দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জ জেলার আলোচিত ও জনপ্রিয় দুই মুখ শামীম ওসমান ও ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। একজন সংসদ সদস্য ও অপরজন নগরমাতা। তাদের একজন প্রভাবশালী ও অপরজন আপামর জনতার। আগামী ১৬ই জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নারায়ণগঞ্জের সর্বজন গ্রহনযোগ্য সাবেক সফল মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। অপরদিকে নিজের অনুগতদের মেয়র পদে প্রার্থী বানাতে বিফল এ মেয়রের জন্য কতই না গীবত বা অপপ্রচার চালিয়েছেন এই সাংসদ ও তার সমর্থকরা। কিন্তু কোন অপপ্রচারই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আমলে দিতে পারেনি এ প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তি।
কারন শামীম ওসমানের অনুগত নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল,মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খোকন সাহা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীলকে কেন্দ্র থেকে নৌকা মনোনয়ন না দিয়ে সেলিনা হায়াত আইভীকে দেওয়া হয়।
এদিকে গত ২০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী ডা.সেলিনা হায়াত আইভীর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দিতে প্রধানমন্ত্রী একটি ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকেন। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে একসাথে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না উপস্থিত শামীম ওসমান। বৈঠক এড়াতেই শামীম ওসমান কবরস্থানে গিয়ে কান্নাকাটি করে সময় পার করেন।
কেননা, শামীম ওসমান সারাবছর আইভী বিরোধীতা করে এসেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে কবরস্থান বেছে নেন। ঢাকায় বৈঠক চলাকালে শামীম ওসমান মাসদাইর কবরস্থানে প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করেন। সে সময় দাদা-দাদী, বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের জন্য কেঁদেছেন। ২৪ ডিসেম্বরও কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীরা এসে আইভীকে সমর্থন জানালেও সেদিনও কেন্দ্রীয় নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাইফেল ক্লাবে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ফতুল্লার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
তবে ইতিমধ্যেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নৌকাকে জেতাতে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান এখনও পর্যন্ত মাঠে নামেনি নৌকার প্রার্থী আইভীর জন্য। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে আইভী ও শামীম ওসমান এক অপরের প্রতিপক্ষ। তবুও মাঝে-মধ্যে ভাই-বোনের সর্ম্পক নিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে নাটক উপস্থাপন করেন শামীম ওসমান যা নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষই জানেন।
এদিকে কোন সভা-সমাবেশ কিংবা যে কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মিডিয়া জুড়ে ভেসে থাকতে ভালবাসেন শামীম ওসমান। আগামী ১৬ জানুয়ারীর নির্বাচন উপলক্ষে নৌকার পক্ষে এখনও মাঠে নামেনি তিনি তাই এই নিয়ে সাধারন জনমনে জেগেছে বিস্তর প্রশ্ন। কবে শামীম ওসমান আইভীকে সমর্থন করে কবে করবে সংবাদ সম্মেলন বা কবে নামবে মাঠে ?কবে আবার নারায়ণগঞ্জের মাটি হবে গরম শামীম ওসমানের আগাম বার্তা নিয়ে?
কিন্তু অনেকেই বলছেন অপেক্ষা করুন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই শামীম ওসমান মাঠে নামবেন নৌকার পক্ষে কেননা নৌকা জেতাতে তার নেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
আবার কেন্দ্র থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিজয় সমাবেশে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এড.জাহাঙ্গীর কবির নানক,আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, বি এম মোজাম্মেল হক, আহমদ হোসেন, মৃণাল কান্তি দাস এমপি, আবদুর রহমান,
আড়াইহাজারে এমপি নজরুল ইসলাম বাবু সমর্থন জানান সেলিনা হায়াত আইভীকে। এছাড়া ২৮ ডিসেম্বর জেলা যুবলীগের আয়োজনে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হোসেন খান নিখিল ও ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ,সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান সহ কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন নেতাকর্মীরা এসে সমর্থন জানাচ্ছেন নাসিক নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীকে।
নৌকার পক্ষে এখনও চুপ রয়েছেন শামীম ওসমান এনিয়ে আওয়ামী লীগের তৃনমুলে শুরু হয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন। কেউ বললেন এমপি সাহেবের অভ্যাস রয়েছে কিছু করার আগে সংবাদ সম্মেলন করার হয়তবা সেটার মাধ্যমেই ঢাক-ডোল পিটিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মাঠে নামবেন। কারন ২০১১ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানের প্রতিপক্ষ ছিলো আইভী। আবার ২০১৬ সালে নৌকার প্রার্থী আইভীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেই মাঠে নেমেছিলেন শামীম ওসমান। এবারও হয়তবা তেমনী কিছু একটা করবেন তিনি।
আবার কেউ কেউ বলছেন তিনিও তো চেষ্টা করেছিলেন তার অনুগত কেউ এনসিসিতে মেয়র প্রার্থী হোক। কেউ মনোনয়ন পায়নি তাই তিনি রাগ-গোস্যা করে চুপসে বসে আছেন। তার উপর আবার আইভী বলে কথা। যাকে তিনি সর্বক্ষন শত্রু হিসেবেই মনে করেন। কেউ কেউ বলছেন শামীম ওসমানের নিরবতা প্রমাণ করছে তার অনুগত কেউ মেয়র না হওয়ায় আইভীর বিরোধী তৈমূর আলমকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সংবাদ সম্মেলন হলেই জানা যাবে আসল রহস্য কি এখনো আইভীর পক্ষে মাঠে না নামার কারন শামীম ওসমানের।