দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ শহরের অন্যতম প্রান কেন্দ্র চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে সরগম থাকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকুরীজীবিরা। কিন্তু দিনদিন অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে উঠছে এই শহীদ মিনার ও তার আশেপাশে ফুটপাত দখল করে বসা চায়ের ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোর জন্য।
অধিকাংশ দোকানগুলোতেই ব্যবহৃত হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলেন্ডার যা শহীদ মিনারের পাশে অবস্থিত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার একেবারে নিচে অবস্থান করছে এই দোকানগুলো আর যেকোন সময় ছোট দূর্ঘটনা থেকে ঘটতে পারে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এবং ঝরতে পারে শতাধিক মানুষের প্রান ।
সরেজমিনে গিয়ে মঙ্গলবার(১৬ নভেম্বর)দেখা যায় এই চিত্রটি শহীদ মিনারে। দেখা যায়,ব্যস্ততম এই শহরের চাষাড়ার কাছাকাছি একমাত্র শহীদ মিনার হওয়ায় স্কুল,কলেজ সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সকলের সমাগত শুরু হয় সকাল থেকেই এখানে। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাশ শুরু ও শেষ করে সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আড্ডায় বসে এই শহীদ মিনারে।
আবার সকালে চাকুরীতে যাবার আগে এবং ছুটির পরও অনেকেই আড্ডা দেবার এবং চা খাওয়ার প্রধান স্থান হিসেবে বেছে নেয় এই শহীদ মিনারটি। অনেকেই বিনোদন ও ফুটপাতের মুখরোচক খাবারের জন্যও স্ত্রী,সন্তান ও কেউ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে আসে সন্ধ্যার পর শহীদ মিনারে। এছাড়াও রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন অধিকার আদায় সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ জানাতে বেছে নেয় এই শহীদ মিনারকে। দিনে কত হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় এই শহীদ মিনারে।
অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থ লাভের আশায় এবং কিছু নিন্ম আয়ের লোক ব্যবসায়ী লাভের প্রলোভনে পড়ে ফুটপাত দখলকারীদের সাহায্যে শহীদ মিনার ও তার আশেপাশে বসিয়েছে হরেক রকম মুখরোচক খাবার ও চায়ের দোকান। যার জন্য তাদের দিতে হয় প্রতিদিন ৭০-১২০ টাকা বিভিন্ন দোকান অনুপাতে চাঁদা। আর অধিকাংশ ফাস্টফুডের দোকানেই ব্যবহার করছে এলপি গ্যাস সিলেন্ডার যা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার একেবারে নিচে।
শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যাওয়া এক ব্যাংক কর্মচারীর সাথে কথা হলে তিনি জানায়,আমার মাঝে মাঝে এই শহীদ মিনারে সন্তানদের আবদারে আসা হয়। তাছাড়া অফিসের সহকর্মীদের সাথে করে চা খেতে আসতে হয়। আমি প্রায়ই লক্ষ্য করি এখানে অনেক দোকান ফুটপাত দখল করে বসেছে। প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন কঠোর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা কিভাবে সহজেই দোকান চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখি পুলিশ এসে দোকান উচ্ছেদ করে। কিছু দিন দোকানপাট বন্ধ থাকে আবার বেচাকিনা শুরু হয়। কিন্তু এই সকল দোকানগুলোর অধিকাংশ দোকানেই এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে মানুষ মৃত্যুর কারন হতে পারে। এই জন্যই আমার এই শহীদ মিনারে আসা কম হয়।
একজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানায়,আমরা কিছুদিন পর পর শহীদ মিনারের আশেপাশে এবং বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত দখল করে যেসকল দোকান বসেছে তা উচ্ছেদ করি। উচ্ছেদ করে যাবার ঘন্টা দুয়েক পরে আবার বসে যায় এই সব দোকানপাট। আমাদের পুলিশের লোকবলও কম। এখন আমরা আমাদের সবটা দিয়েই চেষ্টা করছি ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করার কিন্তু এই যে ফুটপাতে বসা দোকানদারা বেশি লাভের আসায় ফুটপাত ছাড়তেই নারাজ। আমরা হকার উচ্ছেদ করলেই তারা শুরু করে দেয় আন্দোলন।
শহীদ মিনারে আসা সরকারী তোলারাম কলেজের কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়,আসলে এতদিন এই বিষয়টা আমরা লক্ষ করি নাই। ট্রান্সফরমার নিচেই এলপি গ্যাস ব্যবহার করছে ফাস্টফুডের দোকানগুলো। আমরা নিজেরাও এই দোকানগুলোতে গিয়ে খাই। হঠাৎ করে যদি কোন আগুনের ফুলকা এলপি গ্যাসের সিলেন্ডারে পড়ে তাহলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটবে এখানে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে অতিদ্রুত শহীদ মিনারের আশেপাশে এলপি গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবহারকারী দোকানগুলো উঠিয়ে ফেলার জন্য।
একটি সূত্র জানায়,প্রতিদিন ছোট চায়ের দোকান থেকে ৭০ টাকা,ফাস্টফুডের দোকান থেকে ১২০টাকা,ভ্যানগাড়ি থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। যা প্রতিদিন গড়ে আয় হয়
৩২ শ টাকা। যা সপ্তাহে দাঁড়ায় ২২৪০০ টাকা এবং মাসে হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এর মধে প্রতি সপ্তাহে চাষাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জকে দেওয়া হয় ১০০০ হাজার করে টাকা এবং সকালে টহলকৃত পুলিশকে ৪০০টাকা এবং বিকেলে টহলকৃত পুলিশকে ৪০০টাকা। ফাঁড়ির ইনচার্জ ও টহল পুলিশকে মাসে দাঁড়ায় ২৮ হাজার টাকা। বাকি ৭২ হাজার টাকা আজাদ,কালাম ও মানিক ভাগভাটরা করে নেয়। আর এরাই ট্রান্সফরমারের নিচে ফাষ্টফুডের দোকানীদেরকে এলপি গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান অনেক দোকানী।
সূত্র আরো জানায়,মানিক নিজেকে আইজিপির আত্বীয়ের পরিচয় দিয়ে ফুটপাতের দোকানে বসা দোকানদার টাকা দিতে বাধ্য করে। অন্যদিকে কেউ টাকা না দিলে তাকে থানায় ডুকিয়ে দেবার ভয় দেখায় আজাদ ও কালাম। যারা সব সময় সদরের ওসি তদন্তের ঘনিষ্ট লোক বলে পরিচয় দিয়ে বেড়ায়।
চাঁদার বিষয়ে ফুটপাতে বসা দোকানদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। অনেকে স্বীকার করলেও নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক প্রকাশ করে। তারা জানায়,বাধ্য হয়ে প্রতিদন টাকা দিতে হয়। আর টাকা না দিলে কালাম,আজাদ ও মানিক দোকান নিয়ে এখানে বসতে দেয় না। আর এই যে ছোট যে জায়গাটা দেখছেন দোকান দিয়ে বসছি এই জায়গাটার জন্যও আমাদের দিতে হয় টাকা। কাউকে ৪৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। দোকান কালাম,আজাদ আর মানিকের কাছ থেকে না কিনলেও তারা বসতে দেয় না। এই শহীদ মিনারের হর্তাকর্তা এখন তারাই। তাদের কথাই এখানে দোকান বসে ও উঠে।
উপরে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার থাকার পরও কেনো এখানে এলপি গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবহার হচ্ছে ফাস্টফুডের কিছু দোকানদারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়,দোকানে বেঁচা কিনা করতে হলে তো গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবহার করতে হবে। আর কেরোসিনের যে দাম বেড়েছে তা ব্যবহার করাও সম্ভব না। আর তাছাড়া খাবারের দোকান এটা। এখানে হঠাৎ কোন খবারে কেরোসিন পড়লে সমস্ত খাবার হবে নষ্ট। তাই বাধ্য হয়েই এলপি গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবহার করছি।
চাষাড়া শহীদ মিনারের আশেপাশে অর্ধশতাধিক চা ও ফাস্টফুডের দোকান। এদের অধিকাংশ দোকানেই এলপি গ্যাস সিলেন্ডার হচ্ছে ব্যবহার। আর শহীদ মিনারের আশেপাশে রয়েছে একাধিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। শহীদ মিনার ও তার আশেপাশ দিয়ে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত এবং মিনারের ভিতরে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম যেকোন সময় ছোট দূর্ঘটনা থেকে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এবং এদের মৃত্যুর দায়ী হতে পারে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসন সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে।