দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ফতুল্লা মডেল থানায় নতুন বছরের প্রথম মাসে ৮৫টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে মাদক ৩৭,চুরি ৭, চাঁদাদাবী ৬,অপহরন ১,নারী ও শিশু সংক্রান্ত ১৩,অস্ত্র আইনে ১ এবং দ্রুত আইনে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। আর গত ১ মাসে ফতুল্লা মডেল থাসায় মাত্র ২৬৫ পিস ইয়াবা,১৬ কেজি ২শ গ্রাম গাজা এবং সাড়ে ৪০ গ্রাম উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
এছাড়া নিয়মিত মামলায় ১২৪ জন,বিভিন্ন সাজা ও ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত ১৫ জন,জিআর মামলায় ৫৯ জন এবং সিআর মামলায় ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ পাশাপাশি গত ৩১ দিনে থানা এলাকায় ৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা মডেল থানাধীন এলাকাগুলো বহিরাগত লোকের বসবাস অনেকটাই বেশী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক লক্ষাধিক লোক এ থানা এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপকালে তারা জানান, জেলার ৭টি থানার মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপুর্ন থানা হচ্ছে ফতুল্লা মডেল থানা। বহিরাগত ব্যক্তিদের বসবাস বেশী এবং শিল্প অধ্যুষিত হওয়ার ফলে এখানে অপরাধ প্রবনতা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে।
অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হচ্ছে মাদকের ভয়াবহ অবস্থা,কিশোরগ্যাং, ভুমিদস্যুতা,চুরি-ছিনতাই। থানা পুলিশের অনেকটা নিরবতা ভুমিকা এ সকল অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধকর্ম করতে সহায়তা করছে বলে অভিমত অনেকের। থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাদক বিক্রি যেন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে। যা পুলিশ সদস্যরা দেখেও না দেখার ভান করছে। তাদের মতে গত একমাসে থানা পুলিশ যে মাদক উদ্ধার করেছে তা মাত্র একজন বিক্রেতার কাছেই থাকে। ফতুল্লা রেলষ্টেশন, দাপা ইদ্রাকপুর, লালপুর, ইসদাইর বাজার, তল্লা রেললাইনের নতুন সংযোগ সড়ক, পঞ্চবটী হরিহরপাড়া, গাবতলী, মাসদাইর বাজার, মাসদাইর গুদারাঘাট, ঘোষেরবাগ, বেকারীর মোড়, দেওভোগ নুর মসজিদ, কাশিপুর, ভোলাইল, নরসিংপুর, মুসলিমনগরসহ প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় প্রতিদিন যেহাওে মাদক বিক্রি হচ্ছে তা প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে।
স্থানীয়দের অভিমত, থানা থেকে বের হওয়া টহল টিমগুলো পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন ক্লাবে কেরাম বোর্ড কিংবা চা দোকানগুলোকে মোবাইলে লুডু খেলায় ব্যস্ততার সময় কাটিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ টহলে নামে নামমাত্র ডিউিট করায় চিহিৃত মাদক বিক্রেতারা তাদের মাদক বিক্রি করছে ওপেনভাবে। যার ফলে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি,অপরাধ প্রবনতাসহ নানাবিধ কারনে থানা আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে থানার বিভিন্ন এলাকায় ভুমিদস্যুতার সংখ্যাও বেড়ে চলছে। প্রতিদিনই থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করছে ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে চুরি ও ছিনতাই বেড়েছে আশংকাজনক হারে। থানা পুলিশের টহল ব্যবস্থা অনেকটা চুপসে যাওয়ার ফলে প্রতিদিনই কোন না কোন পাড়া-মহল্লায় এরুপ ঘটনা ঘটেই চলছে।
মাসদাইর,গাবতলী ও কাশিপুর এলাকার অনেকেই বলেন,ইতিপুর্বে ফতুল্লা মডেল থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হতো। সেখানে থানাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারন মানুষ ওপেন হাউজ ডে’তে উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যাগুলো পুলিশের সামনে উপস্থাপন করা হলে তা সমাধান হতো। কিন্তু ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো.রিজাউল হক দিপু গত বছর মাঝামাঝি সময়ে যোগদান করার পর মাত্র দুইবার ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকী সময়ে কোন ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়নি।
যার ফলে থানাধীন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাধারন মানুষগুলো তাদের সমস্যাগুলো পুলিশের সামনে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন আর মাদক,সস্ত্রাস,চুরি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধগুলো থেকে উত্তরনে পরিবর্তে মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই কোন না কোন বেগতিক অবস্থার শিকার হচ্ছেন তারা। নাইট ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারী কিংবা বখাটে প্রকৃতির ছেলেদের মুখোমুখি হচ্ছে গার্মেন্টস কর্মীরা। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মাসের প্রথম কিংবা ২য় সপ্তাহে বেতনের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উক্ত বখাটেরা তাদেরকে আটক করে পুরো টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
এ ধরনের কাজগুলো বেশী হচ্ছে দেওভোগ আদর্শনগর,মাসদাইর বাড়ৈ ভোগ গাইবান্ধা বাজার,নুর মসজিদ,বিসিক ৫ তলার মোড়,শাসনগাও ভাংগা ক্লাবের সামনে। সেখানে বখাটেরা রাজনৈতিক পরিচয়ে এরুপ অপকর্মগুলো বেড়াচ্ছে।
তাদের দাবী, থানা পুলিশের সদস্যরা যদি নিয়মিতভাবে ডিউটি পালন করেন এবং প্রতিমাসে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ভুক্তভোগী মানুষগুলো তাদের সমস্যার কথা উপস্থাপন করলে থানা পুলিশ যদি সেই বিষয় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে তাহলে পুর্বের ন্যায় আগামীতে অত্র থানাধীন এলাকা অনেকটা অপরাধ কমে আসবে।