দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: জাহাজী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী ২০ হাজার টাকা, মৃত্যুকালিন ক্ষতিপূরণ ১২ লক্ষ টাকা ও নৌপথে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, শ্রমিক হয়রানি বন্ধসহ ১১ দফা দাবীতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং ঘাটে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন থেকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্থাপিত ১১ দফা দাবী না মানা হলে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে জাহাজী শ্রমিকরা একযোগে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করার আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি মঈন মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নিজামউদ্দিন খান, দপ্তর সম্পাদক কবির হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ও দশআনি মোহনপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, গোদনাইল শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
বক্তব্যে সবুজ শিকদার বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা জাহাজ পরিচালনা করে আসছে। নৌযান শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। আজকে দ্রব্যমূল্যের উধ্বর্গতির কারণে শ্রমিকদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি মানা হচ্ছেনা। শ্রমিক নামধারী কিছু দুস্কৃতিকারীর সঙ্গে মালিকপক্ষ আতাঁত করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে।
মালিকরা সকল সেক্টরে সুবিধা পেলেও শ্রমিকরা কোন সুবিধা পায়না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অবিলম্বে আমাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে জাহাজী শ্রমিকরা একযোগে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবে। তখন জাহাজী শ্রমিকদের দোষ দেয়া যাবেনা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জাহাজী শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, রিলিজ পত্র সার্ভিস বুক মালিক কর্তৃক প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাদাবাজী, নৌ-প্রশাসনের হয়রানী বন্ধ ভারতগামী জাহাজী শ্রমিকদের লেডিংপাস, পোর্ট ভিসা ও সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বান্ধহেড, ড্রেজার, ট্রলার রাত্রিকালিন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
মংলা, পায়রা বন্দর সহ সকল নৌ-বন্দরে জাহাজ রাখার পোতাশ্রয় নির্মাণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া গোয়াইনঘাট সিলেট, ছাতক সুনামগঞ্জ, ডেমরা ঢাকা সহ বিভিন্ন নদীতে বিআইডব্লিউটিএ ইজারার নামে চলন্ত নৌযান থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হবে।ইনল্যান্ড মাষ্টার, ড্রাইভার, সুকানী, গ্রিজার, শীপ পরীক্ষার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরে পরীক্ষার সু-ব্যবস্থা করতে হবে। এসময় তারা তাদের ১১ দফা দাবিগুলো আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের আগে মেনে নেওয়ার দাবি জানান।
নৌযান শ্রমিকদের ১১ দফা দাবিগুলোর অন্যতম দাবি হলো, জাহাজী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী ২০ হাজার টাকা, মৃত্যুকালিন ক্ষতিপূরণ ১২ লক্ষ টাকা, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, রিলিজ পত্র সার্ভিস বুক প্রদান করতে হবে। নৌপথে সন্ত্রাস, চাদাবাজী, ডাকাতি বন্ধ, নৌ-প্রশাসনের হয়রানী বন্ধ, জাল ফেলে চ্যানেল বন্ধ, বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারার নামে চলন্ত নৌযান থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী শ্রমিক হয়রানী বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ সকল বন্দরে জাহাজ রাখার পোতাশ্রয় নির্মাণ ও ঘাট ইজারাদার কর্তৃক শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
ইনল্যান্ড মাস্টার ড্রাইভার সুকানী গ্রীজার পরীক্ষায় দালালদের দৌরাত্ম্য ও সকল প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালে পরীক্ষা ও নৌ আদালতের ব্যবস্থা করতে হবে। নৌযানে কাগজপত্র দেখার নামে নৌ প্রশাসনের সকল প্রকার হয়রানী, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ভারতগামী নৌযান শ্রমিকদের লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পাশ, সার্ভিস ভিসা ও জাহাজে ফ্রিজিং ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকদের সুবিধামতো স্থানে দৈনন্দিন বাজারঘাট করার জন্য পারাপারের নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।