মীদের। সেই ফাইলের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে স্থানীয়
প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে যোগ্য প্রার্থীদের পিছনে ফেলে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিযোগটি রয়েছে। ২০২৩ সালে ৪১৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কোচিং ফি’র নামে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে লুৎফুন্নেছার বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার কন্যা ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হওয়ার পরেও এই তথ্য গোঁপন করে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি যা সম্পূর্ন বেআইনী। সহ-প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগে দুই শিফটের ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ের অনুমতি না থাকার পরও প্রভাতি শাখায় বিশেষ সুবিধায় নিয়োগ দেয়া হয়। সেই নিয়োগ পরীক্ষায় ড্যামী প্রার্থী রাখারও অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকার দূর্নীতি নিয়ে ২০২৩ সালের ১১ আসস্ট নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেইজে স্ট্যাটাস দেন। পরবর্তিতে মামলার হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস ডিলেট করানো হয়।
অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি কর্মচারীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সুরুজ মিয়াকে চড় মেরেছিলেন। তাছাড়া স্কুল ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক অভিভাবক সদস্য বলেন, প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির প্রশশ্রয়ই তিনি গত এক বছর যাবত স্কুলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে গেছেন। স্কুলের তহবিলের টাকা তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের কাজে ব্যবহার করছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। স্কুলের নতুন ভবণের জায়গা ক্রয় নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। জমির দাম নির্ধারণ করে সভাপতির নামে পাওয়ার নিয়ে পরবর্তিতে দাম বেশি দেখিয়ে স্কুলের নামে রেজিষ্ট্রশন করা হয়।