নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইলে অবস্থিত লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয় একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ চরাই উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসে পৌছেছে।
লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস এর শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ততকালীন মিল মালিক এ প্রতিষ্ঠানটি নির্মান করেন। স্বাধীনতা লাভের পর মিলটি জাতীয় করন করা হলে স্কুলটিও বিটিএমসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
১৯৯৬ সালে মিলটি বিক্রি করে দেয়ার ফলে স্কুলটির ভবিষৎ অনিশ্চিৎ হয়ে পরে। কিন্তু ততকালীন সময়ে এলাকার সুশিল সমাজ ও শ্রমিক নেতাদের ততপরতায় স্কুলটি টিকে যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সাল থেকে স্কুলটি ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
সেই সময়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিন স্যার ও মুসলেহ উদ্দিন কমিশনারের অক্লান্ত পরিশ্রমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভেতরে একটি স্বনাম ধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
জমির উদ্দিন স্যারের অবসর ও মুসলেহ উদ্দিন কমিশনারের মৃত্যুর পর বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থার ক্রমেই অবনতি হয়। এর মাঝে আজিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে বাবুল ভূইয়া ও জালাল উদ্দিন প্রধানের নেতৃত্বে স্কুলের কিছুটা প্রান সঞ্চারিত হয়।
কিন্তু তাদের বিদায়ের পর অনেক দিন সঠিক নেতৃত্বের অভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা আবারও ভেঙ্গে পরে। গত ২০১৬/১৭ মেয়াদে স্কুলটিতে অভিভাবকদের ভোটে এলাকার স্বনামধন্য প্রবীন চিকিৎসক মরহুম ডাক্তার আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের পরিবার থেকে তার বড় ছেলে ডাক্তার এম এ মোতালেব ও ছোট ছেলের পুত্রবধূ সাদিয়া ইসলাম ময়না নির্বাচিত হয়ে কমিটিতে আসেন।
সেই সময়ে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও কমিটির অন্য সদস্য আমিনুল ইসলাম এবং আলী আহম্মদ মোল্লার সহযোগীতায় স্কুলটিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতি হয়। ডাক্তার মোতালেব কমিটিতে থাকা সময় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ছাত্রী-ছাত্রীদের শিক্ষামুখী করার লক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ মেধা পুরুষ্কার প্রদান করেন। সে সময়ে ছাত্রী-ছাত্রীদের বসার বেঞ্চ, ক্লাস রুমের স্বল্পতার কারনে স্কুলটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।
প্রভাতী শাখায় মেয়েরা এবং দিনের শাখায় ছেলেদের ক্লাস সিস্টেম চালু করা হয়। যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন ক্লাস নিতে সুবিধা হচ্ছে অপরদিকে ইভটিজিং রোধ করা গেছে। ডাক্তার মোতালেব কমিটিতে থাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত স্কুল চলাকালীন সময়ে হঠাৎ অসুস্থ হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে আসছেন ফ্রি।
কেন না তার ফাম্মিসিটি স্কুল গেট সংলগ্ন। তার সময়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের সিলেবাস বহির্ভূত জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি আধুনিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের নেতৃত্বে স্কুলটিতে রাস্তা. শহীদ মিনার, ডিপ টিউব ওয়েল ও বিভিন্ন দাতা গনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে করার নানা উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু স্কুল ফান্ড থেকে কোন অর্থ ব্যয় করে কোন উন্নয়ন করা হয়নি।
উপরোন্ত অনেকেই অবগত আছে যে, প্রতিটি স্কুলে প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আয় করে। ইতিপূর্বে যা শিক্ষক ও কমিটির লোকজন ভোগ করত। তাদের সময়ই সর্ব প্রথম এই অর্থটি স্কুল ফান্ডে জমা করা হয়। শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষক স্বল্পতা রোধকল্পে নতুন ১৪ জন অবিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। যাতে কোন দূর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি।
এর কারনে ছাত্র-ছাত্রীদের সামান্য বেতন বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে স্কুলের সুসজ্জিত গেটটি নীট কর্নসার্নের মালিক জাহাঙ্গীর সাহেবের কাছ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা ফান্ড সংগ্রহ করা হয়। বর্তমান কমিটির প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্লাস রুম থাকা সত্বেু স্কুল ফান্ডের অর্থে একটি নতুন ভবন নির্মান করে ও ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ বিনষ্ট করে বিভিন্ন জীব-জন্তুও মূর্তি স্থাপন করা হয়।
কোন কারন ছাড়াই প্রতিটি ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী গড়ে ৮০ টাকা হারে বৃদ্ধি করা হয়। কোন ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে পর পর ৩ দিন অনুপস্থিত থাকলে নাম কর্তন ও পূন নাম সংযোজন করার জন্য ৩০০ টাকা করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ৫ম শেণীর কোচিং ফি এর নামে প্রতিটি শিক্ষাথিৃও নামে ৮০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
এ সকল বিষয় বনিবনা না হওয়ায় স্কুলের নির্বাচিত সদস্য সালাউদ্দিন গত এক বছর পূর্বে তার সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে এবং কমিটির মিটিং এ অনুপস্থিত থাকে। এতো কিছুর পরেও শিক্ষা মানের অবনতি চলে আসছে। ফলে স্কুলটিতে শিক্ষার্থির সংখ্যা ক্রমেই কমছে।
এ অবস্থায় আবারও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে। অভিভাবকের মতে, স্কুলটি যাতে পূনরায় ফিরে পায় পূর্বের ঐতিহ্য। এ কারনে আমরা সৎ, যোগ্য ও মেধাবি অভিভাবক প্রতিনিধি চাই।