দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র ষ্টাফ নাস ফ্রানচিলিয়া গমেজ অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেও সিভিল সার্জন অফিসের দূর্নীতির কারনে এখনো পেনশন পায়নি ফ্রানচিলিয়া গমেজ এর পরিবার।
গত ২৬ জুলাই রাতে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২৬ জুলাই দুপুরে মাসদাইর কেন্দ্রীয় খ্রীষ্টান কবরস্থানে সমাধি করা হয়।
২০২১ সালের জুলাই মাসে চাকুরী হতে অবসরে যান ফ্রানচিলিয়া গমেজ। অবসর নেয়ার প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখনো পর্যন্ত পেনশন সুবিধা না পাওয়ায় মানসিক টেনশনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন।
জানা যায়,ডিস্ট্রিক একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন ও জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মুশিউর রহমান,সিভিল সার্জন অফিসের জুনিয়র অফিসার আমিনুল হক, সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক নুরে আলম,ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের হিসাবরক্ষক নুরুল আমিন কে দাবীকৃত ঘুষের টাকা প্রদান না করায় ফাইল আটক করে রেখেছেন।
এমনকি ডিসি ও সির্ভিল সার্জনের লিখিত পত্র দেয়া সত্বেও নানান বাহানায় ফ্রানচিলিয়া গমেজের ফাইলটি তালাবদ্ধ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য গণমাধ্যম কর্মীরা তার অফিসে গেলে বসতে দেয়াতো দুরের কথা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
ফ্রানচিলিয়া গমেজ ১৯৮৪ সালে ৪ এপ্রিল জুনিয়র নাস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই প্রতিষ্ঠানে সুনামের সহিত ৩৭ বছর চাকুরী করে ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল তিনি অবসরে চলে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্মানের সাথে তাকে বিদায় জানান।
তার অবসরকালীন পেনশন সহ বেতন আটক করে রাখেন দূর্নীতিবাজ একাউন্ট অফিসার আনোয়ার হোসেন।
অথচ নার্সিং অধিদপ্তর, জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক পর্যন্ত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ফ্রানচিলিয়া গমেজ অবসরকালীন ও পরের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে লিখিত পত্র দেয়া হলেও আনোয়ার হোসেন কে তার দাবীকৃত ঘুষের টাকা না দেওয়ায় অনুমোদন প্রদান না করে তালবাহানা শুরু করেন।
জানা যায়,আওয়ামী লীগের দোসর আনোয়ার হোসেন গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভয়ের মধ্যে রেখেছিলেন এবং বর্তমানেও বহাল রেখেছেন।
দূর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে তার এক ছেলেকে আমেরিকায় পড়ালেখা করাচ্ছেন। এমনকি বিস্তর ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন। যা পর্যায়ক্রমে সংবাদ প্রকাশ হবে।
ফ্রানচিলিয়া গমেজের পরিবার বলেন,আনোয়ার হোসেন স্যারের কাছে ২০ বারের বেশী গেছি। আনোয়ার হোসেন স্যার বলেছেন,সিভিল সার্জন মানি ফর ম্যানেজ তাহলে আমি কেন বাদ থাকবো। সিভিল সার্জনের বাবার টাকা যে কইলে দিয়া দিমু। এছাড়াও সিভিল সার্জন অফিস ও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ক্যাশিয়ার নুরুল আমিন,আমিনুল হক ঘুষের টাকার জন্য ৪ বছর ফাইল আটক রাখায় মৃত্যুর আগে অর্থাভাবে চিকিৎসা না করতে পারায় মারা যান ফ্রানচিলিয়া গমেজ।
কোন ধরনের ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় গত ৪ বছর যাবত ফ্রানচিলিয়া গমেজের ফাইল আটকে রেখেছেন জেলা অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার আনোয়ার হোসেন।
শোকাহত
শোকাহত পরিবার বলেন, যারা ঘুষের টাকার জন্য আমার মার পেনশনের ফাইল আটকে রেখেছেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করবো। সিভিল সার্জন ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করে বদলী বানিজ্য,করোনা কিট কেলেংকারী,পেনশন সুবিধা ভোগীদের ফাইল আটক,প্রো একটিভ হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক এবং প্যাথলজি হতে মাসোহারা গ্রহন সহ নানান অভিযোগ রয়েছে। এ গুলো সব ম্যানেজ করে নুরে আলম ও আমিনুল। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর যাবত সিভিল সার্জন ডাঃ মুশিউর রহমান এখনো বহাল তবিয়তে নারায়ণগঞ্জে রয়ে গেছেন। অথচ তার থাকার কথা ২ বছর।
এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য তার কার্যালয়ে গেলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ক্যামেরা সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে উত্তেজিত কন্ঠে বলেন,আপনারা আর কোন নিউজ পাননা। এখানে কেন আসছেন।
ডিসি ও সিভিল সার্জন তো ফ্রানচিলিয়া গমেজের পেনশন সুবিধা দিতে লিখিত পত্র দিয়েছে কেন দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন,আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বললে আমি দিয়ে দিব। সেখানে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মুশিউর রহমান বলেন,আমি জয়েন করার আগে ফ্রানচিলিয়া গোমেজ অবসরে চলে গেছেন। তার কিছু সমস্যা আছে। আপনি অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলবো।