সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। রোববার (১৪ জুলাই) পৌনে ৮টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। ২৬ জুন থেকে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শেষ বারের মত দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন ।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।
এ কারণে গত কয়েক মাস যাবৎ রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন। দলের সাংগঠনিক কাজে বিশেষ কর্মসূচিগুলোতে তাকে হুইলচেয়ারে করে আসতে দেখা গেছে।
এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও শপথ অনুষ্ঠানে যাননি এরশাদ। পরে তিনি হুইলচেয়ারে করে সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে শপথ নেন। অসুস্থতার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েও একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনে যেতে পারেননি সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
২৬ জুন অসুস্থতা বেড়ে গেলে এরশাদ নিজেই ব্যক্তিগত সহকারীদের নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে রক্তের রোগ মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। ৮৯ বছর বয়স্ক এরশাদের অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদের অধিকাংশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কাজ করছে না।
তার অবস্থার অবনতি ঘটলে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করাসহ এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, বিদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় নেই এরশাদ। এ কারণে সিএমএইচ হাসপাতালেই তার চিকিৎসা দেয়া হয়।
শুক্রবার সেখানে তার কিডনির ডায়ালাইসিস করা হয়। পরে জানানো হয় তার জন্য রক্ত লাগবে। এই সংবাদ প্রচার হলে এরশাদকে ‘বি পজিটিভ’ রক্ত দেয়ার জন্য হাসপাতালে ভিড় করেন দলীয় নেতাকর্মীসহ লোকজন। হাসপাতালে ভিড় সামাল দিতে না পেরে তার রক্ত লাগবে না বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের “লাল দালান” বাড়ি খ্যাত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালুসহ ৯ বছরের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকেন।
কারাগারে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রংপুর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি পল্লীবন্ধু এরশাদ।
দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদেও জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের আসনে। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসান।