দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালিদের সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের এই দিনটি বরণ করে নিতে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে জোরে শোরে চলছে নানা প্রস্তুতি। বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় জন্য চারুকলার শিক্ষার্থীরা বাঁশ-কাঠ ও রঙ তুলিতে বর্ণিল মুখোশ, রঙিন মোটিফ সহ মাটির সরা তৈরি করছে। শেষ সময়ে এসে সেই ব্যস্ততা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবে এ বছর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সহ নানা করণে শিল্পীদের চোখে মুখে শঙ্কার ছাপ দেখা গেছে।
সরেজমিনে নারাণয়গঞ্জ চারুকলা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারে মত এবারো বাংলার আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি রঙ তুলির আচড়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে লক্ষী সরা, বাঘ, পেঁচা ও হাতির মুখোশ সহ নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করছেন।
শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি ঘোড়া, ষাড় গরু, টম টম গাড়ির প্রতিকৃতি ও জাতীয় পশু বাঘ, হাতি, ইলিশ মাছ, পেঁচা সহ বিভিন্ন প্রাণীর রঙিন মুখোশ সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে। এছাড়া রঙ বেরঙের চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের তৈরি মাটির সরাও তৈরি করছে। এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে । উঠে আসবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিও।
বর্ষবরণকে ঘিরে হাতির আদলে মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলার শিক্ষার্থী প্রীন্তি পাল। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, বর্ষবরণকে ঘিরে প্রতি বছর আমরা মুখোশ, সরা ও অনুকৃতি তৈরি করে আসছি। এবার আমি হাতির মুখোশ তৈরি করছি। কাগজ কেটে ডিজাইন করে হাতির মুখোশ তৈরি করা হয়। এরপর তার উপরে বিভিন্ন রঙ দিয়ে বর্ণিল আবরণ দেওয়া হয়। মুখোশের পাশাপাশি সরা তৈরিও করেছি। বর্ষবরণের শোভা যাত্রায় এগুলো ব্যবহার করা হবে।
মুখোশ তৈরি করেছেন চারুকলার শিক্ষার্থী অর্ণিকা রায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ বাগের আদলে মুখোশ তৈরি করছি। রং ও কাগজ দিয়ে এটা তৈরি করতে দুদিন সময় লেগেছে। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী মিলে মুখোশ ও লক্ষী সরা তৈরি করছি। বিভিন্ন সময়ে সিফট আলাদা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, সময়ের আগে কাজ সম্পন্ন হবে।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শহীদ আহমেদ বলেন, এবারের আয়োজনে বড় আকৃতির কাঠের তৈরি ঘোড়া, টম টম গাড়ি ও ষাড় গরু তৈরি করেছি। বাঘ ও হাতির মুখোশ সহ বিভিন্ন ডিজাইনের প্রায় ৪০টি মুখোশ তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া ৪০টির মত মাটির সরা তৈরি করা হচ্ছে। এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে মূলত লোকশিল্পের হারিয়ে যাওয়া নানা উপসর্গকে বড় আকৃতিতে সবার সামনে তুলে ধরা হয়। আর মুখোশের বিষয়বস্তু লোকশিল্প থেকে এসেছে। আমরা মূলত লোকশিল্পের উপাদান গুলো ধরার চেষ্টা করি।
শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা শঙ্কিত থাকি। এবারও বেশ শঙ্কা রয়েছে। বৈরি পরিবেশ ও আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ বেড়ে উঠলে আক্রমনাত্নক ভাব চলে আসে। সেই বৈরি আবহাওয়া দেশের মধ্যে বিরাজমান থাকলে শঙ্কা তো থাকবেই। তবে আমরা আশাবাদী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবে। আর মঙ্গলশোভাযাত্রার ‘মঙ্গল’ শব্দটি সরকারিভাবে বাতিল করা হয়েছে। এবার আনন্দ শোভাযাত্রা নামে র্যালি বের করা হবে।
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে আমরা সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কোন ধরনের শঙ্কা নেই।
উল্লেখ্য, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে হওয়া ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র সাথে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হতো। তবে এবার সেই নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রার নতুন নাম হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।