দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ‘ঘোষণা দিয়া ছয় দিন পার কইরা দিল, এহনও সরকারি চাল পাই নাই। যেইহানে মাসে চাল লাগে ৬৬ কেজি, সঙ্গে লাগে তেল, ডাল, সবজিসহ আরও কত কিছু। তার মধ্যে চাল তো দেয়ই নাই, হের মধ্যে নদীতে অন্য মাছও ধরতে দিতাছে না। নদীতে কি ইলিশ ছাড়া আর কোনো মাছ নাই’- কথাগুলো বলছিলেন মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জেলে রামদাস (৬৫)।
তিনি জানান, প্রশাসন ও পুলিশ অন্য মাছও ধরতে না দেওয়ায় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার ছয় দিন পার হলেও সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীতে নিবন্বিত সাড়ে তেরশ জেলে পরিবার ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দের ২৫ কেজি করে চাল পায়নি। এতে বিপদে রয়েছে পরিবারগুলো। আয় বন্ধ থাকায় সহায়তা হিসেবে তাদের চাল দেওয়া হয়। নদীতে অন্য মাছও ধরতে না পারায় কষ্টে দিন কাটছে জেলার অন্তত তিন হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, দু’এক দিনের মধ্যে স্থাণীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে অতি দ্রারিদ্র জেলেদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে সে নাম অনুযায়ী ৫ শত জন জেলেকে দু একদিনের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু করা হবে।
যারা নিবন্ধিত নন, তাঁদের পর্যায়ক্রমে এর আওতায় আনা হবে। এদিকে বরাদ্দের চাল না পেয়ে জীবিকার তাগিদে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে জেলেদের বিরুদ্ধে। মা ইলিশ ধরতে নদীতে জাল ফেলছেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারিভাবে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলার। উপজেলার মৎস্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মেঘনা নদীর তীরবর্তি শম্ভুপুরা, বারদী, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬৯ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে প্রায় ২৭শত ৮৬জন জেলে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যরা সহায়তা না পাওয়ায় বিপদে আছেন।
মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত ফুল মিয়া জানান, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারির পর যা সঞ্চয় ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। ইলিশ মাছ বাঁচানোর জন্য অন্য মাছও ধরতে দেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বৈদ্যেরবাজার ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী গাজী হালিম বলেন, মেঘনার পাড়ে জেলেদের নৌকাগুলো নোঙরে রয়েছে। তাঁরা সংসার চালাতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উপজেলা জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, সোনারগাঁয়ে জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে চুড়ান্ত তালিকা তৈরিতে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে এখনও চাল বিতরণ করা যায়নি। তবে আগামী দু’এক দিনের মধ্যে চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে চাল বিতরণ শুরু হবে।