দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: আপন আলোয় উদ্ভাসিত জয়িতারা। জয়িতাদের সাফল্যের গল্পগুলো আসলেই ঈর্ষণীয়। দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা আজ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে।
তাদেরই একজন মাসাম্মৎ রওশন আরা বেগম । বয়স প্রায় ৬১ এর কোঠায়। জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে আজ তিনি গর্বিত। শুধু তাই নয়, সফল জননী হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার রুসেন হাউজিং এর বাসিন্দা ।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় ঃ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা দাপা মসজিদ এলাকায় জন্ম। বাবার নাম জহির উদ্দিন আহমেদ, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা মমতাজ বেগম সু- গৃহিনী। তিনি আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। শৈশব ও কৈশর জীবন ঃ নারায়নগঞ্জে শৈশব ও কৈশরকাল কেটেছে। শিক্ষা জীবন: তিনি নারায়নগঞ্জ গভ: গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠ নেন এবং নারায়নগঞ্জ তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের জন্য পিটিআই ট্রেনিং সম্পন্ন করেছেন।
তিনি হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক (ডি.এইচ.এম.এস) হিসেবে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন নারায়নগঞ্জ তানজিম হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে। চাকুরী জীবন: তিনি সরকারী চাকুরীতে ১৯৯০ সালে যোগদান করেন। পরবর্তিতে দীর্ঘ ২৯ বছর এফ.ডব্লিউ.ভি পদে সরকারী চাকুরীতে সফলতার সাথে কর্মজীবন সম্পন্ন করেছেন এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি অবসরে যান। এই সফল কর্মজীবনে তিনি (মা ও শিশু বিষয়ক) বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং গ্রহন করেন এবং অত্যন্ত সুনামের সাথে মা ও শিশুদের সেবায় নিজেকে নিয়জিত করে রেখেছিলেন। এফ.ডব্লিউ.ভি পদে প্রথম যোগদান করেন ১৯৯৪ সালে এবং তিনি পরিবার কল্যান পারদর্শীকা হিসেবে শ্রেষ্ঠ পদকে ভূষিত হন।
২০১৬ সালে এবং তিনি বর্তমানে অবসর জীবনেও ব্যস্তময় জীবন অতিবাহিত করছেন মা ও শিশু সেবা এবং হোমিও প্যাথিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে। বৈবাহিক অবস্থা: ১৯৮১ সালে তাঁর বিয়ে হয় আলিগঞ্জ অধিবাসি ব্যবসায়ী মোঃ সামসুদ্দিনের সাথে। তিনি বিবাহিত জীবনে পাচঁ সন্তান (৪ কন্না ও ১ পুত্র) এর মা হিসেবে সফল নারীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি সফল কর্মজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনে নানা ঘাত প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়ে তার ৫ সন্তানকে (ব্যক্তি জীবন+শিক্ষা জীবনে) সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন। তিনি এক অনন্য গর্বিত নারীর ভূমিকা পালনে আজও পিছপা হননি। ডাক্তার শারমিন সুলতানা সেতু (তাঁর বড় মেয়ে) বর্তমানে মেডিসিন কনসালট্যান্ট হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন।
তিনি এমবিবিএস পাশের পর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন ইন্সটিটিউট থেকে এফসিপিএস (ইনর্টানাল মেডিসিন) এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন পাশাপাশি তিনি দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন ট্রেনিং গ্রহন করেন। তিনি বারডেম হাসপাতাল থেকে ডায়াবেটিসের উপর কোর্সও সম্পন্ন করেছেন।সাজিয়া সুলতানা (তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে) বর্তমানে সেফ ফিজিওথেরাপী এন্ড হেলথ কেয়ার এবং রওশন ফিজিওথেরাপী রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের কর্ণধার এবং একই সাথে ফিজিও কনসালট্যান্ট হিসেবে সেবা দিচ্ছেন। তিনি ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপী (বিপিটি) কোর্স সম্পন্ন করার পর হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর উপর এম.পি.এইচ করেন। পাশাপাশি তিনি দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং গ্রহন করেছেন (স্পোর্টস ফিজিও থেরাপী, অর্থোপেডিক মেডিসিন, অটিজম ফিজিওথেরাপী)। সাবরিনা সুলতানা (তাঁর তৃতীয় মেয়ে) বর্তমানে জুনিয়র সহকারী ভাইস-
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মিউচয়াল ট্রাস্ট বাংক লিঃ (এম আই টি এস) এ কর্মরত আছেন। তিনি বাংকিং ক্যরিয়ার শুরু করেন ২০১৩ সালে ইস্টার্ন বাংক লিঃ পরীক্ষামূলক
অফিসার হিসেবে। তিনি বি.বি.এ সম্পন্ন করেন-বধাক বিশ্ববিদ্যালয় (ফিনান্স এন্ড বাংকিং) এবং এম.বি.এ সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ২০০৪ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে ইংরেজি ভার্সন বিভাগ থেকে একমাত্র ছাত্রী হিসেবে জিপিএ ৫.০০ প্রাপ্তির সুনাম অর্জন করেছেন। সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সুরভী সুলতানা লন্ডনের বি.পি.পি ইউনিভার্সিটি থেকে এল এল এম ইন কম্পারেটিভ কর্মাশিয়াল ল’ উইথ মেরিট এবং ব্যরিস্টার এট ল’ সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলস টিধনিটি সেইন্ট ডেভিড থেকে এমবিএ ডিগ্রী
সম্পন্ন করে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইনজীবী হিসেবে সফলতার সহিত প্র ̈াকটিস করছেন। ৫. তার একমাত্র ছেলে মিজানুর রহমান রিফাত, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বর্তমানে বিদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার জীবনে নানা প্রতিকুলতা সবসময়ই ধাওয়া দিয়ে এসেছে। কিন্তু তার জীবনের একটাই লক্ষ ̈ ছিল নিজের সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে সর্বোচ্চ স্থান নিয়ে যাবে এবং মানুষের মত মানুষ করবেন। তিনি সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চাকুরি করে, নিজের সংসার সামলিয়েও আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে নিজের অনবদ ̈ প্রচেষ্টা চালিয়ে ছেলেমেয়েদেও পড়ালেখা শিখিয়েছেন, কোন সন্তান কেই কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেননি।
তিনি যেমন চাকুরী জীবনে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন ঠিক তেমনি ব্যক্তি ও সংসার জীবনে একজন সফল ও স্বার্থক মায়ের ভূমিকা পালন করে চলেছেন আজও। স্ত্রী হিসেবে তিনি যেমন সফল নারী, তেমনি একজন সফল মেয়ে হিসেবেও নিজের বার্ধক্য মায়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে। তাই পরিশেষে বলা যায়, শুধু সফল জননীই নয়, একজন সফল নারী হিসেবেও তাকে সমাজ ও রাষ্টধ কর্তৃক পুরুস্কৃত করা দরকার। এই নারী প্রমাণ করতে চলেছে একজন নারীর সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতাই একটি সুন্দর ও সুশীল জাতি গড়ে উঠাতে পারে, তিনি এই সমাজের একটি সুশীল দৃষ্টান্ত।