দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ সোনারগাঁ থানাধীন শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর কিশোরগঞ্জ এলাকার আলোচিত ও সমালোচিত নাম হৈচৈ বিনোদন পার্ক। যা নারায়ণগঞ্জ সহ এর আশপাশের জেলায় এই এলাকাটি মিনি কক্সবাজার হিসেবেও বেশ পরিচিত। আওয়ামী শাসন আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অসহায় কৃষকদের কৃষি জমি দখল করে বিনোদনের জন্য পার্কটি নির্মান করলেও এর অন্তরালে চলতো নানা অপকর্ম।
৫ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর পার্কটি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী সেনাবাহিনী ও সোনারগাঁ উপজেলার ইউএনও বরাবর নানা অপকর্মের বিষয়ে উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সেই সাথে কৃষকের ফসলি জমি দখল করে পার্কের মালিক বনে যাওয়া শম্ভুপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল ও ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ স্বপনের বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে অভিযোগে। বর্তমান পার্কের মালিক দুইজনই হত্যা মামলায় গর্তে লুকালেও স্থানীয় কিছু বিএনপির নামধারী নেতাদের মদদে তাদের আধিপত্য পুণরায় ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, পার্কটি ছিল স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম। এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা পার্কটিতে করেনি। এখানে বসে তারা সম¯Í অপকর্মের শলাপরামর্শ করতো। রাত হলেই বসতো মদ ও জুয়ার আড্ডা এবং মাদক ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ব। পার্কটির পাশেই থাকত ডাকাতি করার ট্রলার। রাত হলেই তারা ড্রেজার, বাল্কহেড ও মাটির ট্টলার এবং বিভিন্ন নদীবাহি যানবাহনে ডাকাতি করতো। তারা চুরি, ডাকাতি সহ ধর্ষণের মত অপরাধ এখানে করতো। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ধরে এনে এই পার্কের টর্চার সেলে নির্যাতন করতো। গত ১৫ বছর সাধারণ জনগণ পার্কটি বন্ধ করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ সাহস পায়নি এবং পার্কটি বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি।
গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের সাথে সাথে নির্যাতনকারীরা পার্কটি রেখে পালিয়ে যায়। জনগণ চেয়েছিল পার্কটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটবে বলে সচেতন ছাত্র-জনতা পার্কটি ধ্বংস করতে দেয়নি। কিন্তু এলাকার কথিত বিএনপি নেতা মতিন মুন্সী ও শফিকুল আওয়ামীলীগ পদ ধারী লোকজন এর সাথে যোগসাজশ করে পার্কটি পুণরায় দখল নিয়ে চালু করার পায়তারা করছে। যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ও ঝগড়া-বিবাধ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করে বলেন, সোনারগাঁ থানাধীন শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নেতা মতিন মুন্সি যিনি নিজেকে থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের ফুপাতো ভাই হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন। আর সেই ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটে আওয়ামীলীগ নেতা জুবে আলম খোকনকে বিএনপি নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি তার নামে দিয়েছে বিএনপি কার্যালয়।
এই রেশ কাটতে না কাটতেই শম্ভুপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল ও ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ স্বপনকে প্রতিষ্ঠিত করতে চালাচ্ছে নানা অপকৌশল। এই তিন নেতার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় হত্যা মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
তারা আরও বলেন, সোহেল ও শামীম আহম্মেদ স্বপন চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কৃষকদের চাষী জমি দখল করে হৈচৈ বিনোদন নামে একটি পার্কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরফলে অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমি হারিয়ে আজ দিশেহারা।
কথিত ঐ মতিন মুন্সি তাদের এই পার্কের অস্তিত্ব রক্ষায় জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে। শুধু তাই নয় সোহেল ও শামীম আহম্মেদ স্বপনের কাছ থেকে লিখিত দলিল এনে সেই পার্কের পার্টনারশীপ দাবি করছেন। সেটা পুনরায় চালু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মতিন মুন্সি বিএনপির হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে আওয়ামীলীগের প্রেতাত্মাদের সাথে আতাঁত করে তাদের পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
আর তাদের সাথে মিলিত হয়েছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যিনি প্রায় সময় স্থানীয় নেতাদের ফোন করে পার্কটি চালু করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয় আগামী বৃহস্পতিবার মিলাদ পড়িয়ে পার্কটি চালু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, পার্কের বিষয় নিয়ে আমার কোন ধারনা নেই । আর এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।