দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জে কাঁচাবাজার,মাছ, মাংসের বাজার গুলোতে বেড়েই চলেছে সবজি, মাছ,মাংসের দাম। রমজানের প্রথম দিন থেকেই গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম ১০-৩০ টাকা বেড়েছে। আর মাছের দাম বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা,সেই সাথে মুরগিতে ২০-৩০ টাকা ও মাংসে ৫০-১০০ টাকা বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার।
রবিবার (২৬ মার্চ) সকালে জেলার বৃহৎ কাঁচাবাজার দিগুবাবুর বাজার,পাঁচ নাম্বারে মাছ ঘাট সহ মাংসের বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
বাজারে ঘুরে দেখা গেছে,সবজিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, শসা ৩০ টাকা বেড়ে ৭০, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা বেড়ে ১০০, লেবু হালিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৮০-১০০, পটল ৩০ টাকা বেড়ে ৭০, ঢেড়স ৩০ টাকা বেড়ে ৮০, পেঁপে ১০ টাকা বেড়ে ৩০ ও টমেটো ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। দাম বাড়ায় চাহিদা মতো সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।
একই সাথে মাংসের বাজারগুলোতে দেখা যায়, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকা,খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০-১১০০ টাকা,বয়লার মুরগি কেজি প্রতি ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ -২৬০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩২০ থেকে বেড়ে ৩৫০টাকা,দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০-৬০০ টাকা,লেয়ার ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ ও সোনালি ৪০ টাকা বেড়ে ৩৬০ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, এছাড়াও একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দাম কেজি প্রতি ১০০-২০০ টাকা। প্রকারভেদে মাছের দাম কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি সাইজের ইলিশ কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার, বড় রুই দেড়শ টাকা বেড়ে ৫০০, ছোট রুই ১০০ টাকা বেড়ে ৩০০, চিংড়ি ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ও ছোট চিংড়ি দেড়শ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়েছে।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে কাঁচামাল ও মাংস কম কিন্তু চাহিদা বেশি। তাই দাম বাড়ছে।
শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম এত বেশি বেড়েছে যে চাহিদা মতো কিনতে পারছি না। আর আমাদের মত নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আরেক ক্রেতা জামতলার বাসিন্দা মিনুয়ারা বেগম বলেন, আজ ৩য় রোজা। তাই পরিবারের জন্য বাজার করতে এসেছি। কিন্তু যেভাবে দাম বেড়েছে, তাই অল্প কিছু সবজি কিনেছি ও মাংস কিনেছি।
সরকারি প্রাইমারি স্কুলের জয়নাল আহমেদ জানান,বর্তমান সবজি আর মাছ মাংস যাই বলেন সব সামর্থ্য এর বাহিরে চলে এসেছে সব কিছু। যেখানে আগে ৪০০-৫০০ টাকা নিয়ে আসলে ব্যাগ ভর্তি বাজার নেওয়া যেতো সেখানে এখন ব্যাগের এক কোনাও ভরে না এই টাকায় বাজারে। লাফিয়ে লাফিয়ে সব কিছুর যে হারে দাম বাড়ছে আমাদের তো বেতন সেভাবে বাড়ছে না। আল্লাহ না করে সামনে না খেয়ে থাকতে হয় কিনা।
এদিকে খুচরা সবজি বিক্রেতা দেলোয়ার বলেন, আমাদের এখানে সবজি আসে কাওরানবাজার, মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, বেনাপোলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। সঙ্গে সবজির দামও বেড়েছে। তাই কী করবো। চাহিদা অনুযায়ী সবজি নেই। তাই এ অবস্থা হয়েছে। আর বাজারে কাঁচামালে দাম কম বা বেশির সঙ্গে আমাদের কোন হাত নেই। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে কেজিতে মাত্র ৫ টাকা বেশি বিক্রি করি।
মাছ বিক্রেতা রিপন বলেন, মাছের দাম কেজিতে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমরা কী করবো। বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের ৫ নং ঘাটের মৎস্য আড়তদার জানান, আমাদের কিছুই করার নেই। হঠাৎ করে মাছের দাম বেড়েছে। কারণ বিভিন্ন আড়ৎ থেকে বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মাছও কম। এছাড়া পাইকারি দাম অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে মাছ ব্যবসায়ীদের কী করার আছে। বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
দিগুবাবুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, আসলে আমাদের চাহিদামতো পণ্য বাজারে নেই। যে হারে চাহিদা বেড়েছে, সেভাবে পণ্য বাড়েনি। বেগুন, শসার সংকট দেখা দিয়েছে। যেহেতু এই জেলায় সবজি উৎপাদন তেমন নেই। তাই কাওরানবাজার,মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি এখানের আড়তে আসে। তারপর খুচরা ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে বিক্রি করেন। তবে দু-তিনদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।