দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যাসহ আরও দুটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) সকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে শুনানি শেষে তাঁকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, সাবেক মেয়র আইভীকে আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা ও আরেকটি হত্যা চেষ্টার মামলা।
এর আগে আদালতে শুনানির জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানিতে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন সেলিনা হায়াৎ। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে করা মোট পাঁচটি মামলার মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায়। শামীম ওসমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়লে বাদীর স্বামী রিকশাচালক তুহিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তুহিনের স্ত্রী আলেয়া আক্তার বাদী হয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ জনকে আসামি করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাটি করেন।
অন্য মামলার এজাহারে বলা হয়, একই দিন (২০ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শামীম ওসমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হকার নাদিমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তিনি বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।
তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় নাদিমের বাবা দুলাল হোসেন বাদী হয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর শামীম ওসমান ও তাঁর ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৮মে) রাত ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাড়ি চুনকা কুটিরে প্রবেশ করেন। এসময় আইভীর গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা ও তার নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইভীর বাড়ির দিকে যাওয়ার দুইটি রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইভীর সমর্থকরা। আশেপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সকলকে আইভীর বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়ার আহ্বান জানান তারা। শুক্রবার ভোরে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পথিমধ্যে তাকে বহনকারী গাড়ি বহরে হামলা করে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
পরে তাকে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জের পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সোমবার তার জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে দেয়। সাবেক মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।